কাজ পড়িয়া আছে কিন্তু টাকা নাই, এমনই দেখা যায়। টাকা আছে অথচ কাজ মেলে নাই— অভিনব বটে। কৃষি লইয়া এমন বিরল সংকটে পড়িয়াছে মোদী সরকার। আগামী বাজেটে কৃষির বরাদ্দ বাড়িবে, প্রত্যাশিত। প্রয়োজন শুধু রাজনীতির নহে, অর্থনীতির। এই বৎসর খরা বা অতিবৃষ্টির প্রকোপ না থাকা সত্ত্বেও খাদ্যশস্যের উৎপাদন কমিয়াছে। চাষি গম বুনিয়াছে কম। কৃষিতে বৃদ্ধির হার দুই শতাংশ, গত বৎসরের প্রায় অর্ধেক। অতএব কৃষি নীতিতে পরিবর্তন আনিতে হইবে, সংশয় নাই। কিন্তু কোন নীতি, কোন পরিকল্পনা? কী করিলে চাষি ফসলের ন্যায্য দাম পাইবে, ঋণের দায়ে সর্বস্বান্ত হইয়া আত্মহত্যা করিবে না? তিন বৎসর পার করিয়াও কোনও ইঙ্গিত দেয় নাই কেন্দ্র। গত সাধারণ নির্বাচনের পূর্বে বিজেপির প্রতিশ্রুতি ছিল ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দেড়গুণ বাড়াইবার। ক্ষমতায় আসিয়া সে কথা সরকার রাখে নাই, গুজরাতের চাষিরা তাহার সমুচিত জবাবও দিয়াছে। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করিয়াছেন, পাঁচ বৎসরে চাষির রোজগার দ্বিগুণ হইবে। কোন ইন্দ্রজালে?
সরকারি নীতির হদিশ হয়তো বাজেটে মিলিবে। যদি সরকার তৈলবীজ, কাপাস বা ডালশস্যের মতো ফসলের সহায়ক মূল্য বাবদ অধিক টাকা বরাদ্দ করে, তবে বুঝিতে হইবে সংস্কারের পথে না হাঁটিয়া, কেবল বরাদ্দ বাড়াইয়া চাষির ক্ষোভ প্রশমিত করিতে চাহে সরকার। যদি সারের ভরতুকি সরাসরি চাষির ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠাইবার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে, তাহা হইবে সংস্কারের সদিচ্ছার ইঙ্গিত। মধ্যস্বত্বভোগীরা যে সার-বীজ প্রভৃতির জন্য সরকারি সুবিধার অধিকাংশই আত্মসাৎ করিতেছে, এবং সরকার এত দিন তাহা দেখিয়াও তাহার প্রতিকার করে নাই, তাহা প্রকারান্তরে স্বীকার করিবে কেন্দ্র। অন্য দিকে, মধ্যপ্রদেশে ‘মুখ্যমন্ত্রী ভাবান্তর ভুগতান যোজনা’ নামে যে পরিকল্পনাটি লইয়া পরীক্ষা চলিতেছে, রদবদল না করিয়াই সেই ‘মডেল’ গ্রহণ করিলে ব্যবসায়ীর উপর আরও নির্ভরশীল হইয়া পড়িবেন কৃষক। এই পদ্ধতিতে রাজ্য সরকার সহায়ক মূল্য এবং বাজারের মূল্যের মধ্যে পার্থক্য হিসাব করিয়া, তাহা চাষির হাতে তুলিয়া দেয়।
নীতি আয়োগের মস্তিষ্কপ্রসূত এই প্রকল্প গত অগস্ট মাসে ঘোষণার পরেই ব্যবসায়ীরা একজোট হইয়া ফসলের দাম কমাইয়া রাখিয়াছে, অভিযোগ করিয়াছেন মধ্যপ্রদেশের চাষিরা। ব্যবসায়ীদের দুষ্টচক্র নিয়ন্ত্রণ করিতে না পারিলে বিপুল ক্ষতি রাজকোষের, নিশ্চিত লাভ ব্যবসায়ীর, চাষির লাভ অনিশ্চিত এবং তুলনায় সামান্য। কার্যত ইহার ফলে সরকারি টাকা ব্যবসায়ীদের থলিতে ঢুকবে। অপরাপর রাজ্য সরকারের দৃষ্টান্তও সম্মুখে রহিয়াছে। কর্নাটকে সরকার রেশন দোকানের মাধ্যমে গণবণ্টনের জন্য ফের রাগিশস্য কিনিবে বলিয়া ঘোষণা করিয়াছে। রাগি উৎপাদনে জলের প্রয়োজন কম, পুষ্টি চালের তুলনায় অধিক। সরকার কিনিলে তাহার বাজারমূল্যও বাড়িবে। এমন নানা বিকল্পের কোনগুলি বাছিবে কেন্দ্র, তাহার ইঙ্গিত হয়তো বাজেটে মিলিবে। কিন্তু বাজেট বক্তৃতা তাহা বুঝিবার জন্য যথেষ্ট নহে। কৃষির সঞ্জীবনে সরকারি পরিকল্পনা কী, কী করিয়া ২০২২ সালে চাষির রোজগার দ্বিগুণ হইবে, তাহার পথনির্দেশ কৃষিমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীকে বিস্তারিত জানাইতে হইবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy