Advertisement
E-Paper

চক্রবৎ

নয় জন নূতন মন্ত্রী আসিলেন, অথচ তাঁহার দলের কেহ নাই— বিহারে মহাগঠবন্ধন ভাঙিয়া পুরাতন সংসারে ফিরিয়া আসিবার পর এহেন ধাক্কায় নীতীশ কুমার হয়তো দুঃখিত হইয়াছেন।

শেষ আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:০৯

হাতে রহিল পাঁচ। নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভার বহর বাড়িয়া মোট ৭৬ জন মন্ত্রীতে ঠেকিয়াছে। কোনও মন্ত্রিসভায় মন্ত্রীর সর্বোচ্চ সংখ্যা, সংবিধান অনুসারে, লোকসভার সাংসদসংখ্যার ১৫ শতাংশ হইতে পারে। বর্তমান লোকসভায় সংখ্যাটি ৮১। অতএব, এই দফায় যাঁহারা ভাগ পান নাই, তাঁহাদের হতাশ হইবার কারণ নাই। ‘ন্যূনতম স‌রকার, সর্বোচ্চ প্রশাসন’-এর প্রতিশ্রুতিটি জানালা গলিয়া পলাইয়াছে। মনমোহন সিংহের দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের সহিত নরেন্দ্র মোদীর সরকারের বহরে ফারাক নাই। সেই জমানায় তবু শরিকি রাজনীতির বাধ্যবাধকতার অজুহাতটি ছিল। রবিবার নরেন্দ্র মোদী তাঁহার মন্ত্রিসভায় যে নয় জনকে আনিলেন, প্রত্যেকেই বিজেপি-র। এনডিএ-তে বিজেপি-র সংখ্যাগরিষ্ঠতার দাপটে বাকি দলগুলি বাহুল্যমাত্র হইয়াছে। তবুও তাঁহার মন্ত্রিসভার আয়তন এমন বিপুল। নরেন্দ্র মোদীকে পৃথক ভাবে দোষ দেওয়ার কারণ থাকিত না— এমন বিপুলবপু মন্ত্রিসভাই ভারতের দস্তুর— কিন্তু, আর পাঁচটি ক্ষেত্রের ন্যায় এই প্রশ্নেও মোদী নির্বাচনী ‘জুমলা’ করিয়া রাখিয়াছেন।

নয় জন নূতন মন্ত্রী আসিলেন, অথচ তাঁহার দলের কেহ নাই— বিহারে মহাগঠবন্ধন ভাঙিয়া পুরাতন সংসারে ফিরিয়া আসিবার পর এহেন ধাক্কায় নীতীশ কুমার হয়তো দুঃখিত হইয়াছেন। এই রদবদলের সম্ভাবনা লইয়া দিল্লির হাওয়ায় যে পরিমাণ আগ্রহ তৈরি হইয়াছিল, তাহার নিরিখে বদলগুলি নিতান্ত নিরামিশ। নির্মলা সীতারামনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে উত্থান নাকি চমক। ইন্দিরা গাঁধীর পর এই প্রথম কোনও মহিলা এই দফতরের দায়িত্ব পাইলেন, ভারতীয় রাজনীতিতে লিঙ্গ-বৈষম্যের এমন প্রকট বিজ্ঞাপনটিকে বাদ রাখিলে নির্মলার উত্থানে চমকের কারণ কোথায়? মোদীর অনুগামীদের দিয়া ক্যাবিনেট ভরিয়া ফেলিবার চালু ব্যবস্থাটিতে নির্মলা নূতন সংযোজন, তাহার অধিক কিছু নহে। তিন প্রাক্তন আমলা রাজকুমার সিংহ, হরদীপ সিংহ পুরী এবং অ্যালফোন্স কান্নানথানমকে মন্ত্রিসভায় লইয়া আসাকেও অনেকে একটি বার্তা হিসাবে দেখিতেছেন— নরেন্দ্র মোদী রাজনীতির মারপ্যাঁচ এড়াইয়া প্রশাসনিক দক্ষতার উপর জোর দিতে চাহিতেছেন। স্মরণে রাখা ভাল, প্রাক্তন আমলাদের মন্ত্রিসভায় লইয়া আসিবার প্রথাটি চিনে রীতিমত প্রচলিত। গণতান্ত্রিক রাজনীতির চরিত্রে যে দীর্ঘসূত্রতা আছে, ‘টেকনোক্র্যাট’রা তাহার ধার ধারিবেন না, এমন একটি বিশ্বাস নরেন্দ্র মোদী জনমানসে প্রতিষ্ঠা করিতে চাহেন বলিয়া আঁচ করা চলে। তবে, স্মরণে রাখা ভাল, মন্ত্রী এবং আমলাদের সহাবস্থান কিন্তু নিতান্ত অকারণ নহে। এক পক্ষ জনগণের চাহিদার দিকটি তুলিয়া ধরিবেন, আর অন্য পক্ষ কোনও প্রকল্পের সম্ভাব্যতার বিচার করিবেন, এবং তাহার মাধ্যমেই উন্নয়নের রূপরেখা রচিত হইবে— এই দ্বিত্বের মধ্যে কিন্তু গণতন্ত্রের সুরটি নিহিত থাকে। তাহাকে লঙ্ঘন করিবার চেষ্টা গণতন্ত্রের পক্ষে সুসংবাদ নহে।

নেহরুর উত্তরাধিকার অস্বীকার করা মোদীর রাজনীতির এক বিশেষ দিক। কিন্তু আশ্চর্য, মন্ত্রিসভার বহরে যদি তিনি মনমোহন সিংহের উত্তরাধিকার বহন করেন, তবে প্রাক্তন আমলাদের মন্ত্রী করিয়া তিনি যে ভঙ্গিতে নীতিনির্ধারণের কাজে ‘বিশেষজ্ঞ’দের গুরুত্ব দিলেন, তাহা নেহরুর অভিজ্ঞান। উপনিবেশ-উত্তর দুনিয়ায় উন্নয়নের নকশা নির্মাণে বিশেষজ্ঞদের উপর নির্ভর করিবার যে প্রথা চালু হইয়াছিল, ভারত তাহার অগ্রপথিকের ভূমিকায় ছিল। রাজনীতির সহিত সংযোগহীন বিশেষজ্ঞরাই উন্নয়নের যথার্থ কান্ডারি হইতে পারেন, এহেন বিশ্বাস নেহরু বহু বার ব্যক্ত করিয়াছেন। মোদী যে যোজনা কমিশনকে মুছিয়া দিয়াছেন, তাহার ভিত্তিতে ছিল এই বিশ্বাসটিই। নিয়তির পরিহাস, নরেন্দ্র মোদী ঠিক সেই বিশ্বাসেই উপনীত।

politics Jawaharlal Nehru Narendra Modi inheritance নরেন্দ্র মোদী
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy