বোলপুরে আলাপ ভদ্রলোকের সঙ্গে। পেশা শিক্ষকতা, নেশা পিছিয়ে পড়া মানুষের মধ্যে বুনিয়াদি শিক্ষার প্রসার। লকডাউনের শুরু থেকেই স্কুল বন্ধ, সেই বন্ধের বর্ষপূর্তির দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে বিদ্যালয়-শিক্ষার হালহকিকত নিয়ে কথা হচ্ছিল। বললেন, যাবেন আমার সঙ্গে? নিজের চোখেই দেখবেন চলুন!
পাশাপাশি দুটো গ্রাম, জরকাডাঙা ও বারিপুকুরডাঙা। বিশ্বভারতী থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার। পিচরাস্তা ছেড়ে ভিতরে পা বাড়ালেই চিরাচরিত দারিদ্র-লাঞ্ছিত গ্রাম্য চেহারা। মূলত জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষের বাস। লকডাউনের জন্য স্কুল বন্ধ, তবে তার অনেক আগে থেকেই তিনি ক’জন সমমনস্ক মানুষকে নিয়ে গ্রাম দুটোতে জনজাতি শিশুদের পড়াচ্ছেন। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ওখানে কি স্কুল নেই? উনি হেসে বললেন, থাকবে না কেন? স্কুল আছে, মাস্টারমশাইও কয়েক জন, পড়াশোনা নাই। সরকারি নানা প্রকল্পের সুবাদে পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের বাচ্চাদের কিছুটা বিদ্যালয়মুখী করা গেলেও, বইমুখী করার কাজ অধরাই থেকে গিয়েছে।
জরকাডাঙা মৎস্য দফতরের একটা পরিত্যক্ত কমিউনিটি হল-এ ওঁর পাঠশালা। বইয়ের ঝোলা ও বগলে আসন-চাটাই নিয়ে জড়ো হয়েছে কিছু শিশু। ক্লাস ফোরের একটি বাচ্চাকে ডেকে তিনি যোগ-বিয়োগ শেখাতে শুরু করলেন। ক্লাস থ্রি-তে পড়ে যে ছেলেটি, সে বর্ণমালার সব অক্ষর লেখা শেখেনি। বারিপুকুরডাঙার স্কুলটা খোলা আকাশের নীচে, উঠোনে। কচিকাঁচাদের পাশে জাবর কাটছে গরু, উঠোনময় হাঁস-মুরগি। ছাত্রদের শিক্ষার মান জরকাডাঙার শিশুদের মতোই। যোগ-বিয়োগ, গুণ-ভাগ না শিখেই কেউ ফাইভে উঠে গিয়েছে। বাংলা রিডিং পড়তে হোঁচট খাচ্ছে ক্লাস ফোরের কুসমি।