Advertisement
০৯ ডিসেম্বর ২০২৪

লজ্জা

কিন্তু শিক্ষামন্ত্রীর নিকট জবাব দাবি করিবে কে?

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৯ ০০:০২
Share: Save:

মাধ্যমিক পরীক্ষায় কোন জেলা হইতে প্রথম বা দ্বিতীয় হইল, তাহার আলোচনা অনর্থক। স্কুলশিক্ষা ব্যবস্থার সর্বভারতীয় মূল্যায়নে যে ফল করিয়াছে পশ্চিমবঙ্গ, কোনও দুর্ভাগা বালক-বালিকা তেমন করিলে তাহার বিস্তর লাঞ্ছনা জুটিত। কিন্তু শিক্ষামন্ত্রীর নিকট জবাব দাবি করিবে কে? শিক্ষা সচিবের বার্ষিক মূল্যায়ন রিপোর্টে লাল কালির দাগ বসাইবার, স্কুলের শিক্ষকদের কারণ দর্শাইয়া নোটিস জারি করিবার সাধ্যই বা কাহার আছে? উত্তর পাইবার আশা নাই, অথচ মূক প্রশ্নগুলি মুখপানে চাহিয়া আছে। কী করিয়া মাতৃভাষা, অঙ্ক এবং বিজ্ঞানের মূল্যায়নে বিহার, ওড়িশা, অসম, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশের ছাত্রছাত্রীদের বহু পশ্চাতে পড়িল পশ্চিমবঙ্গের পড়ুয়ারা? সম্প্রতি বিদ্যাসাগরের ভগ্নমূর্তি দেখিয়া নেতানেত্রীরা সন্তাপে দগ্ধ হইলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমা প্রার্থনাও করিলেন। অথচ শিক্ষায় অগ্রণী হইবার গৌরব যে চুরমার হইয়াছে, অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বাংলার শিশুরা পিছাইয়া পড়িয়াছে, তাহা কি আরও বৃহৎ সঙ্কট নহে? কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের রিপোর্ট দেখাইতেছে, যে পাঁচটি সূচকে স্কুলশিক্ষা ব্যবস্থার পরিমাপ হইয়াছে, তাহার প্রায় সব কয়টিতে পশ্চাতে পড়িয়াছে পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যালয়। কেরল, তামিলনাড়ু তো বহু পূর্বেই বাংলাকে পশ্চাতে ফেলিয়াছে। এখন রাজস্থান, হিমাচলপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ়, হরিয়ানাকে স্পর্শ করিতেও বিস্তর কাঠখড় পুড়াইতে হইবে। ভারতে পশ্চিমবঙ্গের স্থান হইয়াছে বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ডের সহিত একাসনে। কিন্তু ইহাও সামগ্রিক চিত্র নহে। স্কুল পরিকাঠামোয় পশ্চিমবঙ্গের প্রাপ্ত নম্বর বিহার, উত্তরপ্রদেশের তুলনায় অনেক মন্দ। মাত্র এক নম্বর কম পাইয়া মেঘালয় ‘লাস্ট বয়’ হইয়া বাঁচাইয়াছে পশ্চিমবঙ্গকে।

এই লজ্জা প্রাপ্যই ছিল। এ রাজ্যের শাসকবর্গ স্কুলে একটি বাড়তি ক্লাসঘর, দুইটি শৌচাগার গড়িয়া দাবি করিয়াছে, ‘উন্নয়ন হইল।’ কিন্তু ভারতে আজ স্কুলের পরিকাঠামোর উৎকর্ষ মাপা হইতেছে বিজ্ঞানের ল্যাবরেটরি, কম্পিউটার ল্যাবরেটরি, গ্রন্থাগার, পুস্তক ব্যাঙ্ক, শিক্ষা-সহায়ক সরঞ্জামের জোগান দিয়া। কত দ্রুত পাঠ্যপুস্তক কিংবা জামা হাতে পাইল পড়ুয়ারা, তাহাও বিবেচিত হইতেছে পরিকাঠামোর সূচকে। আর এ রাজ্যে রাজ্যবাসী সরকারি স্কুল হইতে মুখ ফিরাইয়া সন্তানকে পাঠাইয়াছে টিউশনে, বেসরকারি স্কুলে। পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় সম্পন্ন রাজ্যগুলি কিন্তু সরকারি স্কুলের পরিকাঠামোকে এই ভাবে তাচ্ছিল্য করে নাই। পঞ্জাব, গোয়া, কেরল, তামিলনাড়ু সর্বাগ্রে, কিন্তু উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিও যে এ রাজ্যের তুলনায় অগ্রসর, ইহা কেবল লজ্জার নহে, আশঙ্কার বিষয়। বর্তমান রাজ্য সরকার দাবি করিেত পারে যে, বামফ্রন্ট আমল হইতেই এই অবনমন পশ্চিমবঙ্গ উত্তরাধিকার সূত্রে পাইয়াছে। উত্তরে একটিই কথা বলা যায়। আট বৎসর কম সময় নহে। এই সময়ের মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা-পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ কেন এমন কিছু করিতে পারিল না, যাহা সেই অবনমনের ধারাবাহিকতাকে ভাঙিতে পারে?

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

বেদনার্ত হইতে হয় ‘সমতা’ (ইকুইটি) সূচকটির ফলাফলে। জাতি, জনজাতি, লিঙ্গ, ধর্ম ও প্রতিবন্ধকতার কারণে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার মানে বৈষম্য থাকিতেছে কি না, তাহা মাপিবার সূচকটি পনেরোটি প্রশ্নের দ্বারা নির্মিত হইয়াছে। সেই নিরিখেও সাম্যগর্বী পশ্চিমবঙ্গ বিহার-উত্তরপ্রদেশের পশ্চাতে পড়িয়াছে। স্কুলের শিক্ষায় সমান সুযোগ দানই সমাজে সাম্য আনিবার উপায়। সর্বভারতীয় সমীক্ষার ফলে স্পষ্ট, যে সব রাজ্যে জাত-রাজনীতি প্রবল, তাহারাও শিক্ষায় সাম্য আনিতে এ রাজ্যের তুলনায় অধিক সফল। এই মূল্যায়ন রাজ্য সরকারগুলির প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতেই প্রস্তুত হইয়াছে। সম্ভবত সেই জন্য একটি বিষয়ে রাজ্য প্রশংসা পাইয়াছে, শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতা। মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।

অন্য বিষয়গুলি:

Education Madhyamik West Bengal Board WBBSE School Eductaion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy