Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

দক্ষিণের কড়চা

ভদ্রমহিলার চোখ প্রায় ছলোছলো। বুকে সবুজ কার্ড আটকানো এক কর্মীর কাছে প্রবল অভিযোগ জানাচ্ছেন তিনি, ‘শখ করে চুলে একটু পলাশফুল লাগিয়েছিলাম, আপনাদেরই কর্মী বললেন খুলে ফেলতে, পলাশ তোলা নিষিদ্ধ এখানে। কিন্তু ওই দেখুন, ওই উনি তো দিব্যি পরেছেন।’

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৫ ২৩:৫৩
Share: Save:

চৈত্রের আঙিনায়

ভদ্রমহিলার চোখ প্রায় ছলোছলো। বুকে সবুজ কার্ড আটকানো এক কর্মীর কাছে প্রবল অভিযোগ জানাচ্ছেন তিনি, ‘শখ করে চুলে একটু পলাশফুল লাগিয়েছিলাম, আপনাদেরই কর্মী বললেন খুলে ফেলতে, পলাশ তোলা নিষিদ্ধ এখানে। কিন্তু ওই দেখুন, ওই উনি তো দিব্যি পরেছেন।’ কর্মী বেচারা আর কী করেন, বললেন, ‘এত মানুষের মধ্যে সকলের পলাশ ফুল কী করে ধরা সম্ভব বলুন! পরিবেশের কথাটা ভাবুন এক বার।’ দৃশ্যটা শান্তিনিকেতনে এ বারের বসন্তোসবের। গোটা চত্বর জুড়ে পোস্টারে লেখা পলাশ তুলবেন না, পলাশ হারিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতির সঙ্গে মিশে থেকে রঙের উৎসব বোধ হয় একেই বলে। রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে বসন্ত উৎসব পালনের সূচনা করেছিলেন ১৯২৫-এ। ‘ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল, লাগল যে দোল’ গানের সঙ্গে নাচ দিয়ে আজও শুরু হয় সেই বসন্তোসব। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘এ-বৎসর দোলপূর্ণিমা ফালগুন পার হয়ে চৈত্র-এ পৌঁছল। আমের মুকুল নিঃশেষিত, আমবাগানে মৌমাছির ভিড় নেই, পলাশ ফোটার পালা ফুরলো, গাছের তলায় শুকনো শিমুল তার শেষ মধু পিঁপড়েদের বিলিয়ে বিদায় নিয়েছে। কাঞ্চনশাখা প্রায় দেউলে, ঐশ্বর্যের অল্প কিছু বাকি। কেবল শালের বীথিকা ভরে উঠেছে মঞ্জরীতে।’ তখনও সকালে ও সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান হত। প্রথম দিকে রবীন্দ্রনাথ সকালের অনুষ্ঠানে থাকতেন না, বিকেলের অনুষ্ঠানে যোগ দিতেন। সকালে দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুরের নেতৃত্বে আম্রকুঞ্জে সঙ্গীতের আসর বসত। গুরুদেবের বসন্ত ঋতুর গানগুলো একটার পর একটা গাওয়া হত। সুরের আর রঙের সেই উৎসব আজও চলেছে ঐতিহ্য বজায় রেখে। আজও তাকে ঘিরে অভিমান আর উৎসাহ।

সম্মানিত সমরেশ

ঢাকা শহরের দুই সাংবাদিক এক ভারতীয় সাহিত্যিকের সাক্ষাৎকারের প্রার্থী। একজন তাঁর নাম বললেন মাধবীলতা রহমান। দ্বিতীয়জনের নাম শোনার পর তাঁর আই কার্ড দেখতে চাইলেন ওই সাহিত্যিক। দেখলেন সত্যিই সেই সাংবাদিকের নাম লেখা, ‘অনিমেষ’। এ-ও কি সম্ভব? এই নামদুটি তো তাঁর উপন্যাসের দুই চরিত্র। সমরেশ মজুমদারের ‘কালবেলা’ আর ‘উত্তরাধিকার’ এতটাই ভাল লেগেছিল, যে বাংলাদেশের ওই সাংবাদিকযুগল নাম ‘এফিডেভিট’ করে বদলে প্রিয় লেখকের চরিত্রের নামে রেখেছিলেন। শুনে সেদিন আবেগ ধরে রাখতে পারেন নি সমরেশবাবু। এমন অনেক অভিজ্ঞতা তাঁর ঝুলিতে। একবার নিউ ইয়র্ক সিটিতে প্রবল শীতের রাতে এক পেট্রোল পাম্পের কর্মী অস্পষ্ট আলোয় ভেতরে-বসা যাত্রীকে দেখে কাছে চলে এসেছিলেন। “আপনি সমরেশ মজুমদার না?” ব্যাগ থেকে ‘গর্ভধারিণী’ উপন্যাসটি বের করে দেখিয়েছিলেন ওই কর্মী। দেশ-বিদেশে পাঠকদের থেকে এমন অনেক সমাদর পেয়েছেন সমরেশ মজুমদার। এ বার উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ‘ডি লিট’সম্মান দিল তাঁকে। সম্প্রতি ডুয়ার্সের চা বাগানে বেড়াতে এসে লেখক জানালেন, আগামী এক বছর তিনি উপন্যাস লিখবেন না বলে ঠিক করেছেন। এই লম্বা ছুটির দিনগুলির বেশ কিছুটা অংশ তিনি নিজের মতো করে চা বাগানে কাটাবেন। স্বর্গ-ছেঁড়া চা বাগানের সেই শৈশবকালের ‘অনি’ হয়ে।

তারাপদ

‘আমি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট এক মানুষের মতো উঠে দাঁড়ালাম। এই মলিন পোশাক, বই পুস্তক ঠাসা পেটমোটা কাপড়ের ব্যাগ, হাতে আদ্যিকালের এক পুরোনো লম্বা ছাতা, ঘর্মাক্ত মানুষটি তারাপদ সাঁতরা।’ প্রথম পরিচয়ের পরে তাঁর এই অভিজ্ঞতা জানাচ্ছেন রাজ্য সরকারের স্বশাসিত সংস্থা লোকসংস্কৃতি ও আদিবাসী সংস্কৃতি কেন্দ্রের তৎকালীন আধিকারিক প্রদীপ ঘোষ। তারাপদবাবু সম্পর্কে এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে আরও বহু মানুষের। লোকসংস্কৃতির প্রবাদপ্রতিম গবেষক এত সাধারণ ভাবে হাজির হতেন, যে বিশ্বাসই হত না, এই ব্যক্তিই তারাপদবাবু। কিন্তু একবার সম্পর্ক তৈরি হলে তা গভীর হতে দেরি হত না। সেই তারাপদবাবুকে নিয়ে ক্রোড়পত্র করেছে তারাপদ সাঁতরা প্রত্নশালা, গ্রন্থাগার ও লিটল ম্যাগাজিন আর্কাইভ-এর মুখপত্র পুরালোক বার্তা। সেই সঙ্গে লুপ্ত ও লুপ্তপ্রায় লোকশিল্প নিয়েও একটি ক্রোড়পত্র রয়েছে। রয়েছে প্রয়াত পুরাতত্ত্ববিদ অমল রায়ের স্মৃতিচারণ। সত্যশ্রী উকিল লিখেছেন তাঁর ছেলেবেলার শান্তিনিকেতনের স্মৃতিকথা। ডেভিড ম্যাককাচ্চনকে নিয়ে লিখেছেন দেবাশিস মুখোপাধ্যায়। রয়েছে লৌকিক শিল্প নিয়ে বেশ কয়েকটি গবেষণামূলক প্রবন্ধ। সযত্নে মূদ্রিত এই সংখ্যায় নৃতত্ত্ব নিয়েও কিছু জরুরি আলোচনা রয়েছে। সম্পাদক সোমনাথ রায়।

গান পুলিশ

চেয়েছিলেন গায়ক হতে। হয়ে গেলেন পুলিশ। তবে গান থেমে থাকেনি। পুলিশপনার যাবতীয় ধকল সামলেও নিয়ম করে তিনি গলা সাধেন। চারটি গানের অ্যালবামও বেরিয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যে। পুজোর পরে প্রকাশিত হয়েছে ‘খুঁজি তোমায়’ নামে একটি ভিডিও অ্যালবাম। নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জ থানার ওসি সমিত ভট্টাচার্য তাই অনায়াসেই বলতে পারেন, “গানে গানে খুঁজে যাই জীবনের মানে।” টানা দশ বছর খেয়াল শিখেছেন। ১৯৯৮-এ পুলিশের চাকরিতে ঢোকা থেকে ২০০৫ গানচর্চা খানিক থমকে ছিল। ২০০৬ সালে আলাপ হয় সুরকার মৃণাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তাঁরই সুরে প্রথম অ্যালবাম ‘ইচ্ছেডানা’। তার পর ‘বন্ধু ভাল থেকো’, ‘সেনোরিটা তুমি কোথায়’, ‘সারা বেলার গান’। ওই চার অ্যালবাম থেকে বাছাই করা গান নিয়েই পুজোয় ভিডিও অ্যালবাম করা হয়েছে।

রেখায়-সুরে

চিত্র ও সঙ্গীত। শিল্পের এই দুই শাখার সঙ্গে মধুমাস বসন্তের সখ্য চিরদিনের। বসন্তের শুরুতে তাই শিল্প-সাহিত্য ও সঙ্গীতের মধ্যে দিয়ে বাসন্তিক মিলনমেলা হল শান্তিনিকেতনে। উদ্যোক্তা প্রকাশনা সংস্থা কারিগর। ভাষা দিবসের দিন কোপাই নদী সংলগ্ন বাঁধলোডাঙা গ্রামে তার শুরু আর্ট ক্যাম্পের সঙ্গে ছিল রবীন্দ্রনাথের গান, লোকগান, আবৃত্তি ও পাঠ। কারিগরের কর্ণধার দেবাশিস সাউ বলেন, “চিত্রকর সনত্ কর, রবীন মণ্ডল, সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়, মনোজ দত্ত, তাপস কোনার, শেখর কর, সুব্রত চৌধুরীরা তিন দিন ধরে রেখার টানে যেন মধুমাসই উদ্যাপন করলেন।” কোপাই পাড়ের গ্রামে অনুষ্ঠানে ছিলেন ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায়, স্বপন বসু, ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়, কালিকাপ্রসাদ, উপল। রবীন্দ্রনাথের গান শোনালেন মোহন সিংহ খাঙ্গুরা।

নাট্যরূপী

এ যেন ফেলে আসা সময়ের কাছে নতজানু হওয়া। বহুরূপীর নাট্য প্রযোজনার ছবি দেখে কিছু দিন আগে কলেজ বেলার স্মৃতিতে ডুব দিয়েছিলেন অমর্ত্য সেন। সম্প্রতি শান্তিনিকেতনে তাঁর বাড়িতে গিয়ে ‘বহুরুপী ৬০’ শীর্ষক সংকলন তুলে দেন দলের দীর্ঘদিনের নাট্যকর্মী তাপস দাস। শম্ভু মিত্রের ইচ্ছেয় কুমার রায়ের উদ্যোগে মোনো মিত্র, দুলাল গুঁই, সমীর ঘোষাল, সত্যব্রত ঘোষ, নিমাই ঘোষ প্রমুখের তোলা সব ছবি ও তথ্য সাজিয়ে দেওয়া হয়েছে এই সংকলনে। সেই গোড়ার দিন থেকে প্রতিটি নাট্য প্রযোজনার ছবি, বিজ্ঞাপন, বুকলেটও রয়েছে। সম্পাদনা করেছেন স্বপন মজুমদার। তাপসবাবু জানান, সংকলনে দশচক্র বা রক্তকরবী প্রযোজনার ছবি দেখে অমর্ত্য বলে ওঠেন, “তখন আমি ছাত্র, এ সব নাটক দেখেছিলাম। এখন কী নাটক হচ্ছে, দেখতে ইচ্ছে করে।” বহুরূপী তাঁকে ‘রাজার খোঁজে’ নাটকটি দেখানোর কথা ভাবছে।

কালের অবকাশে

পঁচিশে পা দিল বীরভূমের সিউড়ি থেকে প্রকাশিত অবকাশ সাহিত্যপত্র। সাম্প্রতিক সংখ্যায় বঙ্কিম গবেষক অমিত্রসূদন ভট্টাচার্যের ‘ধর্ম: সন্ন্যাসে ও সংসারে’ প্রবন্ধে শ্রীচৈতন্য ও স্বামী প্রণবানন্দের সঙ্গে বঙ্কিমের ‘চন্দ্রশেখর’ উপন্যাসের কথাও এসেছে। প্রবন্ধের বিষয় তালিকায় রয়েছে বেদ এবং মঙ্গলকাব্যও। রামকৃষ্ণ মণ্ডল ও বাদল ঘোষ সম্পাদিত পত্রিকাটিতে অনুবাদ গল্প ও কবিতার ক্ষেত্রে ওড়িয়া ও মারাঠির মতো ভারতীয় সাহিত্য থেকেই বাংলায় তর্জমা করা হয়েছে। তবে তা ইংরেজি তর্জমা মারফত করা না কি সরাসরি মূল ভাষা থেকেই করা হয়েছে, তার উল্লেখ কোথাও নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

south bengal south karcha
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE