Advertisement
E-Paper

জরুরিতর

যে বাজারে বিজেপির বিধায়ক প্রকাশ্যেই শুজাত বুখারির হত্যাকাণ্ডের উদাহরণটি টানিয়া সাংবাদিকদের সীমা না ছাড়াইবার হুমকি দেন, সেখানে কেহ জরুরি অবস্থায় সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে?

শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৮ ০১:১৬

দুষ্ট লোকে বলিবে, অরুণ জেটলি সচেতন ভাবেই ব্লগটি লিখিয়াছেন। দিল্লির ক্ষমতার অলিন্দে দীর্ঘ দিনের গুজব, মোদী-শাহের জমানায় জেটলি কিঞ্চিৎ কোণঠাসা। ফলে, নরেন্দ্র মোদীকে খানিক অপ্রস্তুত করিবার লোভ তিনি সামলাইতে পারেন নাই। নচেৎ, যে বাজারে বিজেপির বিধায়ক প্রকাশ্যেই শুজাত বুখারির হত্যাকাণ্ডের উদাহরণটি টানিয়া সাংবাদিকদের সীমা না ছাড়াইবার হুমকি দেন, সেখানে কেহ জরুরি অবস্থায় সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে? যেখানে নোট বাতিলের পরে পরেই অমিত শাহের ব্যাঙ্কে বিপুল পরিমাণ বাতিল নোট জমা প়ড়িবার সংবাদ প্রকাশ করিয়াও অতি দ্রুত তাহাকে ওয়েবসাইট হইতে সরাইয়া দিতে হয়, সেখানে কেহ রাজনৈতিক ভয়ে সত্য-মিথ্যা গুলাইয়া যাইবার কথা বলে? তবে, অন্য সম্ভাবনাও আছে। কংগ্রেসের ষাট বৎসর যতগুলি অন্যায়ের সাক্ষী ছিল, হিসাব বলিবে, নরেন্দ্র মোদীর চার বৎসরে পাপের সংখ্যা তাহার তুলনায় কম নহে। ফলে, ২০১৪ সালে কংগ্রেসকে আক্রমণ করিবার জন্য যতগুলি অস্ত্র বিজেপির হাতে ছিল, ২০১৮-তে আসিয়া তাহার অধিকাংশই ধার হারাইয়াছে। ‘জরুরি অবস্থা’র অস্ত্রটিও যে পড়িয়া নাই, এই কথাটি বিজেপি বুঝিতে নারাজ। কেন? হয়তো নরেন্দ্র মোদী কখনও জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন নাই বলিয়া। সেই অস্ত্র প্রয়োগের ব্যাকুলতা হইতেই তাহারা জরুরি অবস্থা চলাকালীন কারাবন্দিদের সংবর্ধনা দেওয়ারও সিদ্ধান্ত করিয়াছে। অর্থাৎ, ‘অচ্ছে দিন’-এর প্রতিশ্রুতি উবিয়া গিয়া পড়িয়া থাকিল শুধু অন্যায়ের তুল্যমূল্য তর্জা। উন্নয়নই বটে।

জেটলি তাঁহার ব্লগে হিটলারের প্রসঙ্গ টানিয়াছেন। আরও একটি স্বেচ্ছা-আত্মঘাতী গোল? তিনি কি জানেন না, হিটলার আসিলে গোলওয়ালকরও আসিবেন, তাঁহার নাৎসি-প্রীতিও আসিবে, জার্মানিতে ইহুদিদের ন্যায় ভারতে মুসলমানদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক করিয়া রাখিবার বাসনার কথাও আসিবে? না কি, তিনি ইহা জানেন না যে হিটলারের কর্তৃত্ববাদী শাসনের সহিত নরেন্দ্র মোদীর চালচলনের মিলটি পরম ভক্তেরও চোখ এড়ায় না? সংবিধানের মূল সুরকে অস্বীকার করিবার অভিযোগ? নরেন্দ্র মোদীর জমানা ভারতীয় সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রটিকে মুছিয়া দিতে উদ্যত, এ হেন অভিযোগ জেটলিও নিশ্চয় বহু বার শুনিয়াছেন। বস্তুত, সেই প্রশ্নগুলি যাঁহারা করিতেন, তাঁহাদের অনেকেই আর বাঁচিয়া নাই। কালবুর্গি হইতে গৌরী লঙ্কেশ, এই জমানায় অনেক প্রতিবাদী স্বরকেই চুপ করাইয়া দেওয়া গিয়াছে। প্রধান চৌকিদার টুঁ শব্দটিও করেন নাই। ঘোষণা না করিয়াও যে জরুরিতর অবস্থা জারি করা যায়, নরেন্দ্র মোদী তাহা প্রমাণ করিয়া দিয়াছেন। এই জমানায় ক্ষমতাবানদের প্রশ্ন করিলেই মানহানির মামলা ঠুকিয়া দেওয়া হয়। প্রবীণ সাংবাদিকের বাড়িতে ভোররাত্রে হানা দেয় সিবিআই। ট্রোল-আর্মি ছিঁড়িয়া খায় সাহসী সাংবাদিকদের। কোনও অসরকারি সংস্থা ক্ষমতাকে প্রশ্ন করিলে বন্ধ হইয়া যায় তাহার টাকা পাইবার পথ। ১৯৭৫? নরেন্দ্র মোদীর চার বৎসরের তুলনায় তাহাকেও নেহাত নির্বিষ ঠেকিতে পারে। অনুমান করা চলে, এই কথাগুলি অরুণ জেটলিও জানেন। কথাগুলি যাহাতে আরও এক দফা আলোচিত হয়, তাহা নিশ্চিত করিতেই তাঁহার ব্লগটি লেখা, এমন কথা দুর্জনে বলিতেই পারে।

Arun Jaitley BJP Media Blog
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy