নলহাটি-মুরারই রাস্তার উপর স্কুল মোড়ে অবরোধ।—নিজস্ব চিত্র।
স্কুলের জন্মলগ্ন থেকেই তাদের খেলার হিসেবে দেখে এসেছে পড়ুয়ারা। অথচ কিছু দালাল চক্র সেই মাঠ তাদের বলে বিক্রি করে দিচ্ছে। এমনই অভিযোগে সোমবার পথ অবরোধ করল নলহাটি বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠের পড়ুারা। তাদের সঙ্গে অবশ্যই পরিচালন কমিটির অভিভাবক প্রতিনিধি, স্থানীয় বাসিন্দা, প্রাক্তনীরা ছিলেন। দালালদের হাত থেকে মুক্ত করে মাঠকে স্কুলের নামে করে দিতে সংশ্লিষ্ট বিডিও এবং বিএলঅ্যান্ডএলআরও-এর কাছে দাবি জানান তাঁরা। দাবির সমর্থনে নলহাটি-মুরারই রাস্তার উপর স্কুল মোড়ে অবরোধের খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছয়। দীর্ঘক্ষণ স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করার পর শেষমেশ নলহাটি ১ ব্লকের বিডিও’র কাছ থেকে আজ মঙ্গলবার তাঁর অফিসে এই নিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষর সঙ্গে আলোচনায় বসার লিখিত আশ্বাস পাওয়ার পর অবরোধ উঠে যায়। প্রায় ঘণ্টা তিনেক ধরে অবরোধ চলেছিল।
স্কুলের পরিচালন কমিটির সম্পাদক সদানন্দ কর্মকার বলেন, “নলহাটি বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠ ১৯৬৩ সালের স্কুল। বাবা-ঠাকুরদার আমল থেকে জেনে এসেছি স্কুলের জন্মলগ্ন থেকে স্কুলের সামনে ৩৯৫৬ দাগে ৮৪ শতক জায়গা স্কুলেরই খেলার মাঠ হিসেবে আছে। স্কুলে পড়ার সময় আমরাও এই মাঠে খেলাধুলো করেছি। সম্প্রতি ব্লকের উদ্যোগে যে মাটি-কৃষি মেলা হয়ে গেল তাতে ব্লক প্রশাসন থেকে দেওয়া আমন্ত্রণপত্রেও বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠ স্কুলের খেলার মাঠ উল্লেখ আছে। তা সত্ত্বেও এক শ্রেণির দালাল স্কুলের খেলার মাঠ দখল করতে চাইছে। এরই প্রতিবাদে এ দিনের পথ অবরোধ কর্মসূচি।”
স্কুলের পরিচালন কমিটির সভাপতি রহমত খাঁ, সহকারী সভাপতি রেজাউল করিমদের অভিযোগ, “গত বুধবার খেলার মাঠে বসার জায়গা করার জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিচ্ছিলেন। এমন সময় এলাকার কিছু জমির দালাল এসে দাবি করেন, ওই জায়গায় কোনও নির্মাণ করা যাবে না এবং স্কুলের খেলার মাঠের জায়গা তাঁরা কিনে নিয়েছেন বলে দাবি করেন। এমনকী মাঠে তখন ব্লক প্রশাসন থেকে মাটি কৃষি মেলা চলাকালীন রামপুরহাট আদালতে ওঁদের দায়ের করা ১৪৪ ধারার মামলার নোটিস গত শুক্রবার স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং স্কুলের প্রধান শিক্ষক-সহ আরও কয়েকজনের কাছে পৌঁছে যায়।” রহমত খাঁ জানান, স্কুলে ঢোকার আগে স্কুলের নাম লেখা তোরণদ্বার ছ’বছর আগে উদ্বোধন হয়। সেই সময় বিডিও এবং বিএলঅ্যান্ডএলআরও দফতর স্কুলের খেলার মাঠের জায়গা স্কুলে নামে করে দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু প্রশাসনিক গাফিলতিতে সেই কাজ আজও হয়নি। তাঁর অভিযোগ, “জমির দালাল সেই সুযোগ নিয়ে জমির প্রকৃত মালিক না হয়ে জমি বিক্রি করে দিতে চাইছে।”
এ দিকে, বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক লোকনাথ মণ্ডল বলেন, “স্কুলের রেকর্ডে খেলার মাঠের জায়গা হিসেবে কোনও কাগজপত্র উল্লেখ না থাকলেও দীর্ঘদিন ধরে ওই জায়গা স্কুলের খেলার মাঠ বলেই জানি। স্কুলের ছেলেমেয়েরা ওই জায়গায় খেলাধুলো করে। স্কুলের খেলার মাঠ থেকে দালালদের মুক্ত করতে তাই প্রাক্তনী, অভিভাবক, স্থানীয় বাসিন্দারা সকলে মিলে এই আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।” নলহাটি ১-এর বিডিও তাপস বিশ্বাস বলেন, “বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠ সংলগ্ন মাঠ নিয়ে গত বুধবার একটা অশান্তির সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে এলাকায় গিয়ে স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং উপস্থিত এলাকাবাসীর সামনে বলা হয়েছিল সোমবার ও মঙ্গলবারের মধ্যে উভয়পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসা হবে। সেই আশ্বাস দেওয়ার পরও এ দিন অবরোধ করেন তাঁরা। আজ মঙ্গলবার আলোচনায় বসা হবে।”
এ দিন সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নলহাটি-মুরারই রাস্তার উপর বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠ স্কুলের মোড়ের কাছে পড়ুয়ারা বেঞ্চ লাগিয়ে, রাস্তায় তারপুলিন পাতিয়ে অবরোধে সামিল হয়েছে। তাদের হাতে খেলার মাঠের জায়গা দালাল মুক্ত করার দাবিতে বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড। পড়ুয়াদের সঙ্গে সামিল স্থানীয় বাসিন্দারাও। পড়ুয়াদের কথায়, “খেলার মাঠ স্কুলের সম্পদ। সেখানে কোনও মতে দালাল রাজ মেনে নেওয়া যায় না।” খেলার মাঠ কাগজে-কলমে স্কুলের নামে করে দেওয়ার দাবি যতদিন না পূরণ হচ্ছে ততদিন আন্দোলন তাঁরা চালিয়ে যাবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy