Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

অপরাধ

আধুনিক ভারতে বিশ্বাস অতি বিষম বস্তু। বিশেষত গো-বিশ্বাস তো ভয়ানক।

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২০ ০০:০৫
Share: Save:

ঝাড়গ্রামের শিবু গড়াইয়ের নূতন ঠিকানা জেলা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল। করোনা-আক্রান্ত হইয়া নহে, বরং করোনাভাইরাস রুখিবার অব্যর্থ ঔষধ সেবনের প্রতিক্রিয়ায় তাঁহার এ-হেন দুরাবস্থা। ঔষধটি সামান্য নহে, ভাঁড়বন্দি অমৃতস্বরূপ— গোমূত্র। প্রচার চলিতেছে, তাহা সেবনে যে কোনও প্রকার রোগসংক্রমণই ত্রিসীমানায় ঘেঁষিবে না, করোনা তো সেই প্রবল পরাক্রমের সম্মুখে নাবালক প্রতিপক্ষমাত্র। রাজ্যের শিয়রে করোনা-শমন ক্রমশ ঘনাইতেছে। প্রবল বিশ্বাসে আস্থা রাখিয়া আরও বহু বিশ্বাসীর মতোই শিবুও সেই প্রতিষেধক সেবন করিয়াছিলেন। কিন্তু তাঁহার পেট গো-অমৃতের মর্ম বুঝে নাই, বিশ্বাসঘাতকতা করিয়াছে। গলায়-বুকে ব্যথার উপসর্গ লইয়া শিবু এখন হাসপাতাল-বন্দি। বলিতেছেন, বড় ভুল করিয়া ফেলিয়াছেন।

অবশ্য এমন স্বীকারোক্তি সচরাচর মিলে না। আধুনিক ভারতে বিশ্বাস অতি বিষম বস্তু। বিশেষত গো-বিশ্বাস তো ভয়ানক। সেই বিশ্বাসে ভর করিয়াই স্বস্তির চুমুক পড়িতেছে গোমূত্রের পাত্রে। সংখ্যাটিও নগণ্য নহে। সারা পৃথিবী হন্যে হইয়া ঘুরিতেছে এই মারণ-ভাইরাসের প্রতিষেধকের খোঁজে, কিন্তু ভারতের সহিত বাহিরের দুনিয়ার পার্থক্য হইল, অন্যদের হাতে অর্থ থাকিতে পারে, বিজ্ঞানবোধ থাকিতে পারেন, উন্নত গবেষণাগার থাকিতে পারে, কিন্তু ভারতীয় গরু নাই। সুতরাং, ভারত আগাইয়া আছে অনেক পা। খাস রাজধানীর বুকে সম্প্রতি ‘গোমূত্র পার্টি’র আয়োজন করিয়াছে অখিল ভারত হিন্দু মহাসভা। অধ্যক্ষ চক্রপাণি মহারাজ চমৎকার বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দিয়াছেন— করোনাভাইরাসের মধ্যের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ওয়াই-তত্ত্বকে শায়েস্তা করিতে পারে গোমূত্র। সুতরাং, প্রতিষেধক সকলের সম্মুখে। এখনও নাগরিকদের অধিকাংশই রোগ নিরাময়ের জন্য কেন ঔষধের দোকানে, হাসপাতালে ছুটিয়া মরিতেছে, ভাঁড়-হাতে খাটালে যাইতেছে না, এই আক্ষেপ তাঁহাদের ক্রমশ প্রবলতর হইতেছে। ।

ভাবিতে লজ্জা লাগে, একুশ শতকের এক ভয়াবহ অতিমারির মোকাবিলায় বিজ্ঞানকে আঁকড়াইয়া ধরিবার পরিবর্তে অন্ধবিশ্বাসে এই ভাবে তা দেওয়া চলিতেছে। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিরোধী দলের নেতাও অক্লেশে সেই অন্ধবিশ্বাসের সপক্ষে সওয়াল করিতেছেন, অজুহাত দিতেছেন, প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতির, এবং তাঁহার দলের সমর্থকরা তাহা পালন করিবার জন্য গোরুর পিছনে ছুটিতেছেন। কথায় কথায় অপবিজ্ঞান এবং অন্যায়কে প্রশ্রয় দিবার এই ‘সাংস্কৃতিক’ অজুহাত হিন্দুত্বের নির্লজ্জ বিজ্ঞাপন ছাড়া কিছুই নহে। দেশের এত বড় সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়াও যে পথ ছাড়িতে চাহেন না গেরুয়াধারীরা। ইহার পূর্বেও বিজেপি নেতারা চূড়ান্ত অবৈজ্ঞানিক কথা বলিয়া পার পাইয়াছেন। তাহাকে উপহাস করা চলে। কিন্তু সেই অবৈজ্ঞানিকতা শিবুর ন্যায় আরও অনেকের শারীরিক এবং মানসিক ক্ষতি করিলে তাহা অপরাধ, অক্ষমণীয় অপরাধ। অবিলম্বে স্রষ্টাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রয়োজন। সঙ্গে শিবুদেরও বুঝিতে হইবে, সাধারণ বিচারবোধ কাজে না লাগাইলে অপমৃত্যু অবশ্যম্ভাবী। কালের নিয়মে করোনাভাইরাসের প্রকোপ কমিবে। কিন্তু শিবু এবং তাঁহার উপদেষ্টাদের যুগপৎ অশিক্ষাবাহিত যে অবৈজ্ঞানিকতা-ভাইরাস ভারতে ছড়াইতেছে, তাহার প্রকোপ কমিবে কি? করোনার প্রতিষেধক খুঁজিতে বিজ্ঞানীরা প্রাণপাত করিতেছেন। আর এই ভারতীয় অবিজ্ঞানের প্রতিষেধক?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE