Advertisement
০৭ মে ২০২৪
আপনার অভিমত
Coronavirus

সাবধানতা আর সচেতনতার মার নেই, এই কথাটি ভুলে গেলে বড় ভুল হবে!

আগুন লাগলে কুয়ো খুঁড়ে লাভ হয় না। নিয়ম মেনে চলা একান্ত ভাবে জরুরি। লিখছেন কৌশিকরঞ্জন খাঁ প্রশ্ন হল, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ভাবনাকে আমরা কবে জীবনের অঙ্গ করে নেব?

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০২০ ০৮:০৫
Share: Save:

বিপর্যয় মানুষকে সাবধানী করে, সচেতন করে। কিন্তু সেই অর্জিত সচেতনতা আমরা অচিরেই হারিয়ে ফেলি। আজ করোনাভাইরাস রুখতে মানুষ সচেতন। ওষুধের দোকানগুলোয় প্রতি ১০ জনে অন্তত তিন জন স্যানিটাইজারের খোঁজে আসছেন। বাজারে মাস্ক অমিল হয়ে পড়েছে। ক’দিন আগেও মানুষ এ সবের হদিস রাখতেন না।

প্রশ্ন হল, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ভাবনাকে আমরা কবে জীবনের অঙ্গ করে নেব? একটা জিনিস লক্ষ্যণীয়—গত কয়েকবছরে প্রাথমিক স্কুলের শিশুরা লাগাতার প্রচার ও অভ্যাসে আগের তুলনায় অনেকটাই স্বাস্থ্যসচেতন হয়েছে। একদম প্রত্যন্ত গ্রামের শিশুও স্কুল থেকে দেওয়া জুতো পরে স্কুলে আসছে। কারও আঙুলের নখ বড় থাকলে অন্যেরা অভিযোগ করছে— স্যার! অমুকের আঙুলের নখ বড়! শিশুদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে, তারা বাড়িতেও খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে হাত ধুচ্ছে। এই সচেতনতা তারা স্কুলে মিড-ডে মিল খাওয়ার আগে ‘সাবান দিয়ে ধুলে হাত সুস্থ থাকি দিনরাত’ কর্মসূচি ও স্লোগান থেকে অর্জন করেছে।

শিশুরা সুঅভ্যাস সহজেই জীবনের অঙ্গ করে নেয়। কিন্তু বড়রা তা পারে না। পারে না, কারণ, তাঁরা সেটা পারতে চান না। আজ কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন দফতরের প্রবেশপথে এবং আর্থিক লেনদেনের কাউন্টারে স্যানিটাইজার রাখা হচ্ছে। কিন্তু পুরসভা ও পঞ্চায়েত পরিচালিত শৌচাগারে ঠিকমতো জলের ব্যবস্থাই রাখা হয় না, স্যানিটাইজার তো দূর অস্ত! বাসস্ট্যান্ড, রেলওয়ে স্টেশনের টিকিট কাউন্টারগুলোয় এই ব্যবস্থা খুব কাম্য। নির্মল বাংলা, নির্মল বিদ্যালয়, স্বচ্ছ ভারত অভিযানকে আমরা কতটা নিজের জীবনে ঠাঁই দিয়েছি? শুধু রাষ্ট্রের মুখের দিকে তাকিয়ে এবং অভিযোগের আঙুল তুলে রাখলে কি আমরা বিপর্যয় এড়াতে পারব? শহরের শিক্ষিত পরিবারে হয়তো খাবার আগে হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধোয়ার প্রচলন হয়েছে। কিন্তু বাইরে থেকে এসে ক’জন মানুষ হাত-পা পদ্ধতি মেনে ধুয়ে ঘরের অন্যান্য সামগ্রী স্পর্শ করেন? আজ না হয় নোভেল করোনাভাইরাস একটা আতঙ্কের পর্যায়ে চলে গিয়েছে। কিন্তু আরও তো অনেক বিষয় আছে, যা রীতিমতো আতঙ্কগ্রস্থ হওয়ার মতো।

ভারতের যা খাদ্যাভ্যাস, তাতে হৃদ্‌রোগও ভবিষ্যতে মহামারীর আকার ধারণ করতে পারে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সতর্ক করছে। কিন্তু ভবি তো ভোলার নয়! খুব সচেতন না হলে ক’জন সুস্থ মানুষ ভোজ্য তেল বাড়িতে ঢোকাবার আগে তার পরিমাণের হিসেব কষেন? খাবার পাতে একটা ভাজা না থাকলে বাঙালির খাবার থালা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। রাস্তার ধারের বহু ব্যবহৃত নিম্নমানের তেলে ভাজা চপ-সিঙাড়া-সমোসা আজও মানুষ একটুও বিবেচনা না করে উদরস্থ করে ফেলছেন। এর জন্য স্বাস্থ্য সচেতনদেরকে কুখাদ্য রসিকদের টিটকিরিও শুনতে হয়— ‘কী এমন বয়স! এই বয়সেই এত খাবারের বাছবিচার!’

কিন্তু পৃথিবীর বেশির ভাগ উন্নত দেশের সুস্থতার গোপন কথাটিই হলো খাদ্যগ্রহণের সুঅভ্যাস। তেলেভাজা নয়, যে সব দেশে সিদ্ধ খাবার খাওয়ার চল বেশি, সে সব দেশের জনগণ তুলনামূলক ভাবে বেশি সুস্থ ও দীর্ঘজীবী। উদাহরণ হিসেবে জাপানের কথা বলা যেতে পারে। সেখানে শতায়ু লোকের সংখ্যা পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক। ফারমেন্টেড ফুড শরীরের অক্সিডেন্টকে নষ্ট করে। চিনি ছাড়া টক দই, ইডলি, দোসা এই পর্যায়ের খাবার। বুলগেরিয়ার লোকের একটি অভ্যেস হল শেষ পাতে টক দই খাওয়া। দেখা গিয়েছে, তাঁদের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা কম এবং তাঁরাও দীর্ঘজীবী ও সুদেহী।

রোগ, জরা, ব্যাধি, মৃত্যু থেকে পরিত্রাণের উপায় নেই মানুষের। বহুযুগ আগে তথাগতও তা খুঁজে পাননি। কিন্তু সুঅভ্যাস মানুষকে অনেকটাই বিপন্মুক্ত রাখতে পারে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। অন্তত রোগকে মহামারীর আকার ধারণ করার বীভৎসতায় পৌঁছতে দেয় না।

কিন্তু সময় থাকতে সচেতন না হয়ে মানুষ রোগে আক্রান্ত হলে কৃতকর্মের জন্য নিজেকে অভিশাপ দেন। ডাক্তারের চেম্বারে ঢোকার আগে পর্যন্ত একজন ধূমপায়ীও নিজের উদ্যোগে ধূমপান ছাড়ার প্রয়াস করেন কি? যাঁরা করে থাকেন, তাঁদের হতোদ্যম করতে অন্য ধূমপায়ীরা বিদ্রুপও করেন! বলেন— ‘এতদিনের সঙ্গী সিগারেট যে ছাড়তে পারে, সে এক কথায় বউকেও ডিভোর্স দিতে পারে!’ ইউরোপের রাস্তাঘাটে সিগারেট পাওয়া যায় না। ভারতের অন্যান্য রাজ্য থেকে পশ্চিমবঙ্গে সিগারেট-বিড়ি সুলভ। সিগারেটের প্যাকেটে বীভৎস রোগাক্রান্ত মুখের ছবি থাকলেও মানুষ পয়সা দিয়ে সেই বীভৎসতাকে অনায়াসে কিনছেন।

রাষ্ট্র কিন্তু পারিবারিক অন্দরমহলে ঢুকবে না। মানে সেটা ঘটুক, তা আমরা পছন্দও করি না। কিন্তু রাষ্ট্র প্রতি মুহূর্তে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে এই যে লাগাতার সচেতন করার প্রয়াস চালাচ্ছে, তার মান্যতা নাগরিক সমাজ কতটা দেয়? এ বিষয়ে কী মনে করছি আমরা?

(লেখক বালুরঘাটের মহাদেববাটী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE