Advertisement
E-Paper

পথের শেষ?

আত্মসন্তুষ্টির অবকাশ নাই ভারতেরও। যে দেশে এখনও পর্যন্ত কেবল ১৮ শতাংশ মহিলা ঋতুকালীন ন্যাপকিন ব্যবহারের সুযোগ পাইয়া থাকেন, সেই দেশকে এখনও কত পথ অতিক্রম করিতে হইবে, বলা বাহুল্য। চলচ্চিত্র সচেতনতা প্রসারে সাহায্য করিতে পারে, সচেতনতাকে বাস্তব পরিষেবায় বদলাইবার কাজটি প্রশাসনের।

শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৯ ০০:২৫

বিষয়টি ভাবিলেই গা গুলাইয়া উঠে, ফলে ইহার সমর্থনে ভোট দিবার প্রশ্নই নাই। অস্কার কমিটিতে ‘পিরিয়ড, এন্ড অব সেন্টেন্স’ লইয়া ভোটাভুটির সময়ে এক পুরুষ বিচারক তাঁর মতামতে এই কথাগুলি লিখিয়াছিলেন। এই বিশ্বাসও তিনি ব্যক্ত করিয়াছিলেন যে, কোনও পুরুষ বিচারকই এমন ছবিকে জয়যুক্ত করিতে চাহিবেন না। বাস্তবে তেমনটি যে ঘটে নাই, তাহা ইতিমধ্যে সর্বজনবিদিত। অস্কার-মঞ্চে ‘পিরিয়ড’-এর জয় অতএব শুধু চিত্রনির্মাতাদের জয় নহে, শুধু হাপুরের মহিলাদের জয় নহে, ইহা সামগ্রিক ভাবে নারীসমাজের জয়, লিঙ্গবৈষম্য-বিরোধী সংগ্রামের জয়, জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের জয়। উপরিউক্ত পুরুষ বিচারকও এক অর্থে ধন্যবাদার্হ। তিনি আরও এক বার প্রমাণ করিলেন, ঋতুস্রাব সংক্রান্ত ছুতমার্গ এবং পশ্চাৎপদ মানসিকতা কেবল অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশের কুক্ষিগত নহে। ভারতের ছবিকে পুরস্কৃত করিয়া পশ্চিমি বিশ্বের পিঠ চাপড়ানিমূলক আত্মশ্লাঘায় ভুগিবার কারণ নাই।

আত্মসন্তুষ্টির অবকাশ নাই ভারতেরও। যে দেশে এখনও পর্যন্ত কেবল ১৮ শতাংশ মহিলা ঋতুকালীন ন্যাপকিন ব্যবহারের সুযোগ পাইয়া থাকেন, সেই দেশকে এখনও কত পথ অতিক্রম করিতে হইবে, বলা বাহুল্য। চলচ্চিত্র সচেতনতা প্রসারে সাহায্য করিতে পারে, সচেতনতাকে বাস্তব পরিষেবায় বদলাইবার কাজটি প্রশাসনের। এই দুর্ভাগা দেশে প্রশাসন আত্মপ্রচারে যত ব্যগ্র, কাজের কাজ করিতে তত নয়। স্বাস্থ্য ও শিক্ষার অগ্রাধিকার বাজেট বরাদ্দে নাই। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী স্বচ্ছতা অভিযান, শৌচাগার নির্মাণ, বেটি বচাওয়ের মতো প্রকল্প লইয়াছেন, ইহা সত্য। তাঁহার আশিস মাথায় লইয়া বলিউডের নায়ক দুই-দুইখানি ছবি করিয়া বক্স অফিস মাতাইয়াছেন, ইহাও সত্য। তাহার চেয়েও বড় সত্য, প্রকল্প গ্রহণের আত্মপ্রসাদ এবং প্রচারযন্ত্রের ঢক্কানিনাদেই কর্মযজ্ঞের অধিকাংশ ব্যয়িত হইয়াছে। বহু ক্ষেত্রে বরাদ্দ অর্থ গ্রামবাসীদের হাতে পৌঁছানোর আগেই সাবাড়। কোথাও বা শৌচাগার আছে, জলের ব্যবস্থা নাই। হাপুরের যে মেয়েদের ছবিতে দেখা গিয়াছে, তাঁহাদের মধ্যেই দুই জনের গৃহে অদ্যাবধি শৌচাগার নাই।

অস্কার জয়ে এই চিত্রটি পরিবর্তিত হইবে কি? যোগী আদিত্যনাথ-সহ রাজনীতির কারবারিরা পুরস্কারকে বাহবা জানাইতে দেরি করেন নাই। কিন্তু সরকারি কাজকর্মে তাহার প্রতিফলন ঘটিবে কি না, ভবিষ্যৎই বলিবে। শবরীমালায় মহিলাদের প্রবেশাধিকার রুখিতে ব্যস্ত থাকিলে অবশ্য সেই আশা কম। কিন্তু একটি ভরসা আছে। সভ্যতার নিজস্ব গতির ভরসা, যাহার বলে পরিবর্তনের আলোকরেখা নিজেই পথ খুঁজিয়া লয়। আমেরিকার একটি স্কুলের কিছু ছাত্রী এবং তাঁহাদের এক শিক্ষিকা ‘দ্য প্যাড প্রোজেক্ট’ নামের এক প্রকল্প আরম্ভ করিয়াছিলেন, তাহাই ভারতে ‘পিরিয়ড’ ছবিটির পথ প্রশস্ত করিয়াছে। হাপুরের যে মেয়েরা বাড়ির পুরুষদের কাছে ‘ডায়াপার’ বলিয়া এক দিন ‘ন্যাপকিন’ নির্মাণে যুক্ত হইয়াছিলেন, তাঁহারাও সেই পথেরই পথিক। সেই পথই কিছু দিন পূর্বে ‘প্যাড এগেনস্ট সেক্সিজ়ম’-এর ন্যায় আন্দোলনের জন্ম দিয়াছিল। সেই পথই কতিপয় পুরুষের বিবমিষাকে পরাজিত করিয়া অস্কার-মঞ্চে জয়লাভ করিয়াছে। পথের দেবতা হাসিয়া বলিতেছেন, পথ তো তোমার শেষ হয় নাই! শান্তিতে নিদ্রা যাইবার আগে যোজন পথ অতিক্রম করা বাকি।

OSACRS Period End of Sentence
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy