দহন: আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। এ ভাবেই পুড়েছে বেলিয়াতোড় রেঞ্জের মার্খা এলাকার জঙ্গলের কিছু জায়গা। নিজস্ব চিত্র
বনবান্ধব অনুষ্ঠানে বেলিয়াতোড় রেঞ্জ অফিসে এক দিকে যখন বনসুরক্ষা কমিটিগুলির হাতে মোটা অঙ্কের টাকার চেক তুলে দিচ্ছেন বনকর্তারা, তখনই কয়েক কিলোমিটার দূরে দুষ্কৃতীদের লাগানো আগুনে দাউ দাউ করে জ্বলছে জঙ্গল! খবর পেয়ে পুলিশ নিয়ে বনর্কতারা যতক্ষণে ঘটনাস্থলে পৌঁছন, তত ক্ষণে বহু গাছ পুড়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
শনিবার বেলিয়াতোড়ের মার্খা গ্রামের ওই ঘটনা সামনে এনে দিল জঙ্গলে দুষ্কৃতীদের আগুন লাগানোর ঘটনা বন্ধ হয়নি। বন দফতর বার বার এলাকায় সতর্ক করার পরেও কেন, দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা যাচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
বাঁকুড়া জেলার জঙ্গল লাগোয়া বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, শুধু এলাকাই নয়, সম্প্রতি জঙ্গলে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে সিমলাপাল, সারেঙ্গা, খাতড়া রেঞ্জের বিভিন্ন জঙ্গলে। বস্তুত, গত কয়েক বছর ধরেই বাঁকুড়া জেলায় জঙ্গলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা যেন বেড়ে গিয়েছে। বন দফতরের দাবি, প্রাকৃতিক ভাবে আগুন লাগছে না। দুষ্কৃতীরা পরিকল্পনা করেই জঙ্গলে আগুন ধরাচ্ছে।
কেন? বন দফতরের কর্মীরা জানাচ্ছেন, মূলত জ্বালানি কাঠের লোভেই এই কাজ করা হয়। জঙ্গলের গাছ কেটে নিয়ে গেলে বন দফতরের কর্মীরা আটকান। কিন্তু আগুনে পুড়ে নষ্ট হওয়া গাছ কেটে নিয়ে গেলে সেক্ষেত্রে তেমন বাধা দেওয়া হয় না। আবার চোরা শিকারিরা জঙ্গলে আগুন লাগিয়ে দিয়ে ভয়ে ছুটে পালানো জীবজন্তুদেরও ধরপাকড় করে।
অথচ, জঙ্গলে আগুন লাগালে জেল ও জরিমানার মতো শাস্তির নিদান রয়েছে। তা জানিয়ে এলাকায় প্রচারও চালাচ্ছেন বন দফতর ও নানা সংগঠনের কর্মীরা। কিন্তু, রাশ টানা যাচ্ছে না।
কোথায় খামতি?
এক রেঞ্জ অফিসার এ জন্য নিজের দফতরের পরিকাঠামোকেই দায়ী করছেন। তিনি বলেন, “জেলায় পর্যাপ্ত ফরেস্ট গার্ড নেই। বনসুরক্ষা কমিটিগুলিকে জঙ্গলে আগুন লাগানো বন্ধ করতে বার বার সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু, অনেকের কাছেই সে ভাবে সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে না।”
বাঁকুড়া উত্তর বনবিভাগ সূত্রে জানা যাচ্ছে, জঙ্গলরক্ষার মূল দায়িত্ব যাঁদের উপরে, সেই ফরেস্ট গার্ডের সংখ্যা খুবই কম। কেবল উত্তর বনবিভাগেই ৪০ শতাংশ ফরেস্ট গার্ডের পদ শূন্য রয়েছে। বন দফতরের এক আধিকারিক বলেন, “সীমিত সংখ্যক ফরেস্ট গার্ড নিয়ে জঙ্গলের সর্বত্র নজরদারি চালানো খুবই সমস্যার। সেক্ষেত্রে বনসুরক্ষা কমিটিগুলির উপরেই আমাদের অনেকটা নির্ভর করতে হচ্ছে।”
এ দিকে, জঙ্গলে আগুনে যেমন নানা রকমের গাছ পুড়ে যাচ্ছে, তেমনই ওষধিও নষ্ট হচ্ছে। সেই সঙ্গে জঙ্গলে আশ্রয় নেওয়া জীবজন্তুরও প্রাণহানি ঘটছে। সদ্য শেষ হওয়া বনবান্ধব অনুষ্ঠানেই জেলার বিভিন্ন বনসুরক্ষা কমিটিগুলির হাতে প্রায় ১৩ কোটি টাকার চেক তুলে দিয়েছে বন দফতর। জঙ্গলের গাছ রক্ষা করার জন্য গাছের কাঠ বিক্রির ৪০ শতাংশই বনসুরক্ষা কমিটিগুলিকে দেওয়া হয়।
সেক্ষেত্রে গাছ রক্ষা করতে পারলে আখেরে আয় বাড়বে বনসুরক্ষা কমিটির সদস্যদেরই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্থানীয় গ্রামবাসীদের দিয়েই জঙ্গল রক্ষার জন্য বনসুরক্ষা কমিটি গড়া হয়। তা সত্ত্বেও জঙ্গলে অগ্নিকাণ্ড বন্ধ করতে কিছু বন সুরক্ষা কমিটি কেন তৎপর হচ্ছে না? জেলার এক বন সুরক্ষা কমিটির কয়েকজন সদস্য দাবি করেন, “জঙ্গলে আগুন লাগানোর ঘটনা আমরা মোটেই সমর্থন করি না। কিন্তু, দুষ্কৃতীরা আমাদের চোখের আড়ালেই আগুন লাগাচ্ছে।’’
ডিএফও (দক্ষিণ) মহিমাপ্রসাদ প্রধান বলেন, “জঙ্গলে আগুন লাগানো বন্ধ করতে বনসুরক্ষা কমিটির সদস্যদের সক্রিয়তা খুবই জরুরি। সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষের মধ্যেও সচেতনতার প্রয়োজন। সে জন্য প্রচারও চালানো হচ্ছে। সবাই মিলে এগিয়ে এলেই দুষ্কৃতীদের রুখে দেওয়া যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy