Advertisement
০৪ ডিসেম্বর ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

সহায়তার মূল্য

নরেন্দ্র মোদী সরকারের অধিকাংশ উদ্যোগ মুনিশ্রাদ্ধের ন্যায়। আড়ম্বরে তাহার সূচনা, সমাপ্তি সামান্য প্রাপ্তিতে। ফসলের সহায়ক মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণাটিও অনুরূপ। কৃষকের বিপুল সঙ্কটের ইহাই কি সমাধান?

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৮ ০০:০১
Share: Save:

নরেন্দ্র মোদী সরকারের অধিকাংশ উদ্যোগ মুনিশ্রাদ্ধের ন্যায়। আড়ম্বরে তাহার সূচনা, সমাপ্তি সামান্য প্রাপ্তিতে। ফসলের সহায়ক মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণাটিও অনুরূপ। কৃষকের বিপুল সঙ্কটের ইহাই কি সমাধান? সরকারি দর পূর্বের তুলনায় কিঞ্চিৎ অধিক বাড়িলে চাষির লাভ কতটুকু? ধান-গম ভিন্ন অন্যান্য ফসলের সরকারি ক্রয় সামান্য। ডালশস্য, তৈলবীজ প্রভৃতি সংরক্ষণ-বণ্টনের পরিকাঠামোই নাই। এই মুহূর্তে কেন্দ্রীয় সরকারের নানা গুদামে পঞ্চান্ন লক্ষ টন ডালশস্য পড়িয়া আছে। চাষির রোষ প্রশমিত করিতে উদ্বৃত্ত ডাল কিনিলেও, বিক্রয় করিতে পারে নাই সরকার। সরকারি ক্রয় সত্ত্বেও বাজারে ডালের দাম বাড়ে নাই। সরকারি দরের সহিত বাজারদরের পার্থক্য চাষির নিকট পৌঁছাইবার চেষ্টাও করিয়াছিল সরকার। মধ্যপ্রদেশে পরীক্ষাধীন সেই প্রকল্পটি এখনও ত্রুটিমুক্ত হয় নাই। তাই ডাল, সয়াবিন, সরিষা, আখ প্রভৃতির সহায়ক মূল্য এই ফসলগুলির বাজারদরে প্রভাব ফেলিতে পারে না। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য চাষির সঙ্কট দূর করিতে পারিবে না, যদি না রাজ্যগুলি অভূতপূর্ব হারে ফসল ক্রয় করিতে পারে।

কৃষকের হতাশার কারণ আরও আছে। সহায়ক মূল্য নির্ধারিত হয় উৎপাদন ব্যয়ের উপর। তাহার মধ্যে পারিবারিক শ্রম এবং বিবিধ বিনিয়োগ ধরিবার সুপারিশ করিয়াছিল স্বামীনাথন কমিটি। চাষিরাও তাহাই দাবি করেন। কেন্দ্র এ বারও তাহা মানে নাই। বিরোধী দলগুলিও ক্ষুব্ধ। কংগ্রেসের দাবি, ইউপিএ জোট আরও অধিক হারে সহায়ক মূল্য বাড়াইয়াছিল। এই বক্তব্যের সত্যতা যাহাই হউক, ইহাও সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের একটি উদাহরণ। সহায়ক মূল্য কোন সরকার কত বেশি বাড়াইয়াছে, প্রশ্ন তাহা নহে। সহায়ক মূল্য কৃষকের প্রয়োজন হইতেছে কেন, সে প্রশ্নটি করিতে হইবে। সরকারকে কৃষিপণ্যের ক্রেতা সাজিয়া বাজার নিয়ন্ত্রণ করিতে হয় কেন? কেন সারে-বিদ্যুতে ভর্তুকি পাইয়াও চাষি বাজার ধরিতে পারে না? কেন আজও অধিকাংশ চাষির নিকট কৃষি অলাভজনক? কেন বিদেশের বাজার ধরিতে ভারতের চাষি অক্ষম? তাহার কারণ কৃষিকাজ ও কৃষিজমির পরিকাঠামোয় অনুন্নয়ন। দেশের অর্ধেক জমিতে সেচ নাই। কৃষিজমি যথাযথ নথিভুক্তির ব্যবস্থা নাই। ঠিকা চাষের আইনে পরিবর্তন হয় নাই। কৃষিপণ্য পরিবহণ ও সংরক্ষণের পরিকাঠামো নাই। ফসল প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাত করিবার উপায় নাই চাষির হাতে।

এই মৌলিক সমস্যাগুলি পরিচিত। এগুলির প্রতিকারে সুষ্ঠু নীতি প্রণয়নে কেহ উৎসাহী হয় নাই। কখনও সহায়ক মূল্যে বৃদ্ধি, কখনও কৃষিঋণ মকুব, এমন আপৎকালীন ব্যবস্থায় কাজ চলিতেছে। কৃষিঋণের দীর্ঘমেয়াদি অপকারিতা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট। সহায়ক মূল্যের কার্যকারিতা লইয়াও প্রশ্ন উঠিয়াছে। সহায়ক মূল্য বাড়াইলে মূল্যস্ফীতি বা়ড়িবে। খাদ্য নিরাপত্তা আইনের অধীনে গণবণ্টনের জন্য চাল-গম কিনিতে সরকারের ব্যয় বাড়িবে। অথচ ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষির লাভ বাড়িবে কি না, কী প্রকারে বাড়িবে, স্পষ্ট নহে। এ সকল প্রশ্ন সরকারকে বিচলিত করিতে পারে নাই। চারটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন আসিতেছে, তাহার তিনটিই কৃষিপ্রধান— রাজস্থান, ছত্তীসগঢ় ও মধ্যপ্রদেশ। রাজকোষের টাকা কিছু অধিক বিতরণ করিয়া যদি ভোট-বৈতরণি পার হইয়া যাওয়া যায়, বৃহৎ সংস্কারের জন্য মাথা ঘামাইয়া কাজ কী?

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi PM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy