প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা পরেশচন্দ্র অধিকারী। স্কুল সার্ভিস কমিশনের ওয়েটিং লিস্টে তাঁর মেয়ের নাম ঘিরেই হইচই পড়ে গিয়েছে।
যা অনুভূত হচ্ছে, তা হল এক ধরনের অভাব। স্বচ্ছতার অভাব অনুভূত হচ্ছে এই মুহূর্তে। অনুভূত হচ্ছে একটি আশ্চর্য ‘সমাপতন’কে ঘিরে।
পরেশ অধিকারী ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী। বামফ্রন্ট জমানায় মন্ত্রী ছিলেন তিনি। ফরোয়ার্ড ব্লক দলের নেতা ছিলেন।
মাঝে বেশ কিছু দিন রাজ্য রাজনীতির পরিসরে পরেশ অধিকারীর নামটা শোনাই যেত না। গত কয়েক দিন ধরে তাঁর নামটা ভীষণ ভাবে শোনা যাচ্ছে। শুধু পরেশ অধিকারীর নাম নয়, তাঁর কন্যা অঙ্কিতা অধিকারীর নামটাও সমধিক ‘গুরুত্বে’ শ্রুত হচ্ছে।
কেন শোনা যাচ্ছে পরেশ অধিকারীর নাম। শোনা যাচ্ছে, কারণ তিনি নিজের পুরনো দল ফরোয়ার্ড ব্লক ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তৃণমূল মহাসচিব তথা রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিজে সেই দলবদলের কথা ঘোষণা করেছেন এবং প্রাক্তন মন্ত্রী পরেশ অধিকারীর হাতে দলের পতাকা তুলে দিয়েছেন। আর পরেশ অধিকারীর এই দলবদলের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বদল এসে গিয়েছে স্কুল সার্ভিস কমিশনের ওয়েট লিস্টে। ওই লিস্টে যাঁর নাম কোথাও ছিল না বলে অভিযোগ, সেই অঙ্কিতা অধিকারীর নাম আচমকা লিস্টের একেবারে প্রথম স্থানটিতে বসে গিয়েছে। অঙ্কিতা হলেন পরেশবাবাবুর কন্যা। আশ্চর্য ‘সমাপতন’টি কী, নিশ্চয়ই আর ভেঙে বলার প্রয়োজন নেই।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
যে নাম তালিকায় কোথাও ছিল না, আচমকা সেই নাম উড়ে এসে প্রথম স্থানটিতে জুড়ে বসল কী ভাবে? প্রশ্ন স্কুল সার্ভিস কমিশনের ওয়েট লিস্টে থাকা অন্যদের। প্রশ্ন স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় ভাগ নেওয়া অন্যদের। প্রশ্ন সাধারণ জনপরিসরেও। ম্যাজিক নাকি? ভোজবাজি? নাকি ভেল্কি? বাবা বিরোধী দল ছেড়ে শাসক দলে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মেয়ের নাম রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তরতর করে উপরের দিকে উঠে এল। নামটা কোথায় ছিল, কারও জানা নেই। আদৌ ছিল কিনা, তা নিয়েই প্রশ্ন চতুষ্পার্শ্বে। আচমকা ওয়েট লিস্টের প্রথম স্থানে কী ভাবে উঠে এল নামটা? কারও কাছে স্পষ্ট উত্তর নেই।
আরও পড়ুন: রাতারাতি বদলে গেল স্কুল সার্ভিসের ওয়েট লিস্ট, শীর্ষে সদ্য তৃণমূলে আসা নেতার মেয়ে!
পরেশ অধিকারী নিজে সম্ভবত এই গোটা বিতর্ক থেকে অনেক ‘দূরে’। ভোজবাজির মতো ঘটনাটা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি সকলকে জানাচ্ছেন যে তিনি কিছুই জানেন না। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে কিছু জিজ্ঞাসা করা হলে ধমকের সুর শোনা যাচ্ছে। অঙ্কিতা অধিকারীর নামটা কোথায় ছিল, কোথায় এল, কী ভাবে কী হল— কোনও ব্যাখ্যায় পার্থবাবু যেতে চাইছেন না। স্কুল সার্ভিস কমিশনও কোনও স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারছে না। অস্বচ্ছতা অনুভূত না হয়ে আর যায় কোথায়?
আরও পড়ুন: স্কুল সার্ভিসের ওয়েট লিস্টে ‘চূড়ান্ত দুর্নীতি’, শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে তদন্তের দাবি অশোকের
এই রকম একটা ছবি তৈরি হওয়া কি আদৌ কাম্য! কার পক্ষে ভাল হল এটা? শাসক দলের ভাবমূর্তি কি উজ্জ্বল হল এতে? পরেশ অধিকারীর জনপ্রিয়তা কি বাড়ল? সরকারি চাকরির পরীক্ষায় স্বচ্ছতা কতটা তা নিয়ে জনসাধারণের ধারণা কি ইতিবাচক মোড় নিল? সর্বোপরি অঙ্কিতা অধিকারী নিজেও কি খুব স্বস্তিতে রইলেন?
এ সব প্রশ্নের উত্তর যাঁদের কাছে থেকে আসা উচিত, তাঁরা প্রশ্নগুলো শুনতেই পাবেন না আপাতত। অতএব উত্তরও মিলবে না। ক্রমশ গাঢ় হবে অস্বচ্ছতার বাতাবরণ। অপরিচ্ছন্নতা অনুভূত হতে থাকবে আরও বেশি করে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy