Advertisement
০১ জুন ২০২৪
Anjan Bandyopadhyay

নিদান আসবে অনেক, কারণ সবই তো দেশের স্বার্থে

হাল্লা এখন যুদ্ধে চলেছে। এখন শুন্ডির পিন্ডি চটকানোর সময়। স্কন্ধ মটকে শত্রুনাশের সময় এখন। অতএব এখন প্রশ্ন করার সময় নয়। প্রশ্ন করার অর্থই হল দেশদ্রোহিতার নামান্তর, নিদেনপক্ষে অদেশপ্রেম তো বটেই।

দেশের স্বার্থের নামে গণতান্ত্রিক অধিকারে হাত দেওয়ার ইতিহাস ক্লান্তিকর ভাবে দীর্ঘ। বেঙ্কাইয়া নাইডুর ছবি সংগৃহীত।

দেশের স্বার্থের নামে গণতান্ত্রিক অধিকারে হাত দেওয়ার ইতিহাস ক্লান্তিকর ভাবে দীর্ঘ। বেঙ্কাইয়া নাইডুর ছবি সংগৃহীত।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৪৪
Share: Save:

হাল্লা এখন যুদ্ধে চলেছে। এখন শুন্ডির পিন্ডি চটকানোর সময়। স্কন্ধ মটকে শত্রুনাশের সময় এখন। অতএব এখন প্রশ্ন করার সময় নয়। প্রশ্ন করার অর্থই হল দেশদ্রোহিতার নামান্তর, নিদেনপক্ষে অদেশপ্রেম তো বটেই। অতএব এখন নিদান আসবে অনেক। রোগব্যধির দাওয়াই। যা কিছু আসবে, সব দেশের স্বার্থে। দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে। কেউ শব্দ কোরো না। এমনকী মানবাধিকার অথবা গণতন্ত্র রক্ষার নামেও না।

কোনও এক হাল্লা বা শুন্ডির কাহিনিই নয় এটা। বিস্ময়কর ভাবে বিশ্বজনীন এই রাষ্ট্র-আচরণ। গণতন্ত্রের পীঠস্থান হিসাবে পরিচিত ইউরোপ-আমেরিকাও বিশেষত ৯/১১ উত্তর সময়ে তার নজির রেখেছে। যা কিছু হয়েছে, দেশের স্বার্থের নামে, নিরাপত্তার স্বার্থের নামে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণায় সেই সময়ের যুদ্ধগন্ধী আবেগমথিত পরিসর জুড়ে প্রশ্নের অবকাশ সঙ্কুচিত হয়ে আসছিল। আসছিল মানুষের আবেগের কারণেই। সেই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে চালানো এক জনমত সমীক্ষায় ৫৫ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছিলেন, সন্ত্রাসের মোকাবিলায় কিছু নাগরিক অধিকার খর্ব করা যেতে পারে। মাত্র ৩৫ শতাংশ রায় দিয়েছিলেন এর বিপক্ষে। তখন ছিল ভিন্ন এক সময়। যুদ্ধ-যুদ্ধ সময়।

রাষ্ট্র কেন এই যুদ্ধ-যুদ্ধ আবেগটাকে আকাঙ্খা করে, সেটাও স্পষ্ট হবে একই দেশে একই প্রশ্ন নিয়ে দশ বছর পরের এক জনমত সমীক্ষায়। পিউ রিসার্চ সেন্টারের ২০১১ সালের সমীক্ষায় একই প্রশ্নে এ বার মাত্র ৪০ শতাংশ মানুষ নাগরিক অধিকার প্রয়োজনে খর্বের পক্ষে মত দিলেন, ৫৪ শতাংশ বললেন, না, অধিকারে হাত দেওয়া চলবে না। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।

দেশের স্বার্থের নামে গণতান্ত্রিক অধিকারে হাত দেওয়ার ইতিহাস ক্লান্তিকর ভাবে দীর্ঘ। সৌভাগ্য এই দেশের, আমরা বারংবার ফিরিয়ে এনেছি গণতন্ত্রের উড্ডীন পতাকাকে।

মনে পড়ে গেল, কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইডু শনিবারেই বলেছেন, এনডিটিভি ইন্ডিয়া এক দিনের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দেশের স্বার্থেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anjan Bandyopadhyay Ban on NDTV
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE