Advertisement
৩১ মার্চ ২০২৩
Gautam Adani

হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট কতটা বিপাকে ফেলল আদানিকে? কী ভাবে উদ্ধার পাবেন গৌতম?

আদানি গোষ্ঠী এই মুহূর্তে কতটা বিপাকে? গৌতম আদানি কি পারবেন তাঁর সাম্প্রতিক বিপদ কাটিয়ে উঠে আবার পুরনো অবস্থানে ফিরে যেতে?

How grave is the situation of Goutam Adani after the Hindenburg report

আদানিদের পুনরুত্থান কী ভাবে সম্ভব? ছবি: সংগৃহীত।

টি এন নাইনান
টি এন নাইনান
শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৩:৪০
Share: Save:

এই মুহূর্তে বাজারে চালু প্রশ্নগুলির মধ্যে অন্যতম হল, আদানি সাম্রাজ্যের বিপুল পতনের পর কী হবে? আদানিদের সংস্থাগুলির বাজারদর থেকে অতিরিক্ত ১২০ বিলিয়ন আমেরিকান ডলার কেটে নেওয়া হলেও (গৌতম আদানি স্বয়ং যে পরিমাণ ক্ষতির সম্মুখীন, তার দুই-তৃতীয়াংশ) কিন্তু এই গোষ্ঠীর হাতে ১০০ বিলিয়ন আমেরিকান ডলার থেকে যাবে। সেই সঙ্গে এটাও মেনে নিতে হবে যে, গৌতম আদানি সেই অঙ্কের অন্তত দুই-তৃতীয়াংশের মালিক।

Advertisement

এই পরিসংখ্যানগুলি আনুমানিক। কারণ, পরিস্থিতি খুব দ্রুত বদলাচ্ছে এবং ‘ক্রস হোল্ডিং’ (যে পরিস্থিতিতে দু’টি সংস্থা পরস্পরের শেয়ার কিনে রাখে)-এর জন্য কোনও সমন্বয় ঘটানো খুব সহজ কাজ হবে না। প্রোমোটার শেয়ারের (সকলে কিনতে পারেন না এমন শেয়ার) অঙ্গীকার করেও কোনও লাভ হবে বলে মনে হয় না। কিন্তু গৌতম আদানি বিশ্বের প্রথম বা দ্বিতীয় ধনীতম ব্যক্তি আর না থাকলেও (প্রথম কুড়িজন ধনীর তালিকাতেও তিনি আর নেই) অস্বীকার করা যাবে না যে, তিনি অত্যন্ত ধনী মানুষ এবং তাঁর সংস্থা এখনও পর্যন্ত এক সুবিশাল অস্তিত্ব নিয়েই দাঁড়িয়ে রয়েছে।

এখন প্রশ্ন, এর পরে কী? হিন্ডেনবার্গ গবেষণারর বক্তব্য, আদানি গোষ্ঠীর ৮৫ শতাংশ সম্পদকেই অনেক বেশি পরিমাণ অর্থমূল্যের বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এই হিসাব ১০ দিন আগে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের দাম গড়ে ৬০ শতাংশ পরিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু এখনও আদানি গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থা বিপুল পরিমাণ মূল্যমান বহন করে। যেমন, আদানি পাওয়ারের ক্ষেত্রে তার ‘বুক ভ্যালু’(ব্যালান্স শিটে উল্লিখিত সম্পদের মোট মূল্য)-র চেয়ে ১৪ গুণ বেশি মূল্য ধরা হয়েছিল। আদানি ট্রান্সমিশনের ক্ষেত্রেও তা-ই। আবার আদানি গ্রিন এনার্জির মূল্যমান তার বুক ভ্যালুর চাইতে ৫৬ গুণ বেশি! সাম্প্রতিক সময়ে বুক ভ্যালুর থেকে বেশি পরিমাণে মূল্যমান নির্ধারিত সংস্থার সংখ্যা কম নয়। তার উদাহরণ ‘অম্বুজা সিমেন্ট’। এই সংস্থার বাজারদর আর বুক ভ্যালুর অনুপাত ২.১। স্বাভাবিক মূল্যমান নির্ধারণের নিরিখে বিষয়টিকে দেখলে বোঝা যায়, আদানিদের বহু সংস্থার শেয়ারেরই পতন ঘটতে বিস্তর দেরি।

তাদের বাজারদরের ভিত্তিতে কোনও সংস্থার বাঁচা-মরা নির্ভর করে না। যদিও নতুন পুঁজি আকর্ষণ করতে গেলে এর বিশেষ প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু পুঁজির ক্ষেত্রেও পরিচর্যার প্রয়োজন রয়েছে। ঋণের ব্যাপারে তো বটেই। কারণ, এই সূত্র থেকেই লাভ এবং টাকাপয়সার লেনদেন বজায় থাকে। আদানি গোষ্ঠীর তালিকাভুক্ত ৭ কোটি ‘এনটিটি’ (যে ব্যক্তি বা সংস্থা দ্বারা বাণিজ্য পরিচালিত হয়)-র হিসাবনিকাশ থেকে দেখা যাচ্ছে, কর জমা দেওয়ার আগে গত মার্চ মাসে আদানি গোষ্ঠী যে লাভের হিসাব দেখিয়েছিল, তা ১৭,০০০ কোটি টাকা। ‘ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার’-এর লভ্যাংশও এর কাছাকাছি ছিল। ফলে বিস্ময়কর কিছু ঘটেনি বলা যায়। গোষ্ঠীর বৈদেশিক ঋণ এই মুহূর্তে ‘ডিসট্রেস রেট’ বা সর্বনিম্ন দামে বিক্রি হচ্ছে। হয়তো গোষ্ঠীর ‘ক্রেডিট রেটিং’ বা যে সূচক দ্বারা কোনও সংস্থার সম্ভাব্য ঋণদানের ক্ষমতাকে প্রকাশ করা হয়, তার অবস্থাও নিচুতে। কাজেই কোনও নতুন ঋণপত্র বাজারে ছাড়া বিপুল খরচের ব্যাপার। ব্যাঙ্ক থেকে নতুন করে ঋণ দিতে গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের ম্যানেজারদের বুকের পাটা থাকা প্রয়োজন। অবশ্য আদানিদের এই বিপর্যয়ের পরেও ইকুইটির বাজারে নতুন ইকুইটি ছাড়া গেলে পরিস্থিতি খুব কঠিন হবে না। অল্পকথায় বলতে গেলে, আদানিদের এই মুহূর্তে নজর দেওয়া উচিত তাদের ঋণ সংক্রান্ত দায়বদ্ধতার দিকে। তাতেই আর্থিক বাজারে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা পুনরুদ্ধার করা যাবে। না হলে শুধুমাত্র নতুন প্রকল্প ঘোষণা করে কোনও লাভ হবে না।

Advertisement

সীমাবদ্ধ আর্থিক লেনদেন এবং বাজারে পুঁজির অবনমন অর্ধেকের বেশি হয়ে দাঁড়ানোয় আদানিদের অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা করতে হবে। হাতে যতটুকু রসদ রয়েছে, তা দিয়েই কাজ উদ্ধার করতে হবে। মুকেশ অম্বানী এই মুহূর্তে গৌতম আদানীর থেকে ধনী। তাঁর সঙ্গে আদানীদের সব থেকে বড় পার্থক্য হল, এমন পরিস্থিতিতে পড়লে অম্বানী সর্বাগ্রে ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনতেন। ফলে যেখানে তিনি বিনিয়োগে আগ্রহী, সেখানে ঢালার মতো টাকা তাঁর হাতে থাকত। তেমনটা আদানিদের ক্ষেত্রে ঘটলে হয়তো আমরা শীঘ্রই শুনতে পেতাম, গৌতম আদানি গ্রিন হাইড্রোজেন ও শক্তি উৎপাদনের বাজারে সর্বাগ্রগণ্য হয়ে দাঁড়িয়েছেন। সৌরশক্তি উৎপাদন, প্রতিরক্ষার সরঞ্জাম তৈরি, ‘সেমি কন্ডাক্টর’ উৎপাদনের মতো বড় প্রকল্পে তিনি সফল হয়েছেন এবং বন্দর, বিমানবন্দর এবং অন্যান্য ব্যবসায় সম্প্রসারণ ঘটাতে পেরেছেন।

বৃদ্ধির গতি কমে যাওয়ার বিপদটি এখানেই যে, এর ফলে চলতি, বিপর্যস্ত অবস্থার বাজার মূল্যায়ন থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। উপস্থিতবুদ্ধি সম্পন্ন যে কোনও ব্যবসায়ীকে অনেকগুলো বল নিয়ে লোফালুফিরে খেলা দেখানোর কৌশল রপ্ত রাখতে হয়। প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হলেও তাঁকে তা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় শিখে রাখতে হয়।

এই কলামে গত সপ্তাহে লিখেছিলাম, গৌতম আদানিকে বেশ কঠিন লড়াই লড়তে হচ্ছে। যদিও এই লড়াই মরণপণ নয়। সুতরাং একে গৌতম আদানির অন্তিম পর্যায় কখনওই বলা যাবে না। শেষ পর্যন্তও তিনি দেশের দ্বিতীয় ধনীতম মানুষ এবং তাঁর বাণিজ্য গোষ্ঠী এখনও পর্যন্ত দেশের বৃহত্তম গোষ্ঠীগুলির মধ্যে অন্যতম। কিন্তু যখন গৌতম আদানী বীরদর্পে ঘোষণা করেছিলেন, তিনি বাজারে শেয়ার ছাড়বেন না বা কিছুতেই শেয়ারের দাম কমাবেন না— এই মনোভাব নিয়ে তাঁরও চিন্তাভাবনার অবকাশ রয়েছে। আরও জরুরি কথা এই যে, আদানির সংস্থায় যাঁরা অর্থ লগ্নি করেছিলেন,এই লড়াই তাঁদেরও ময়দানে নামতে বাধ্য করতে পারত। আদানি যে সব প্রকল্পের উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন, সেগুলি ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারত এবং সরকারি পণ্যের উৎপাদক হিসেবে নিজেকে দেখতে চাওয়ার বা আরও বিশদে বললে দেশের জাতীয় উৎপাদকের আসনে অধিষ্ঠান করার যে স্বপ্ন তিনি দেখছেন, তাকে বিপর্যয়ে ফেলতে পারত। কিন্তু তেমন কিছু এখনও ঘটেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.