Advertisement
E-Paper

আশার আলো

এই দায়বদ্ধতা ক্ষণস্থায়ী নয়, চিরস্থায়ী হওয়া প্রয়োজন। রোগপ্রকোপিত দীপাবলিতে প্রশাসনের সক্রিয়তা ও নাগরিকের আচরণ এই সম্ভাবনা প্রমাণ করিয়াছে যে, চাহিলে পারা যায়।

শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২০ ০২:৩৭
—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

কলিকাতা করিয়া দেখাইল। হাই কোর্টের রায়ের জেরে দুর্গাপূজায় পথে তত ভিড় হয় নাই, এই বার কালীপূজা ও দীপাবলিতেও মোটের উপর শান্ত ও শব্দদূষণহীন থাকিল শহর। কিছু এলাকায়, শহরতলিতে ও জেলায় আতশবাজি পুড়িয়াছে, শব্দবাজি ঠেকানো যায় নাই। কিন্তু অঙ্কের হিসাব এবং এত বছরের চলিয়া আসা ‘ঐতিহ্য’কে মাথায় রাখিলে এই বছরের দীপাবলি যে চোখে পড়িবার মতো ব্যতিক্রম, অতি বড় নিন্দুকেও তাহা স্বীকার করিবে। পূজামণ্ডপের দ্বার রুদ্ধ করা প্রশাসনের পক্ষে তবু সহজ, কিন্তু দীপাবলিতে আতশবাজি ও শব্দবাজি ঠেকানো ছিল দুস্তর চ্যালেঞ্জ। বাজির বাজার বন্ধ করিলেই বাজিও বন্ধ হইবে, তাহা নহে। জনসমাকীর্ণ বস্তি বা সুউচ্চ আবাসনের কোন প্রান্ত হইতে নিয়ম ভাঙা হইতেছে বুঝিতে পারাও শক্ত, দণ্ডবিধান তো পরের কথা। মহানগর কিন্তু আশ্চর্য সংযম ও সচেতনতা দেখাইয়াছে। সক্রিয় ও তৎপর দেখা গিয়াছে প্রশাসনকেও। রাজ্য সরকার ও নাগরিক উভয়েরই সাধুবাদ ও অভিনন্দন প্রাপ্য।

নিয়ম মানিবার এই ব্যতিক্রম কি কোভিডের কারণেই? বৎসর বৎসর প্রশাসনের অনুরোধ-উপরোধ ও ধরপাকড় বা শাস্তিদানেও যাহা হয় নাই, ভয়ঙ্কর অতিমারিই কি তাহা সম্ভব করিল? নাগরিককে শৃঙ্খলাপরায়ণতার পথে আনিল করোনাভাইরাস, এই মতটি উঠিয়া আসিতেছে। বলা হইতেছে, ইহা যেন নিজে থেকে শিখিতে না-চাওয়া অবাধ্য বালকের ঠেকায় পড়িয়া শিক্ষা। দীপাবলিতে নাগরিকের নিয়মনিষ্ঠা কত শতাংশ ভয়ে, আর কত ভাগ দায়িত্বশীল সচেতনতায় তাহা লইয়া তর্ক চলুক, কিন্তু আসল কথা, নাগরিকের শৃঙ্খলার বোধটি দেখা গিয়াছে, এবং তাহা উল্লেখযোগ্য। দায়িত্বশীল আচরণ করিবার এই বোধটি কিন্তু অতিমারির সময়ে মোড় ফিরাইয়া দিতে পারে। কোভিড-১৯ আসিয়া অর্থনীতি হইতে জীবিকা সব কিছুকেই পাল্টাইয়া দিয়াছে, স্কুলশিক্ষা, পরীক্ষা বা ঘর হইতে কাজ করিবার পদ্ধতিকে নূতন রূপে তুলিয়া ধরিতেছে। এই ধারাতেই নূতন সংযোজন উৎসবের পরিবর্তিত আবহ। আতশবাজি ও শব্দবাজিতে যে পরিবেশ দূষণ হয়, শ্বাসকষ্ট ও দুর্বল হৃদ্‌যন্ত্রের রোগী অসুস্থ এবং পোষ্য ও পথপশুগুলি ত্রস্ত হইয়া পড়ে, তাহা কাহারও অজানা ছিল না। এই সমস্ত লইয়া চর্চাও আজিকার নহে। তবু এই বৎসর দীপাবলিতে কলিকাতায় বাজির প্রায়-অনুপস্থিতি ইঙ্গিত দিল, করোনা-কালের তাৎক্ষণিক শিক্ষাকে ভবিষ্যতের বৃহত্তর শুভের লক্ষ্যে কাজে লাগানো সম্ভব।

এই দায়বদ্ধতা ক্ষণস্থায়ী নয়, চিরস্থায়ী হওয়া প্রয়োজন। রোগপ্রকোপিত দীপাবলিতে প্রশাসনের সক্রিয়তা ও নাগরিকের আচরণ এই সম্ভাবনা প্রমাণ করিয়াছে যে, চাহিলে পারা যায়। এখন দরকার সাময়িক সাফল্যকে অভ্যাসে পরিণত করা। অতিমারি বলিয়া অনিয়ম-বেনিয়ম এই বৎসর ঢাকাচাপা থাকুক, আগামী বৎসর চতুর্গুণ উসুল করা যাইবে, এই প্রবণতা নাগরিক-মনে বাসা বাঁধিলে মুশকিল। প্রশাসনেরও তৃপ্তিতে ভাসিয়া গেলে চলিবে না। ছটপূজা আসিয়া গেল, জগদ্ধাত্রী পূজাও সমাসন্ন। দীপাবলির সচেতনতা হাওয়ায় মিলাইয়া যাইবে, এই আশঙ্কাটি বিলক্ষণ আছে। প্রশাসন প্রমাণ করুক, রাজনৈতিক বিবেচনা ভুলিয়া পরিবেশ ও সমাজের স্বার্থে তাহারা কঠোর হইতে জানে।

Kolkata Kali Puja no firecrackers
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy