Advertisement
E-Paper

বেপরোয়া

বাজি হারিবার সংখ্যাটিও নগণ্য নহে। সাম্প্রতিক সংযোজন, বর্ধমানের গলসি। দুর্ঘটনায় পড়িবার মুহূর্তে মৃত আরোহীদ্বয়ের বাইকটি উড়িতেছিল ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটার বেগে।

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৭ ০০:০০

গতিশীল হইতেছে রাজ্য। উন্নয়নের নহে, দ্বিচক্রযানের গতি। সেই গতির নেশা এমনই মাদকতুল্য যে, যুবসমাজের একটি অংশকে তাহা আচ্ছন্ন করিয়া রাখিয়াছে। পরিণতি ভয়াবহ হইতে পারে জানিয়াও তাহারা গতির জন্য প্রাণ বাজি রাখিতে প্রস্তুত। বাজি হারিবার সংখ্যাটিও নগণ্য নহে। সাম্প্রতিক সংযোজন, বর্ধমানের গলসি। দুর্ঘটনায় পড়িবার মুহূর্তে মৃত আরোহীদ্বয়ের বাইকটি উড়িতেছিল ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটার বেগে। বস্তুত, শহরের উড়ালপুল এবং জাতীয় সড়কে নানাবিধ দুর্ঘটনার মধ্যে শুধুমাত্র তীব্র গতির কারণে বাইক দুর্ঘটনার সংখ্যাটি বর্তমানে রীতিমত নজর কাড়িতেছে। আটকাইবার উপায়? প্রশাসনের তরফে একটি যুক্তি আছে। সহজ যুক্তি। রাজ্য পরিবহণ দফতরের এক কর্তা বলিয়াছেন, গতি কমাইতে অনেক রকম ব্যবস্থা এবং নজরদারি সত্ত্বেও গতির লড়াই থামিতেছে না। একমাত্র মানসিকতার পরিবর্তন ঘটিলেই দুর্ঘটনা রোধ সম্ভব। মানসিকতার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। সমাজবিজ্ঞানের কেতাবে কিংবা সংবাদপত্রের প্রবন্ধে এমন বিশ্লেষণ চলিতেই পারে। কারণ, পথ দুর্ঘটনা ঠেকাইবার জন্য আইন আছে, প্রচার আছে, বাইক চালাইবার সময় হেলমেট না পরিলে, নির্দিষ্ট গতিসীমা না মানিলে কী হইতে পারে, সেই বিষয়ে সম্যক জ্ঞানও আছে, তাহা সত্ত্বেও কেহ যদি কোনও কিছুর পরোয়া না করিয়া সড়কপথেই উন্মত্তের মতো ছুটিতে চাহে, তবে সেই মানসিকতাকে কোনও মতেই সুস্থ বলা চলে না। গতি কাহারও প্রিয় হইতেই পারে, পৌরুষ প্রদর্শনের মাধ্যমও হইতে পারে। কিন্তু তাহা পরখ করিবার জন্য কোনও নির্জন নিরাপদ স্থান বাছিয়া লইলেই হয়। শহরের কেন্দ্রস্থলে বা ব্যস্ত সড়কে উড়িবার শখপূরণের মতো মানসিকতা অবশ্যই দ্রুত বর্জনীয়। সুতরাং মানসিকতা পরিবর্তনের যুক্তিকে ফেলিয়া দেওয়া চলে না।

কিন্তু তাহা কখনওই পুলিশ-প্রশাসনের যুক্তি হইতে পারে না। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার ভার যদি নাগরিকের শুভবুদ্ধি জাগ্রত হইবার মুহূর্তের ভরসায় ছাড়িয়া দেওয়া হয়, তবে তো নবান্ন ও লালবাজারে তালা ঝুলাইয়া দিলেই হয়। প্রচেষ্টা সত্ত্বেও যে বাইক-বেনিয়ম রোধ করা যায় নাই, তাহা অবশ্যই প্রশাসনিক ব্যর্থতা। ধরিতে হইবে চেষ্টাগুলিতে তেমন জোর ছিল না। কিন্তু তাহার জন্য অপরিবর্তনীয় মানসিকতাকে ঢাল বানাইবার যুক্তিটি মানা যায় না। বাইক দুর্ঘটনা রোধ করিবার আইন আছে ঠিকই। কিন্তু তাহার গায়ে রাজনীতি, ধর্ম-সহ নানাবিধ শিকল জড়ানো। নাগরিককে সতর্ক করিবার প্রচার আছে। কিন্তু তাহা সুন্দর সুন্দর ছড়াতেই আবদ্ধ। বিভিন্ন রাস্তায় যে নিয়মিত বাইক প্রতিযোগিতা চলে এবং জিতিবার পর শংসাপত্র ও অর্থ পুরস্কার দিবার বন্দোবস্তও আছে, সেই ফাঁদ সম্পর্কে নাগরিককে সতর্ক করিবার মতো প্রচার চোখে পড়ে না! বরং প্রশ্ন তোলা যাইতে পারে, কড়া নজরদারি ও স্পিডব্রেকার-এর ব্যবহার কলিকাতায় বাইক দুর্ঘটনার সংখ্যা কমাইতে পারিলে অন্যত্র কেন সেই ব্যবস্থার প্রয়োগ করা যাইল না? সত্য ইহাই যে, যথার্থ চেষ্টা করিলে পুলিশ অবশ্যই এই ব্যাধির মোকাবিলা করিতে পারিবে। প্রয়োজন শুধুমাত্র কোনও রং না দেখিয়া দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা এবং অপরাধ ও অপরাধী সম্পর্কিত তথ্য-পরিসংখ্যান নিয়মিত প্রকাশ। বেপরোয়া গতি ইহাতেই কমিবে, কমিতে বাধ্য।

punishment Reckless Driving Reckless Biking Bikes
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy