আব্বা আর নেই!
কাকভোরে কথাটা শুনেই, পড়তে পড়তে বিছানায়, লুটিয়ে পড়েছিল মেয়েটি। কেঁদেছিল নাগাড়ে!
সকাল হতে হতেই গাঁ-ঘরে খবর ছড়িয়ে পড়ে। বেলা বাড়ার সঙ্গে বাড়িতে বাড়তে থাকে কান্নার রোলও। পড়শিদের নানা কথার মাঝে মেয়েটির কেবলই মনে পড়ছিল, আব্বার ইচ্ছের কথা। আর তখনই সে ঠিক করে ফেলে, আব্বাকে হারানোর শোক নিয়েই পরীক্ষায় বসবে।
শনিবার তাই বাবার মৃত্যু শোক সঙ্গে নিয়েই মাধ্যমিকে ইতিহাস পরীক্ষা দিল মাড়গ্রাম থানার দুনিগ্রাম এ কে স্কুলের ছাত্রী পারুল খাতুন। গাঁ-ঘরে অবশ্য নানা কথা ভাসছে। কিন্তু সব কথার-কাঁটা সরিয়ে আব্বার ইচ্ছেপূরণই এখন পারুলের একমাত্র লক্ষ্য। একমাত্র স্বপ্ন।
দুনিগ্রামের ঝিকটাপাড়ার বাসিন্দা, পেশায় দিনমজুর কলম সেখ অসুখ জনিত কারণে শুক্রবার ভোরে নিজের বাড়িতে মারা যান। মৃতদেহকে ঘিরে কলম সেখের সাত ছেলেমেয়েদের মধ্যে কান্নার রোল ওঠে। সকালে একে একে এসে পড়েন পড়শি- পাশের গ্রাম থেকে আত্মীয়রা।
প্রথমটায় ভেঙে পড়লেও, পারুল ততক্ষণে নিজেকে বুঝিয়ে নিয়েছে। তার এও মনে পড়ে যায়, নিজের হত দরিদ্র পরিবারে তারই এক ভাই পড়তে পারেনি স্রেফ অর্থের কারণেই। গ্রামের বাসিন্দা কাজী আসরাফ সেখ বলেন, “অত্যন্ত দুঃস্থ পরিবার ওঁদের। পারূলের বাড়িতে এক ভাই পারিবারিক অবস্থার জন্য মাধ্যমিকের আগে পড়াশুনা করতে পারেনি। অনদের মধ্যে পারুল একমাত্র মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে। বাকী ছেলেমেয়েরা এখনও ছোট। পারুলের বাবা দিনমজুরি করে মেয়েকে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশুনা চালিয়ে গিয়েছেন। কলম চেয়েছিল, পারুল পড়ুক। আমরাও সেটা চাই।”
বাবার দেহ বাড়িতে দেখেই পারুল নির্দিষ্ট সময়ে স্কুলের মাধ্যমিকের সেন্টার রামপুরহাট হাই স্কুলে পরীক্ষা দিতে বেরিয়ে পড়ে। দুনিগ্রামের এ কে হাই স্কুলের টিচার ইনচার্জ প্রকাশ পটুয়া বলেন, “স্কুলে মাধ্যমিকের সেন্টার থাকার জন্য প্রথমে খবরটা পাইনি। পরে যখন জানলাম বাবার মৃত্যু দেখে আমার স্কুলের একজন ছাত্রী অন্যান্য পরীক্ষাত্রীদের সঙ্গে পরীক্ষা দিতে গিয়েছে, চমকেই গিয়েছি। অসম্ভব মনের জোর না থাকলে, এমনটা করা যায় না।” তাঁর কথায়, “পারুল পড়াশুনায় খারাপ নয়। এই ধরণের মানসিকতা নিয়ে যে পরীক্ষায় বসতে পারে, সে জীবনে সাফল্য পাবেই।”
তৃণমূল প্রভাবিত পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির মহকুমা শাখার সভাপতি সন্দীপ মণ্ডল বলেন, “এই ধরণের মানসিকতা কে কুর্নিশ জানিয়ে ছোট করা হবে। ওঁর জীবনের সাফল্য আন্তরিক ভাবে কামনা করি।”
কী বলছেন পারুল?
“আব্বা চেয়েছিল আমি পড়াশুনা করে যেন বড় হতে পারি। আব্বা চলে গেলেও আমি তাঁর ইচ্ছেপূরণের জন্য পরীক্ষা দিয়েছি। আব্বাকে কথা দিয়েছিলাম, কথা রাখতেই হবে!”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy