Advertisement
E-Paper

আশার মিনারটা কিন্তু নিষ্প্রদীপ হয়নি এই ঘোর অন্ধকারেও

বহিরাগতদের অবরোধ হঠাতে ফরিদ-ইয়াকিন যখন কাঁধ মেলাচ্ছেন গোপাল-সলিলের কাঁধে, তখন চেনা ছবিটা আবার ভাস্বর হয়ে উঠছে। প্রবচন বলে, অন্ধকার যত গাঢ় হয়, ভোর ততই কাছে আসে।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৭ ০৫:১০
পাশে-আছি: বর্মা কলোনিতে খিচুড়ি রান্নার তোড়জোড় চলছে। ফাইল চিত্র।

পাশে-আছি: বর্মা কলোনিতে খিচুড়ি রান্নার তোড়জোড় চলছে। ফাইল চিত্র।

বিনিদ্র রাত কাটছে বহু সহ-নাগরিকের। রাতগুলো কোনওক্রমে পোহাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু খুব অন্ধকার একটা সকাল আসছে রোজ। ধর্মীয় ভাবাবেগে উস্কানির জেরে বারুদের স্তূপে স্ফূলিঙ্গপ্রপাত আর তাকে ঘিরে রাজনীতির নেতিবাচক তৎপরতা— গ্রামের পর গ্রাম, জনপদের পর জনপদ তছনছ হয়ে গিয়েছে কয়েক দিনে। বহু নাগরিকের জীবন ওলট-পালট হয়ে গিয়েছে রাতারাতি। যাঁদের জীবনের বহিরঙ্গে সে তাণ্ডব ছাপ ফেলেনি, অন্তরঙ্গে তাঁরাও ভেঙেচুরে একাকার। সমাজ এবং পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে আজন্ম-লালিত ধারণা ভেঙে খান খান অনেকের। পারস্পরিক বিশ্বাসের ভিতটাই যেন টলে গিয়েছে ভিতরে ভিতরে। তবে হালটা কিন্তু ছেড়ে দেওয়ার নয়, আরও শক্ত হাতেই বরং ধরতে হবে। তার জন্য জরুরি যে মনোবল, তা-ও জুগিয়ে দিচ্ছে বিধ্বস্ত এলাকাগুলোই।

আচম্বিতে হানা দিয়েছে যে বিপদ, বসিরহাট-বাদুড়িয়া-স্বরূপনগরের কাছে তা কিন্তু বেশ অচেনা। শতকের পর শতক ধরে সহাবস্থান নানা মতের। আদান-প্রদানই দস্তুর সে যৌথ জীবনচর্যায়, আঘাত-প্রত্যাঘাত নয়। কিন্তু কুচক্রীরা সর্বত্রই থাকে। কালের নিরন্তর প্রবাহের ধারে আগাছা আর আবর্জনার মতো অস্তিত্ব তাদের। কালের প্রবাহে বাঁধ দেওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই। কিন্তু কখনও-সখনও জলটাকে দূষিত করে তুলতে তারা সক্ষম হয়, দুর্গন্ধ ছড়িয়ে দিতে সফল হয়। এ বারও তেমনই ঘটেছে, যার ক্ষত চিরস্থায়ী হওয়ার নয়, কালের প্রবাহে বিলীন হয়ে যাওয়ারই বরং। ক্ষতস্থান ভরিয়ে তোলার সেই স্রোতটাও যে অচিরেই বইতে শুরু করেছে, আশ্রয় শিবির ঘিরে স্বপন-রফিক-মৃদুল-কওসরদের যৌথ তৎপরতায় তা টের পাওয়া যাচ্ছে।

বহিরাগতদের অবরোধ হঠাতে ফরিদ-ইয়াকিন যখন কাঁধ মেলাচ্ছেন গোপাল-সলিলের কাঁধে, তখন চেনা ছবিটা আবার ভাস্বর হয়ে উঠছে।

প্রবচন বলে, অন্ধকার যত গাঢ় হয়, ভোর ততই কাছে আসে। অর্থাৎ নিকষ অন্ধকারে বসেও ভোরের প্রহর গোনা বন্ধ করতে নেই। তা হলে বসিরহাটেই বা হাল ছাড়ব কেন? কেন বিমর্ষ হব বাদুড়িয়ায়, স্বরূপনগরে, দেগঙ্গায়? প্রবল অন্ধকারের দিনেও তো এই সব এলাকা নিষ্প্রদীপ হয়ে পড়তে দেয়নি আশার মিনারটাকে। বর্মা কলোনি হোক বা বেড়াচাঁপার মোড়, শাসন হোক বা দেগঙ্গা, আশার কিরণ তো উৎসারিত হয়েছে নানা প্রান্ত থেকেই। এই কিরণই ফের পথ দেখাবে, এই টুকরো টুকরো ছবির কোলাজই আস্থা ফেরাবে, বিশ্বাস রাখা যায়। কারণ এটাই বসিরহাটের মাটির আসল আঘ্রাণ, এটাই বাংলার মুখ, এটাই ভারতীয়ত্ব।

Basirhat Communal Violence Communal Harmony Anjan Bandyopadhyay Newsletter অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় বসিরহাট বাদুড়িয়া Indianism
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy