জরুরি অবস্থা ঘোষণার এক ঐতিহাসিক নজির স্থাপন করিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, নিজের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত কার্যকর করিতে। আমেরিকার দক্ষিণে মেক্সিকো সীমান্ত বরাবর একটি প্রাচীর তুলিবার ইচ্ছা তিনি প্রকাশ করিয়াছিলেন ক্ষমতায় আসার পূর্বেই। মেক্সিকো হইতে আগমনকারী অবৈধ অভিবাসীদের রাস্তা বন্ধ করিয়া তিনি আমেরিকাকে ‘সুরক্ষিত’ করিতে চান, এই ছিল বক্তব্য। অভিবাসীদের কারণেই মাদকদ্রব্য এবং অপরাধবলয় আমেরিকায় রমরমাইয়া চলিতেছে বলিয়া তাঁহার সিদ্ধান্ত, সুতরাং অবৈধ অভিবাসীদের আটকাইলেই নাকি সুরক্ষা প্রতিষ্ঠার কাজে আমেরিকা অনেক দূর আগাইয়া যাইবে। গত সপ্তাহে এই লক্ষ্যে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করিলেন ট্রাম্প। প্রসঙ্গত সেই দেশে এই প্রকার বিষয়ভিত্তিক জরুরি অবস্থা ঘোষণার প্রচলন রহিয়াছে, অর্থাৎ দেশের শীর্ষ শাসক যদি কোনও ক্ষেত্রে গুরুতর পদক্ষেপের প্রয়োজন অনুভব করেন, তবে তিনি এই ব্যতিক্রমী অধিকারটি কাজে লাগাইতে পারেন, এবং তদুদ্দেশ্যে আর্থিক বন্দোবস্ত করিতে পারেন। ১৯৭৬ সালে প্রথম এই অধিকার মার্কিন প্রেসিডেন্টের জন্য নির্ধারিত হয়। তাহার পর প্রাক্তন প্রেসিডেন্টরা অনেকেই ইহাকে কাজে লাগাইয়াছেন। উদাহরণস্বরূপ বিল ক্লিন্টন ১৭ বার, জর্জ ডব্লিউ বুশ ১৩ বার এবং বারাক ওবামা ১২ বার ‘ইমার্জেন্সি’র আশ্রয় লইয়াছেন। কিন্তু তাঁহাদের সহিত ট্রাম্পের ঘোষণার পার্থক্য দুইটি ক্ষেত্রে। প্রথমত আগে প্রতিটি ক্ষেত্রেই জরুরি অবস্থা ঘোষণার দরকার পড়িয়াছিল বৈদেশিক সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে। এবং দ্বিতীয়ত, প্রায় সর্বদা মার্কিন কংগ্রেসের রায় প্রেসিডেন্টের মতের পক্ষেই গিয়াছিল।
ট্রাম্পের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি ভিন্ন। হাউস অব কংগ্রেস ইতিপূর্বে তাঁহার মেক্সিকো দেওয়ালের মতটি প্রত্যাখ্যান করিয়াছিল, প্রস্তাবিত অর্থ বরাদ্দ করিতে অসম্মত হইয়াছিল। সেই জন্যই ট্রাম্প জরুরি অবস্থার কথাটি বিবেচনা করেন, কেননা সে ক্ষেত্রে বাঞ্ছিত অর্থের অনেকটাই তিনি পাইয়া যাইবেন সামরিক খাতে বরাদ্দ অর্থ প্রাচীর নির্মাণ খাতে টানিয়া আনিয়া। প্রেসিডেন্টের নিজস্ব একটি বাজেট বরাদ্দও থাকে। জরুরি ঘোষণা স্বীকৃত হইলে ট্রাম্প সেই বাজেটও মেক্সিকো সীমানায় কাজে লাগাইতে পারিবেন।
কিন্তু ট্রাম্পের মনস্কামনা পূর্ণ হইবার পথে বাধা বিস্তর। আপাতত তাঁহার জরুরি অবস্থার সিদ্ধান্ত লইয়া দেশের সুপ্রিম কোর্টে মামলা শুরু হইয়াছে। মামলাটিও ঐতিহাসিক: ‘জাতীয় সঙ্কটকালীন জরুরি অবস্থা’ লইয়া আগে কখনওই মামলা হয় নাই। তদুপরি মামলাটি দীর্ঘ হইবার সম্ভাবনা। সুপ্রিম কোর্ট সাধারণ ভাবে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার প্রসারণ পছন্দ করে না, কেননা তাহা মার্কিন সংবিধানের ‘স্পিরিট’-এর পরিপন্থী। কোনও কারণে ট্রাম্পের এই স্বেচ্ছাচার এক বার আইনি সিলমোহর পাইয়া গেলে মার্কিন সাংবিধানিক ব্যবস্থায় তাহা একটি বিপজ্জনক দৃষ্টান্ত তৈরি করিতে পারে। এবং পরবর্তী কালে বন্দুক-নিয়ন্ত্রণ কিংবা পরিবেশ দূষণ আটকাইবার কাজে ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্টরা এই ভাবেই জরুরি অবস্থা জারি করিতে পারেন। সব মিলাইয়া স্বেচ্ছাচারী শাসক ও সাংবিধানিক গণতন্ত্রের এক ব্যতিক্রমী সংঘর্ষ দেখিতেছে আমেরিকা। দুনিয়ার অন্যান্য গণতন্ত্রের নিকটও এই সংঘর্ষের গতিপ্রকৃতি অত্যন্ত জরুরি ও প্রাসঙ্গিক ঠেকিবার কথা!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy