এই মুহূর্তে যাহা সিরিয়াতে ঘটিতেছে, তাহা যদি ভীতিপ্রদ হয়, তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় যাহা করিতেছে তাহা নিশ্চিত ভাবে বিপদপ্রদ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কি বুঝিতে পারিতেছেন যে, খামখা তিনি বিশ্বের বিপদমাত্রাটি কয়েক গুণ চড়াইয়া দিতেছেন? সিরিয়ায় রাসায়নিক গ্যাস ছাড়িয়া এতগুলি মানুষকে মারিবার ঘটনা ভয়ের শিহরন জাগায়, যেন হলোকস্টের আতঙ্ক ফিরাইয়া আনে। সিরীয় প্রেসিডেন্ট আসাদ ঠিক কী চাহেন বুঝা মুশকিল, কোন পথে সংকটের সমাধান তাহাও বুঝা মুশকিল। কিন্তু এইটুকু বুঝিতে কষ্ট নাই যে গ্যাসের পাল্টা হিসাবে মিসাইল বর্ষণ মানুষকে কোনও স্বস্তি দিতে পারিবে না, বরং জীবনযাপন অসহনীয়-তর করিয়া তুলিবে। যে হতভাগ্য শিশুগুলি রাসায়নিক গ্যাসের শ্বাসরোধের হাত হইতে কোনও মতে বাঁচিয়াছে, বিমানহানা ও অগ্নিসংযোগে তাহাদের মৃত্যুর ব্যবস্থা করিলে সমস্যার সুরাহা হইবে না। সিরিয়ার দুর্ভাগা ধ্বংসশ্রান্ত মানুষগুলিকে সত্যই সাহায্য করিতে হইলে অন্য পথ কাম্য। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তেমন পথ ভাবিতে অক্ষম হইতেই পারেন। প্রেসিডেন্ট ওবামা কিংবা প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনরাও নিকট অতীতে তাহা ভাবিয়া উঠিতে পারেন নাই বলিয়াই সিরিয়ার সংকট আজ এমন প্রতিরোধহীন স্তরে পৌঁছাইয়াছে। কিন্তু ভাবিতে অক্ষম হইলেই কয়েকটি মিসাইল ক্ষেপণ ও যুদ্ধবিমান প্রেরণ করিয়া পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করিব, এই দুর্বুদ্ধি বিপজ্জনক।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাজকর্মের অর্থ বোঝা দুষ্কর। নির্বাচনের আগে বিশ্বমঞ্চ হইতে মার্কিন দেশকে সরাইয়া আনিবার হাজারো প্রতিশ্রুতির পর ক্ষমতালাভের পাঁচ মাসের মধ্যে মার্কিন দেশের সিরীয় নীতির এই আকস্মিক মোড় পরিবর্তনও দুর্বোধ্য। কেবল এক ভাবেই তাহা বোধ্য হইতে পারে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর এখনও পর্যন্ত ডোনাল্ড ট্রাম্প পায়ের তলায় রাজনৈতিক জমি পান নাই। সমর্থকরাও বিভ্রান্ত বোধ করিতেছেন, কোন দিক দিয়া তাঁহাদের সমর্থন-প্রবাহটি বহাইবেন বুঝিতে না পারিয়া। ফলে আপাতত ব্যর্থতা হইতে দৃষ্টি সরাইয়া আনিয়া দেশপ্রেম বা জাতীয়তাবাদের কালপরীক্ষিত ধুয়াটিকে চাপিয়া ধরিলে হয়তো একটু স্বস্তির হাঁফ ছাড়া যায়। সিরিয়া সেই দিক দিয়া অতি উপযুক্ত। মিসাইল জাতীয়তাবাদের তির অব্যর্থ ছুড়িবার জন্য ইহার অপেক্ষা ভাল লক্ষ্য আর কী-ই বা হইতে পারে!
আক্রমণের সঙ্গেই আসে প্রতি-আক্রমণ। মার্কিন হানার সঙ্গে সঙ্গে রাশিয়ার গর্জন-তর্জন শুরু হইয়াছে। বিশেষত মার্কিন অভিযোগ যে রুশ প্রেসিডেন্টের মদতেই আসাদ এত দূর যাইবার সাহস পাইয়াছেন রাশিয়াকে আরও ক্রুদ্ধ করিয়াছে। সিরিয়ায় আবার হানা ঘটিলে রাশিয়া কঠোর প্রতি-আক্রমণ শানাইবে, এই হুমকিও আসিয়াছে। পশ্চিম এশিয়ার সংকটকে আমেরিকা অবধি টানিয়া লইবার পরিকল্পনা থাকিলে আলাদা কথা। কিন্তু অবিবেচনা, অপ্রস্তুতি, অপরিণামদর্শিতার কারণেই যদি কূটনৈতিক সংকটের বাড়বাড়ন্ত হয়, তবে তাহা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। মার্কিন প্রেসিডেন্টের পদটি কিন্তু কোনও কোম্পানির বড়কর্তার আসন নয়। ভূবিশ্বের সবটাকেই প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে যে আসন, তাহার জন্য প্রথম ও প্রধান শর্ত হইবার কথা ছিল— কাণ্ডজ্ঞান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy