Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
প্রবন্ধ ১

পথটা খুঁজে পাওয়া দু’পক্ষের কাছেই জরুরি

ভারত-পাক সম্পর্ককে উদ্ধার করতে হলে কতগুলি বন্ধ দরজা খুলতে হবে। পাকিস্তানকে ভাবতে হবে সীমান্ত সন্ত্রাস বন্ধের বাস্তবতা নিয়ে। আর ভারতকে ভাবতে হবে, কাশ্মীরের অর্থ ও ব্যঞ্জনা নিয়ে।জু ন মাসের গোড়ায় কাশ্মীরের গুলমার্গে কী অঝোর বৃষ্টি, হাড়-কাঁপানো ঠান্ডা! বাইরে থাকাই অসম্ভব। স্থানীয় লোক যে যার কাজ শেষ করে, ঝাঁপ বন্ধ করে বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়ে। সন্ধের আগেই সব শুনশান।

বার্তা। কাশ্মীরি তরুণদের ভারত-বিরোধী বিক্ষোভ, শ্রীনগর, ২১ অগস্ট। এএফপি

বার্তা। কাশ্মীরি তরুণদের ভারত-বিরোধী বিক্ষোভ, শ্রীনগর, ২১ অগস্ট। এএফপি

সেমন্তী ঘোষ
শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৫ ০০:২৯
Share: Save:

জু ন মাসের গোড়ায় কাশ্মীরের গুলমার্গে কী অঝোর বৃষ্টি, হাড়-কাঁপানো ঠান্ডা! বাইরে থাকাই অসম্ভব। স্থানীয় লোক যে যার কাজ শেষ করে, ঝাঁপ বন্ধ করে বাড়ির মধ্যে ঢুকে পড়ে। সন্ধের আগেই সব শুনশান। সীমান্ত পার হয়ে বাইশ ঘণ্টার রাস্তা পেরিয়ে সেই সময়েই গুলমার্গে এসে পৌঁছয় মহম্মদ ইয়াকুব নাভেদ, দুই মাস পর ভারতীয় সেনার হাতে ধরা পড়ার পর যে নির্বিকার মুখে নিজেই নিজের পরিচয় দেয়: পাকিস্তানি জঙ্গি। নাভেদের মুখ থেকেই জানা যায়, তার সঙ্গে আরও দুই জন সঙ্গী ছিল, লস্কর-এ-তইবার মহম্মদ ভাই আর আবু ওকাসা। দেশ জু়ড়ে এখন এই দু’জনের জন্য চুলচেরা তল্লাশি চলছে।

এতটা সময় ধরে এত কঠিন পরিস্থিতিতে এ ভাবে লুকিয়ে থাকা যায়, কোনও সাহায্য ছাড়া? অথচ গত সাত দশক ধরে সীমান্ত পেরিয়ে কত অবলীলায় অনবরত জঙ্গিপ্রবেশ চলছে, কত সহজে তারা মিশে যাচ্ছে জনস্রোতে। কাশ্মীরের মানুষের সাহায্য ছাড়া কি সম্ভব হত এই পারাপার? কাশ্মীরিদের আলাপ, বিলাপ, সংকট, বিক্ষোভের সঙ্গে যখন জুড়ে যায় শ্রীনগর বা তার শহরতলির রাস্তায় ল্যাম্পপোস্ট বা বাড়ির বারান্দা থেকে ইতস্তত ঝুলন্ত পাকিস্তানি পতাকার ছবি, বুঝতে অসুবিধে হয় না নাভেদদের আশ্রয় পাওয়ার পরিবেশটা ভূস্বর্গ উপত্যকায় কতটাই জোরদার। ভারত তার উত্তর সীমান্তের প্রদেশটির উপর সার্বভৌমত্বের দাবিতে এককাট্টা থাকতেই পারে, কিন্তু বাস্তব হল, কাশ্মীরের মনটা কিন্তু অবধারিত ভাবে পাকিস্তান-প্রবণ হয়ে গিয়েছে, তাকে পুরোপুরি পাল্টানোর আশা বাতুলতা। পাকিস্তানের প্রতি কাশ্মীরের এই গভীর আগ্রহ আর সন্ত্রাসের প্রতি প্রচ্ছন্ন সমর্থনে ভারতীয় হিসেবে আমাদের রাগ দুঃখ হতাশা হতেই পারে। কিন্তু তবু, সত্যিটা, অর্থাৎ কাশ্মীর প্রশ্নে পাকিস্তানের প্রাসঙ্গিকতা, মেনে নিলেই ভাল। বালিশে মুখ গুঁজে থাকলেই বাইরে প্রলয় বন্ধ হয় না।

তিন নম্বর চেয়ার

এ বারও ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা বৈঠক বাতিল হয়ে যাওয়ার যদি একটি কোনও কারণ থাকে, তার নাম কাশ্মীর। গত কয়েক দশক ধরে দুই দেশ একই গাড্ডায় পড়ে আসছে, কখনও এ ওকে ফেলছে, কখনও ও একে। ২০১৫-র অগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে যা ঘটল, ২০১৪-র অগস্টের তৃতীয় সপ্তাহেও ঠিক তাই ঘটেছিল: পাক হাইকমিশনারের সঙ্গে কাশ্মীরের হুরিয়ত নেতাদের মিলিত হওয়ার জন্য দ্বিপাক্ষিক বৈঠক বাতিল হয়ে গেল। পাকিস্তানই এ বার বাতিলের সিদ্ধান্ত নিল। তার বক্তব্য, পাক প্রতিনিধি কার সঙ্গে কথা বলবেন, কখন বলবেন, সেটাকে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার শর্ত করে ভারত অন্যায় করছে। ভারতের বক্তব্য, দুই সার্বভৌম দেশের মধ্যে আলোচনা যখন, তখন হুরিয়তের মতো বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে কথাবার্তা কেন? বৈঠকের আগেই বা সেই কথা কেন? পাকিস্তানের উত্তর, সন্ত্রাসের কথায় কাশ্মীর প্রসঙ্গ উঠবেই। ভারত যদি ভাবে ‘কে-ওয়ার্ড’ অর্থাৎ কাশ্মীরকে বাদ দিয়েই পাকিস্তানের সঙ্গে সার্থক আলোচনা সম্ভব, সে বোকামি করছে, কিংবা বোকা বানানোর চেষ্টা করছে। উত্তরে ভারতের শেষ কথা: ‘কে-ওয়ার্ড’ বা কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যা, তা নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে আলাপের প্রশ্ন নেই। পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার কেবল সন্ত্রাস নিয়ে।

দুই দিকেই যুক্তি আছে, কিন্তু তার চেয়েও বেশি আছে ইগোর পাহাড়। এই পাহাড় ভেঙে যদি পথ বানাতে হয়, কথোপকথন যদি জরুরি হয়, এবং সন্ত্রাস প্রশ্নেই জরুরি হয়— তা হলে বলতেই হবে, পাকিস্তানও যেমন হুরিয়ত এবং কাশ্মীর নিয়ে বাড়াবাড়ি করছে, ভারতও কিন্তু নিজেকে ভুল বোঝাচ্ছে। ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কে সত্যিই কি কাশ্মীরের একটা বিশেষ গুরুত্ব নেই? সন্ত্রাসের সঙ্গে, জঙ্গি অনুপ্রবেশের সঙ্গে কাশ্মীরের কি কোনও যোগ নেই? কেবল ভারতীয় অঙ্গরাজ্য হিসেবে আরও আরও প্রচার করলেই কি কাশ্মীরের পাকিস্তান-প্রবণতার অসুখটা সেরে যাবে? আসল কথা, কাশ্মীর এবং তার প্রধান ও জনপ্রিয় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন হুরিয়তের সঙ্গে একটা ‘এনগেজমেন্ট’ না করে ভারতের উপায় নেই। অথচ, ভারতের মুশকিল, সে নিজেও তা করবে না, পাকিস্তানের সঙ্গে বৈঠকে এই ‘এনগেজমেন্ট’-এর প্রয়োজনের কোনও স্বীকৃতিও দেবে না।

ব্যাপারটা যদি এ ভাবে ভাবা যায় যে, ভারত-পাকিস্তান বৈঠকের টেবিলে দুটি চেয়ার থাকবে, না তিনটি চেয়ার— ভারত দুই-এর পক্ষে, পাকিস্তান তিন-এর। আচ্ছা, পষ্টাপষ্টি দুই বা তিন ছাড়া আর একটা সমাধানও কি হতে পারে না? ঘরের ভেতর না-হয় দুটি চেয়ারই থাকুক। তিন নম্বর চেয়ারটি ঘরের মধ্যে না রেখে (সেটা সত্যিই দৃষ্টিকটু, আন্তর্জাতিক বৈঠক বলে কথা), ঘরের বাইরের চাতালে পাতা থাক। — ভারত না চাইলেও তো তিন নম্বর চেয়ারটা আজ সাত দশক ধরে ওই চাতালেই পাতা আছে, কিছুতেই সেটাকে ওঠানো যায়নি, সরানো যায়নি। জোরাজুরির মধ্যে না গিয়ে বরং চাতালের চেয়ারটার কথা মাথায় রেখেই ঘরের চেয়ারদুটোর মধ্যে কথাবার্তা হোক। কে কী চায়, কার পক্ষে কতটা কী করা সম্ভব, খোলাখুলি শোনা যাক। সত্যিই তো, কাশ্মীরিরা নিজেরাই যদি নাভেদদের সন্ত্রাসকে আশ্রয় দিতে চায়, পাকিস্তানের পতাকা উড়িয়ে দিল্লিকে বার্তা দিতে চায়, সেই বার্তা আর কত দশক ধরে না-শোনার ভান করা সম্ভব?

অন্য ভাবে ভাবতেই হবে। এই মাসে দিল্লিতে ভারতের অজিত দোভাল এবং পাকিস্তানের সরতাজ আজিজের কথা হল না ঠিকই। কিন্তু পরের বছর জানুয়ারিতেই নরেন্দ্র মোদীকে হয়তো ইসলামাবাদে যেতে হবে। এ বার সার্ক মিটিং সে দেশে হওয়ার কথা। মোদী কথা দিয়েছেন, যাবেন। সেই কথা তিনি ফিরিয়ে নেবেন বলে মনে হয় না। ইসলামাবাদ গেলে, অটলবিহারী বাজপেয়ীর পর তিনিই হবেন পরবর্তী পাক-সফরকারী প্রধানমন্ত্রী: মনমোহন সিংহ দশ বছরে এক বারও সেখানে পা রাখার সুযোগ পাননি। (মেয়াদের শেষ দিকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ব্যাকুল হয়েছিলেন এক বার পাক পঞ্জাবে জন্মভিটেটি দেখে আসার জন্য, পাকিস্তান তাঁকে স্বাগতও জানিয়েছিল, কিন্তু ভারতীয় পক্ষের গড়িমসিতে দশ বছরের প্রধানমন্ত্রীর সেই সফর আর হয়ে ওঠেনি।) সুতরাং, সাম্প্রতিক চাপান-উতোর শেষ হলেই সম্ভবত আবার দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা শুরু করবে দিল্লি, প্রধানমন্ত্রী মোদী যাবেন বলে কথা!

এমনিতেও অবশ্য, বিজেপি ক্ষমতায় থাকলে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের ব্যাপারে কয়েক পা এগোনোর চেষ্টা হয়, কেননা বিজেপি-র জাতীয়তাবাদ, বিজেপি-র পাক-বিদ্বেষ এমনই সর্বজনস্বীকৃত যে তার পাক-নীতির বিরোধিতা করে তুফান তোলার মতো কেউ থাকে না। এ বারও লক্ষণীয়, এত যে গুরদাসপুর-উধমপুর সন্ত্রাস, এত নাভেদ-বৃত্তান্ত, ইসলামাবাদের তরফে দাউদ-প্রশ্নে এত ঝুড়ি ঝুড়ি মিথ্যে, এতেও কিন্তু শেষ পর্যন্ত মোদী সরকারের পক্ষ থেকে বৈঠক বাতিল করা হয়নি, হয়েছে পাকিস্তানের পক্ষ থেকেই। ইউপিএ ক্ষমতায় থাকলে হয়তো এর অনেক আগেই ভারতকে বিরোধী চাপে পিছিয়ে আসতে হত। তাই, পথ এখন বন্ধ হয়ে আছে ঠিকই, কিন্তু পথ আবারও খুলবে। কিন্তু সেই পথের কোনও দিশা থাকবে না যদি সার্বভৌমতার অভিমান আর আন্তর্জাতিক গুরুত্বের ইগো আবারও খাদে গিয়ে নামায়। তাই মনে হয়, এই বেলা কাশ্মীর বা হুরিয়ত প্রসঙ্গে একটু অন্য ভাবে ভাবলে খুব ভাল হত! কাশ্মীরের সঙ্গে বৈঠকে পাকিস্তানকে না ঢোকালেও, পাকিস্তানের সঙ্গে বৈঠকে কাশ্মীরের জন্য (বাইরে) একটা চেয়ার রাখাই যেত। তা হলে অন্তত বৈঠকটা শেষ অবধি হত। বৈঠক অর্থাৎ দ্বিপাক্ষিক কথাবার্তার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে তো দিল্লিতে তেমন ধোঁয়াশা নেই বলেই মনে হয়।

সবুজ সংকেত

দ্বিপাক্ষিক কথাবার্তার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে পাকিস্তানেও সচেতনতা এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি। যে ভাবে এনএসএ বৈঠক বাতিল করল তারা, তাতে এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে যে ইচ্ছে করে হুরিয়ত নিয়ে বাড়াবাড়িটা করা হল, বৈঠক ভেস্তে দেওয়ার জন্যই। প্রতি বারই বৈঠকের আগে জেদাজেদি শুরু হয়, এও ঠিক। তবু, ২০১৫ সালে কিন্তু পরিস্থিতি অন্য রকম। পাক রাজনৈতিক মহলের একাংশ বোধহয় ক্রমেই ভারতের সঙ্গে সমঝোতায় উৎসাহী হয়ে উঠছে। এটা সম্পূর্ণতই অনুমান। তবু অনুমানও তো এক রকমের যুক্তি।

কোথা থেকে এল এই অনুমান? এর প্রথম ভিত্তি, উফা বৈঠকে দুই দেশের জয়েন্ট স্টেটমেন্টটি। এর উপর নির্ভর করেই গত রবিবারের এনএসএ বৈঠকটি আহূত হয়েছিল। নওয়াজ শরিফ হাসিমুখে সই করেছিলেন তাতে। অথচ স্টেটমেন্টটা ভাল করে পড়লে মনে হবে, দিল্লিই যেন সেটা লিখে দিয়েছে, শব্দচয়ন এতটাই ভারতের শর্তানুযায়ী ও স্বার্থানুযায়ী। একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। —স্টেটমেন্ট বলেছিল, কেবল সন্ত্রাস প্রশ্নেই আলোচনা হবে, আর কিছু নয়। এখন, এই ‘আর কিছু’র মানে কী? কাশ্মীর, স্যর ক্রিক আর সিয়াচেন গ্লেসিয়ার। পাকিস্তানের অনেক দিনের দাবি, সন্ত্রাসের সঙ্গে এই তিনটি জিনিসকে মেলানো। অথচ উফায় কিন্তু তিনটিকেই ছেড়ে আলোচনায় রাজি হয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী শরিফ। পাক মিলিটারির সবুজ সংকেত ছাড়া এত বড় পদক্ষেপ কোনও পাক প্রধানমন্ত্রী নিতে পারেন কি? মনে হয় না। সে ক্ষেত্রে পাক মিলিটারিও নিশ্চয়ই সে দিন তাঁকে ‘গো-অ্যাহেড’ দিয়েছিল!

আর একটা সম্ভাবনাও আছে। শরিফ সে দিন নিজের মর্জিমতো চুক্তি করেছিলেন, দেশে ফিরে মিলিটারির কোপে পড়লেন। বাস্তবিক, উফা থেকে ফিরে রাওয়ালপিন্ডিতে তাঁকে নাকি খানিক যুক্তি-তক্কো করতে হয়েছিল। কিন্তু, লক্ষণীয়, তার পর প্রায় দেড় মাস কেটেছে, কিন্তু এনএসএ বৈঠকের প্রস্তাব খারিজ হয়নি। অর্থাৎ শরিফের পক্ষ থেকে বিপক্ষকে যথেষ্টই বোঝানো গিয়েছিল। শেষ দিন যদি হুরিয়ত-প্রসঙ্গে ভারত একটু নমনীয় হয়ে যেত, বৈঠক হয়েই যেত এত দিনে। পাকিস্তানের এই সব সূত্র থেকে মনে হয়, হয়তো রাওয়ালপিন্ডির মধ্যে বেশ খানিকটা দ্বিমত আছে ভারত প্রসঙ্গে। কেউ কেউ আগের কট্টর-নীতিতেই বিশ্বাসী, আবার কেউ কেউ হয়তো খানিক ভিন্ন পথে ভাবছেন। উফার বৈঠকের পর পাক রাজনৈতিক মহলে প্রধানমন্ত্রী শরিফের একটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হয়: ভারতের সঙ্গে মূল লাইন ধরে যদি কথাবার্তা একটু এগোনো গেলে কাশ্মীর বা সিয়াচেন-এর মতো প্রশ্ন নিয়ে নিরাপত্তা উপদেষ্টারা পরবর্তী পর্যায়ে বসতে পারেন। গত এক মাসে সে দেশে এ নিয়ে যে এত আলোচনা হয়েছিল, আমাদের অনুমানের দ্বিতীয় ভিত্তি এটাই।

এ বার প্রশ্ন, পাকিস্তানে নির্বাচিত সরকারের যদি-বা ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণে উৎসাহ থাকে, পাক মিলিটারির মতো দুঁদে প্রতিষ্ঠান কেন আদৌ এতে আগ্রহী হবে? স্বার্থই তো শক্তি। ভারতের সঙ্গে ‘নর্মালাইজেশন’-এ তাদের কোন্ স্বার্থ থাকতে পারে? অনুমান: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৪-এর পর থেকে তাদের স্বার্থভাবনা কিছু পাল্টেছে। গত শীতের সেই সকালে পেশাওয়ারের আর্মি পাবলিক স্কুলে ন’জন তালিবান জঙ্গির উন্মত্ত গুলিবৃষ্টিতে ১৫০ জন মারা যায়, যার মধ্যে ১৩৪টিই বাচ্চা। গোটা আর্মি যেন পুত্রশোকের ধাক্কা খায়। পাকিস্তান বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টফ জাফ্রেল’র মতে, তার পর থেকেই আর্মির একটা মানসিক পরিবর্তন আসে, যাকে বলা যায়— প্রায়রিটাইজেশন বা লক্ষ্যের অগ্রাধিকার। অন্য সব দেশের থেকে পাকিস্তানেই সন্ত্রাস সবচেয়ে বেশি রক্তক্ষরণ ঘটাচ্ছে, ‘জিরো টলারেন্স ফর মিলিটান্সি’ নীতি ছাড়া গতি নেই, এ কথা ঘোষিত হয়। সংবাদ-মাধ্যমে বিবৃতি ও সাক্ষাৎকারে পাক আর্মি জেনারেলরা স্পষ্ট বলেন, পূর্ব সীমান্তে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ এখন বিলাসিতা, যা কিছু অপারেশন, সব এই মুহূর্তে উত্তর ওয়াজিরিস্তানে হওয়া উচিত। সাংবাদিক আয়েশা সিদ্দিকা ও জাহিদ হোসেন সম্প্রতি অনেক লিখেছেন এ নিয়ে।

অনুমানের সুতো ধরে আর টানাটানি না করে বলা যাক, এই মুহূর্তে প্রবল বেগে দ্বিপাক্ষিক ফোঁসফোঁসানি চললেও, দুই দিক থেকেই পথ আবার খুলবে, দুই দিকের উৎসাহেই খুলবে। সেই সময়টুকুর মধ্যে একটু অন্য ভাবে ভাবা গেলে ভাল। ‘ভারত-পাক সম্পর্ক একই দুষ্টবৃত্তে ঘোরে, তাই একই বৃত্তে চিরকাল ঘুরবে,’ এই ‘টটোলজি’ বা পুনরুক্তি-ফাঁদ থেকে বেরোনোর তাগিদে পাকিস্তানকে ভাবতে হবে সীমান্ত সন্ত্রাস বন্ধের বাস্তবতা নিয়ে। আর ভারতকে ভাবতে হবে, কাশ্মীরের অর্থ ও ব্যঞ্জনা নিয়ে। বৈঠকের ওই (প্রচ্ছন্ন) তৃতীয় আসনটি নিয়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE