জম্মু-কাশ্মীরে কংগ্রেস ও ন্যাশনাল কনফারেন্স জোট ভাঙিয়া গেল। এই ভাঙন অক্টোবর-নভেম্বর নাগাদ অনুষ্ঠেয় বিধানসভা নির্বাচনের দিকে চাহিয়া। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল দেখাইয়া দিয়াছে, কাশ্মীর উপত্যকা হইতে মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার দল কার্যত নিশ্চিহ্ন। উপত্যকার তিনটি আসনের সব কয়টিই গিয়াছে মুফতি মহম্মদ সইদের পিডিপি দলের ঝুলিতে। অন্য দিকে জম্মু এবং লাদখেও কংগ্রেস বিপর্যস্ত। সেখানেও বিজেপির সাফল্য চমকপ্রদ। এই অবস্থায় রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণে যে নূতন সম্ভাবনা দেখা দিয়াছে, কংগ্রেস-কনফারেন্স ভাঙন তাহারই অনিবার্য প্রতিফলন। উভয় দলেরই ধারণা, জোট-শরিকের মলিন ভাবমূর্তির কারণেই লোকসভা নির্বাচনে তাহার বিপর্যয়। তাই সেই জোট যত দ্রুত ভাঙিয়া ফেলা যায়, ততই আখেরে লাভ।
তাহার অর্থ অবশ্য এই নয় যে, জম্মু-কাশ্মীরের রাজনীতি জোটবিহীন হইয়া পড়িবে। অতীতে কংগ্রেসের সহিত পিডিপি-র জোট এই রাজ্য শাসন করিয়াছে, আবার অটলবিহারী বাজপেয়ীর আমলে ন্যাশনাল কনফারেন্স বিজেপির শরিক থাকিয়াছে। রাজ্য-রাজনীতিতেও তাই কোনও দলই অন্য দলের কাছে অচ্ছুত হওয়ার কথা নয়। বস্তুত, ইতিমধ্যেই পিডিপি-র নেতা মুফতি মহম্মদ সইদ তাঁহার কন্যা মেহবুবা মুফতিকে সঙ্গে লইয়া কংগ্রেস নেতৃত্বের সহিত ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ সারিয়াছেন। ২০০২ হইতে ২০০৮ সাল অবধি পিডিপি-কংগ্রেসের সরকারই তো রাজ্যে ক্ষমতাসীন ছিল, যাহার একেবারে শেষ লগ্নে কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদও কিছু কাল মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসিয়াছিলেন। অবশ্য যদি ডুবন্ত তরণীতে সওয়ার হইতে না-চাওয়ার তাগিদ শক্তিশালী হয়, তবে পিডিপি-র পক্ষে বিজেপির হাত ধরাই বরং যুক্তিযুক্ত হইবে। লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি কেবল জম্মু অঞ্চলেই কংগ্রেসকে পর্যুদস্ত করে নাই, লাদখের একমাত্র সাংসদ আসনটিও দখল করিয়া নিজের বর্ধমান জনপ্রিয়তার প্রমাণ দিয়াছে। আবার ন্যাশনাল কনফারেন্সও যে বিজেপির সহিত জোটবদ্ধ হইতে চাহিবে না, তাহারও নিশ্চয়তা নাই। সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ অর্থাৎ জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা বিলোপের প্রবক্তা বিজেপির সঙ্গে অতীতেও ন্যাশনাল কনফারেন্সের জোট গড়িতে অসুবিধা হয় নাই। হিন্দুত্বের শিবির হইতে ওই সাংবিধানিক অনুচ্ছেদ রদ করার বিক্ষিপ্ত দাবি পুনরুচ্চারিত হইলেও কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর সরকার সেই দাবিকে কোনও গুরুত্ব দেয় নাই। রাজনীতি সম্ভাব্যতার শিল্প।
জম্মু ও কাশ্মীরের রাজনীতিতে পিডিপি ও ন্যাশনাল কনফারেন্স স্বাভাবিক প্রতিদ্বন্দ্বী। এই দুই আঞ্চলিক দলই শ্রীনগর উপত্যকায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। বস্তুত, উপত্যকায় ন্যাশনাল কনফারেন্সের জনপ্রিয়তা হ্রাসের ফলেই পিডিপি তিনটি লোকসভা আসনেই জয়ী। ফারুক আবদুল্লার মতো বরিষ্ঠ রাজনীতিকও পরাস্ত। তুলনায় জম্মুর ৩৭টি বা লাদখের ৪টি আসনে তাহাদের কোনও প্রভাব নাই, সেখানে আবার কংগ্রেস এবং বিজেপির গণভিত্তি প্রসারের প্রতিদ্বন্দ্বিতা। সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আপাতত বিজেপি কংগ্রেসকে বহু দূর পিছনে ফেলিয়া দিয়াছে। কেন্দ্রে একক গরিষ্ঠতায় ক্ষমতাসীন হওয়ার ফলে বিজেপি সুবিধাজনক অবস্থায়। তবে উপত্যকার ৪৬টি আসনে পিডিপি-র ভাল ফলের সম্ভাবনা অধিক হওয়ায় মুফতি মহম্মদ সইদকেও মুখ্যমন্ত্রী শিরোধার্য করিয়া জোট গড়িতে হয়তো তাহার আপত্তি হইবে না। মনে করিবার কারণ আছে যে, সব দলই তাই প্রাক্-নির্বাচনী জোট এড়াইয়া চলিবে এবং উপত্যকায় কনফারেন্স-পিডিপি ও অবশিষ্ট রাজ্যে বিজেপি-কংগ্রেস দ্বিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলিবে। ইহা এক ধরনের বিভাজন, তবে সেই বিভাজন গণতান্ত্রিক কাঠামোর ভিতরেই। কাশ্মীরে সেই কাঠামোটির স্বাস্থ্যরক্ষা প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy