মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান যে চেয়ারম্যান মাওয়ের মন্ত্রে দীক্ষা লইয়াছেন, তাহা জানা ছিল না। দেখা যাইতেছে, তিনি মনে করেন, বন্দুকের নলই মেয়েদের শক্তির উৎস। সম্প্রতি তাঁহার সরকার প্রস্তাব করিয়াছে— যে মেয়েরা ধর্ষিত, তাঁহারা আত্মরক্ষার্থে সরকারের নিকট বন্দুকের লাইসেন্সের জন্য আবেদন করিতে পারেন, যত দ্রুত সম্ভব সেই আবেদনে সাড়া দিয়া সরকার লাইসেন্স প্রদান করিবে। প্রকারান্তরে আইন বা প্রশাসনের উপর ভরসা না রাখিতে বলিয়া বন্দুকের উপর ভরসা করিতে বলিল সরকার। রাজ্যের এক মন্ত্রী বলিয়াছেন, বন্দুক থাকিলে মেয়েদের মনে ‘আত্মবিশ্বাস এবং নিরাপত্তাবোধ বাড়িবে’। অর্থাৎ, যাহাতে মহিলাটি ভবিষ্যতে সম্ভাব্য ধর্ষকদের ভয় দেখাইতে পারে, সেই জন্য বন্দুক রাখা প্রয়োজন, এমনটাই মনে করিতেছে মধ্যপ্রদেশ সরকার। আত্মরক্ষার প্রয়োজনে মেয়েদের আর কাহারও উপর নির্ভর করিতে হইবে না। অবশ্য সে জন্য অন্তত এক বার ধর্ষিতা হওয়া দরকার। তাহা আর এমন কী? স্বাধিকার দরজায় কড়া নাড়িতেছে— মূল্য হিসাবে একটি ধর্ষণ স্বীকার করাই যায়।
একটি রাজ্য সরকার সাধারণ নাগরিককে আত্মরক্ষার নিমিত্ত বন্দুক রাখিতে উৎসাহ দিতেছে, ইহার অধিক লজ্জা বোধহয় আর কিছুতেই নাই। যে প্রশাসনের দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা, তাহারা হয়তো ভাবিতেছে ধর্ষণ নিত্যকার একটি উটকো ঝামেলা বই কিছুই নহে, তাহাতে দৃক্পাত করিবার চাহিতে ধর্ষিতাদের হাতে বন্দুক ধরাইয়া দিলে অন্যান্য ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কাজে মনোনিবেশ করা যাইবে। অথবা হয়তো মনে করিতেছে, ইহা এমনই সাংঘাতিক যে, রাজ্য সরকার এই অন্যায় রুখিতে অপারগ, অতএব ধর্ষিতাদের হাতে বন্দুক তুলিয়া দিয়া তাঁহাদের আত্মরক্ষা করিতে বলিতেছে। ইহা কেবল লজ্জা নহে, বিস্ময়ও উদ্রেক করে। ভাবখানি যেন এইরূপ যে— বৃষ্টি বন্ধ করা যাইবে না বলিয়া যেমন ছাতা খুলিতে হবে, তেমনই ধর্ষণ বন্ধ করা যাইবে না বলিয়া বন্দুক ব্যবহার করিতে হইবে! এবং ইহাই যদি কোনও একটি রাজ্য সরকারের ধারা হইয়া থাকে, তাহা হইলে অচিরেই ধর্ষণ হইতে বাঁচিবার উপায় হিসাবে অন্য রাজ্যগুলিও হয়তো এই পন্থা অবলম্বন করিবে।
রসিকজনে বলিতে পারেন— মহাজনী পন্থা। মহাজনের নাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সংবিধানের দ্বিতীয় সংশোধনী-তে রহিয়াছে যে, কেহ আত্মরক্ষার্থে বন্দুক নিজের নিকট রাখিতে পারে, ইহা ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অধিকারের প্রশ্ন। এমন নিয়মের ফল যে কত ভয়ানক হইয়া উঠিতে পারে, তাহা তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দৈনন্দিন অভিজ্ঞতা বারংবার প্রমাণ করিয়া চলিয়াছে। কাণ্ডজ্ঞানও বলিয়া দেয় যে, হাতের বন্দুক কেবল নিরাপত্তার নিমিত্ত ব্যবহৃত হইবে, ভয়, উৎকণ্ঠা বা রাগের বশে আক্রমণের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হইবে না, এমন নিশ্চয়তা নাই। আর, বন্দুক হাতে পাইলে ধর্ষিতা যদি আইনের তোয়াক্কা না করিয়া ধর্ষকের উপর গুলি চালাইয়া বসেন, প্রশাসন বা আইন-আদালত তাহাকে অপরাধ বলিয়া না দেখিয়া আত্মরক্ষা বলিয়া দেখিবে কি? ডোনাল্ড ট্রাম্প কিংবা শিবরাজ সিংহ চৌহানদের অবশ্য এত সব লইয়া মাথা ঘামাইবার প্রয়োজন নাই, তাঁহারা আসলে দায় সারিতে চাহেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy