Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
West Bengal Lockdown

বিধি মানার মাঝে ফাঁক মাস্ক পরায়

স্বাস্থ্যবিধি মেনে মন্দির, মসজিদ-সহ সব ধর্মস্থান খোলার কথা বলা হলেও এ দিন অনেক পুণ্যার্থীর মুখেই দেখা যায়নি মাস্ক।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২০ ০৬:২০
Share: Save:

ঘোষণা হয়েছিল আগেই। সেই ঘোষণা মতোই জেলায় নানা ধর্মস্থান খুলে গেল সোমবার। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মন্দির, মসজিদ-সহ সব ধর্মস্থান খোলার কথা বলা হলেও এ দিন অনেক পুণ্যার্থীর মুখেই দেখা যায়নি মাস্ক। ধর্মস্থানের আশপাশের ব্যবসায়ীরা অবশ্য লোকজনের আনাগোনায় খুশি। তারাপীঠ ও বক্রেশ্বরের মন্দির অবশ্য এখনও খোলেনি।

ফুল্লরা

বিধি মেনে পুণ্যার্থীদের জন্য এ দিন খুলে দেওয়া হয় লাভপুরের ফুল্লরা। মন্দির চত্বরে ফলফুল, মিষ্টি ও খাবারের দোকান করে পেট চলে অনেকের। লকডাউনের জেরে পুণ্যার্থীদের জন্য দরজা বন্ধ হয়ে যায় মন্দিরে। জীবিকা হারিয়ে বিপণ্ণ হয়ে পড়েন ওইসব দোকানদারেরা। এ দিন মন্দিরের দরজা খোলায় হাসি ফুটেছে তাঁদের মুখে। এ দিন লাভপুরে পুজো দিতে আসেন কীর্ণাহারের রুদ্রাণী চট্টোপাধ্যায়, লাভপুরের সোমাশ্রী মুখোপাধ্যায়রা। তাঁরা বলেন, ‘‘অনেক দিন ধরে পুজোর মানত ছিল আমাদের। কিন্তু মন্দির বন্ধ থাকায় তা পূরণ করতে পারিনি। তাই মন্দির খোলার খবর পেয়েই চলে এসেছি।’’ লাভপুরের মিষ্টি ব্যবসায়ী গণেশ রুজ বলেন, ‘‘মন্দির এলাকায় আমাদের দোকান। এতদিন রোজগার বন্ধ থাকার পর আজ খুলতে ভাল লাগছে।’’ ফুল্লরা মন্দিরের সেবায়েত নৃপেন উকিল জানান, বিধি মেনে পুজো শুরু হয়েছে।

কঙ্কালীতলা

এ দিন কঙ্কালীতলা মন্দিরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরত্ব বজায় রেখে দু’জনের বেশি ভক্তকে মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। মন্দির ঢোকার মূল রাস্তার পাশে থাকা যে সমস্ত পুজোর ফুলমালার দোকানগুলি রয়েছে তাদের মধ্যে বেশ কয়েকটি দোকান এ দিন খুলতে দেখা যায়। কঙ্কালীতলা মন্দিরের পুরোহিত বৈদ্যনাথ চক্রবর্তী জানান, সমস্ত রকম নিয়মকানুন মেনেই এ দিন মন্দির খোলা হয়। কঙ্কালীমাতা উন্নয়ন ট্রাস্টের সম্পাদক নারায়ণ চৌধুরী বলেন, ‘‘মন্দির পুরোপুরি স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে আমরা পুনরায় রথযাত্রার দিন থেকে মাকে বিভিন্ন পদ দিয়ে ভোগ নিবেদন করবো বলে স্থির করেছি।’’ পুজো দিতে আসা বোলপুরের বাসিন্দা সুপর্ণা প্রামানিক, রাজেশ সিংহরা বলেন, ‘‘অনেকদিন পর দেবী দর্শন ও পুজো দিতে পেরে ভাল লাগছে। ঠাকুরের কাছে আমাদের এটাই প্রার্থনা যেন বিশ্বকে করোনার গ্রাস থেকে মুক্ত করেন।’’

নন্দিকেশ্বরী

সাঁইথিয়ার নন্দিকেশ্বরী মন্দিরের দরজাও খুলে যায় এ দিন। সাঁইথিয়ার মন্দিরে স্ত্রী কাকলিকে নিয়ে পুজো দিতে আসেন স্থানীয় পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা প্রশাসক বিপ্লব দত্ত। তাঁরা বলেন, ‘‘মায়ের কাছে করোনাভাইরাসের কবল থেকে সবাইকে রক্ষা করার উদ্দেশ্যে পুজো দিলাম।’’ পুজো দেওয়ার সময় অবশ্য তাঁদের কারও মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি। তা নিয়ে বিপ্লববাবু বলেন, ‘‘আমাদের দু’জনের কাছেই মাস্ক ছিল। কেবল পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার সময় তা খুলেছিলাম।’’ সাঁইথিয়াতেই পুজো দিয়েছেন বৈশাখী বৈদ্য, রত্না ভট্টাচার্যরা। তাঁরা জানান, আমরা প্রতি সপ্তাহে মায়ের কাছে পুজো দিতে আসি। কিন্তু লকডাউনের জন্য এতদিন আসতে পারিনি। মন্দিরে পুজো চালু হওয়ায় হাসি ফুটেছে সাঁইথিয়ার ফলব্যবসায়ী বাবন দাসের। তিনি বলেন, ‘‘তাই লকডাউনে ফল এবং মিষ্টির দোকানে কিছুটা ছাড় থাকলও পুণ্যার্থীর অভাবে আমাদের হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হয়েছে।’’ নন্দিকেশ্বরী মন্দিরের সেবাইত কমিটির সভাপতি উজ্বল ভট্টাচার্য জানান, এতদিন শুধুমাত্র একজন পুরোহিত নিত্যপুজো করেছেন। এ দিন থেকে নিয়ম মেনে পুণ্যার্থীদের পুজোর জন্য মন্দিরের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছে।

নলাটেশ্বরী

নলহাটির নলাটেশ্বরী মন্দিরে আসা পুণ্যার্থীদের মুখে এ দিন মাস্ক থাকলে ও হাত স্যানিটাই‌জ় করার পরেই মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হয়েছে। রবিবার সমস্ত মন্দির প্রাঙ্গণ স্যানিটাইজ করা হয়। সরকারি নিয়ম মেনে এ দিন দশ জন ভক্তকে পুজোর জন্য মন্দিরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। মন্দির খুলে দেওয়ায় প্রসাদ ও ফুল বিক্রেতাদের মুখে হাসি এক ফুল বিক্রেতা বলেন, ‘‘লকডাউনের ফলে দুই মাসের বেশি সময় ধরে ঘরে বসে ছিলাম। সংসার চালাতে খুব কষ্ট হয়েছে। রেশনের চাল, আটা খেয়ে কোনও রকমে বেঁচে আছি। এ দিন মন্দির খোলায় আবার ফুল বিক্রি করেছি। দীর্ঘদিন পরে দু’টো টাকার মুখ দেখলাম।’’ মন্দির কমিটির সম্পদক শুভব্রত সিংহ বলেন, ‘‘সরকারি নিয়ম মেনে মন্দির কমিটি ভক্তদের উপরে বিধি নিষেধ মেনে চলবে। মন্দির খুলে যাওয়ায় পর্যটন শিল্প আবারও আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়াবে।’’

খুলেছে মসজিদও

এ দিন পাথরচাপড়ি মাজার-সহ সিউড়ি, বোলপুর, রামপুরহাটে, সরকারি নির্দেশ মেনে এ দিন মসজিদ গুলিও খুলতে দেখা যায়। দূরত্ব বিধি মেনে এ দিন সিউড়ি, বোলপুর ও রামপুরহাটের মসজিদগুলিতে নমাজ পাঠে যোগ দেন অনেকে। সিউড়ি মসজিদ কমিটির সদস্য কাজি ফরজুদ্দিন বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ ইমাম এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যাতে মসজিদ গুলিতে বেশি সংখ্যক লোক জমায়েত না হয় সেই বিষয়টি নজর রাখতে। পাশাপশি জমায়েত এড়াতে মসজিদের মেন গেটগুলিও বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই মতো এ দিন বিধি নিষেধ মেনে মসজিদগুলি খোলা হয় এবং অল্প সংখ্যক লোক নিয়ে নমাজ পাঠ হয়।’’ বোলপুর টাউন মসজিদ কমিটির সভাপতি আঙ্গুর খান জানান, প্রত্যেকটি মসজিদেই তিন ফুট দূরত্বে রেখে ১০ জনকে নিয়ে নমাজের ব্যবস্থা করা হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Lockdown Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE