Advertisement
১০ মে ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

নমাজ পড়ার পর শাঁখের শব্দে চমকে ওঠেন

শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৫ ০০:০৩
Share: Save:

নমাজ পড়ার পর শাঁখের শব্দে চমকে ওঠেন

‘ছবিটা কিন্তু বদলাচ্ছে’ (মিলন দত্ত, ২-৪) লেখাটা পড়ে নিজের বাস্তব কিছু অভিজ্ঞতা মনে পড়ে গেল। দক্ষিণ দিনাজপুর পশ্চিমবঙ্গের প্রান্তিক জেলা। আর জেলার দীর্ঘ একটা অংশ বাংলাদেশের কাঁটাতার থাকায় এ জেলায় মুসলিম জনসংখ্যাও বেশ উঁচুর দিকে। এখানকার কুশমন্ডি, হরিরামপুর এবং কুমারগঞ্জ তিনটি ব্লকেই মুসলিমদের আধিপত্য। বছর চারেক আগে কুশমন্ডি ব্লকে একটি মুসলিম ছেলে কিছু নথি প্রত্যায়িত করতে এসেছিল। যাদবপুরে সংস্কৃতে অনার্স পড়ে। আশ্চর্য হয়েছিলাম। নিজের বিবেক দিয়ে বোঝার চেষ্টা করেছিলাম সে দিন সংস্কৃতের মতো রক্ষণশীল হিন্দু ভাষাকেও তবে নিজের করে নিচ্ছে মুসলিমরা। কিন্তু আজ অবধি আমার চার পাশে কোনও হিন্দু ছেলেকে উর্দু নিয়ে পড়তে দেখলাম কই? আরও আছে। অফিসের আর এল আই কর্মী নজরুলদার মেয়ের হাতে যে দিন বিপত্তারিণীর লালসুতো জড়ানোর দৃশ্য দেখেছিলাম সে দিন মনে হয়েছিল শুধু শুধু একটা জাতির সংস্কৃতি জীবন যাত্রাকে আমরা বছরের পর বছর ধরে ভুল বুঝে চলেছি। সুতরাং একটা পরিবর্তনের স্রোত যে এ জাতির মধ্যে বইছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। মিলনবাবুর মতো বলতে ইচ্ছা করে ছবিটা কিন্তু সত্যিই বদলাচ্ছে।
তবে শিক্ষাটা ভীষণ জরুরি। মিলনবাবু তাঁর লেখায় পরিসংখ্যান দিয়ে মুসলিম জনসমাজের যে হতদরিদ্র চিত্রটা তুলে ধরেছেন তার বাস্তবতা আমার জেলার মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চলে এখনও বিদ্যমান। বিশেষ করে যখন দেখি, নবম শ্রেণির মেয়েগুলোর অপুষ্ট শরীরেই চলে এসেছে সন্তান। এবং এখনও অপ্রাপ্তবয়সিদের বিয়ের প্রচলন মুসলিমদের মধ্যে খুবই বেশি। এখানে কোনও ধর্মীয় আবেগ কাজ করে কি না, তা জানাটা জরুরি।
আজকের মুসলিম মানে কিন্তু শুধু নমাজ আতর আর গোস্ত নয়, ধর্মের গোঁড়ামি নয়। এটার প্রমাণ দিয়ে চলেছে মুসলিম সমাজের পরবর্তী প্রজন্ম। যারা জহর আসর ফজলের নমাজ পড়ার পরও শাঁখের শব্দে চমকে ওঠেন, অষ্টমীর রাতে লাইন দিয়ে মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে বেড়ান নতুন পোশাকে। কিন্তু আমরা হিন্দুরা পারিনি। রমজান, ঈদকে শুধু হলিডে ভেবে পা বাড়িয়েছি মন্দারমণি ডুয়ার্সে। সুতরাং মুসলিমদের শুধু ছবিটা বদলালে হবে না। আমাদের সমাজ ব্যবস্থার বদলটাও আনতে হবে। নইলে মুসলিমদের টুপি দাড়ির সংস্কৃতি থেকে বের করা অসম্ভব।
সন্দীপন নন্দী। বালুরঘাট

॥ ২ ॥

‘ছবিটা কিন্তু বদলাচ্ছে...’ মিলন দত্ত (২-৪) পড়ে মনে হল, ধর্মকে ধর্মের জায়গায় রেখে যে জাতি বাস্তবের সঙ্গে তাল মিলিয়েছে, সেই জাতিই উন্নতি করতে পেরেছে। বাঙালি মুসলমান কিন্তু যত ধর্মনির্ভর ততটা বাস্তবনির্ভর নয়। পরলোক বা বেহেস্তকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে তারা বাস্তবের সঙ্গে অভিযোজনের ক্ষমতাটাই হারিয়ে ফেলেছে। নমাজ, রোজা, হজ, জাকাত, কলমা— এ সবই তো পরলোকের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এ সব করে কেউ যদি বেহেস্তেই যায়, তাতে সমাজের কী উপকার হল?

সে যুগে মক্তব, মাদ্রাসার মতো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিই মূলত জনশিক্ষার দায়িত্বে ছিল। হিন্দুদের ছিল টোল, গুরুগৃহ, খ্রিস্টানদের গির্জা, বৌদ্ধদের বিহার। পরবর্তী কালে প্রায় সব ধর্ম জাতিই অভিযোজনের পথে অগ্রসর হয়েছে। টোল, গুরুগৃহ, গির্জা, বিহার জনশিক্ষার গুরুত্ব হারিয়েছে। কিন্তু মাদ্রাসাগুলি আজও সনাতন গণ্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। পালটে যাওয়াই যুগের ধর্ম। হিন্দুরা মুসলমানদের গজলের সুর নিয়েছে, লুঙ্গি, সালোয়ার, পাজামা, কুর্তা নির্দ্বিধায় গ্রহণ করেছে। কিন্তু মুসলমান সমাজ এখনও হিন্দুর ধুতি পাঞ্জাবি কীর্তনের সুর নিতে পারেনি। বহু হিন্দু গায়ক ইসলামি গজল, কাওয়ালি গেয়ে বিখ্যাত হয়েছেন। কিন্তু পদাবলি কীর্তন গেয়ে বিখ্যাত হয়েছেন এমন মুসলমান গায়ক আজও বিরল।

তবে ধীরে ধীরে ছবিটা বদলাচ্ছে। মুসলমান নবজাতকের নামকরণই বোধহয় সেই বদলানোর প্রথম চিহ্ন। বহু মুসলমান ছেলেমেয়ের নামকরণে এখন চিরাচরিত প্রথার অনুসরণ নেই। নেই মেয়েদের চিরপ্রচলিত পদবি খাতুন, বিবির রমরমা। এখন অনেক মুসলমান মেয়ের নাম মৌসুমী মণ্ডল, পাপিয়া সরকার, অনিতা শেখ। এই বদল যতটা হিন্দু সমাজ প্রভাবিত, তার চেয়ে বেশি যুগ প্রভাবিত।

দেবপ্রিয়া ইসলাম। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়

আকাশবাণী কিন্তু হারিয়ে যায়নি

‘অনুষ্ঠান প্রচারে বিঘ্ন ঘটায় ...’ (৮-৩) পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা: দূরদর্শনের কল্যাণে (?) বেতারের শ্রোতা আজ হয়তো সত্যিই কম। কিন্তু এখনও অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চল আছে যেখানে বেতার-অন্ত প্রাণ মানুষের সংখ্যা নেহাতই অল্প নয়। পত্রকার এক জায়গায় বলেছেন, ‘আমার মতো প্রাচীনপন্থীরা অনেকেই আকাশবাণীকে আঁকড়ে আছেন।’ বর্তমান পত্রকার কিন্তু ফেসবুক যুগের সন্তান এবং জানাতে গর্ব হয় আকাশবাণী কলকাতা ক কেন্দ্রের সারা সপ্তাহের অনুষ্ঠানসূচি আমার মুখস্থ। আর একটা তথ্য: কিছু দিন আগে আমি যখন কলেজে পড়তাম সে সময় এন এস এস-র সৌজন্যে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর নিকটবর্তী কিছু প্রত্যন্ত গ্রামে সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছি মানুষেরা মাঠে কাজ করতে করতে রান্না করতে করতে আকাশবাণী শুনছে।

অনুষ্ঠান প্রচার সংক্রান্ত ত্রুটি বিচ্যুতির কথা বললে বলতে হয় এ ত্রুটি এক দিন দু’দিনের নয়, আকাশবাণীর মধ্যে ভুল এবং শোধরানোর প্রক্রিয়া যুগপৎ চলে সব সময়। প্রামাণ্য হিসাবে প্রতি রবিবার রাত্রি আটটায় ‘সবিনয় নিবেদন’-এর কথা বলতে পারি। সে অনুষ্ঠানই এ সব নিয়ে আলোচনার উপযুক্ত জায়গা। দৈনিক প্রচুর সব অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা, লেখা, রেকর্ডিং, গান নির্বাচন, বাজানো, সময় মাফিক বিজ্ঞাপন, বেশির ভাগটা অস্থায়ী ঘোষক-উপস্থাপক দিয়ে চালানো। কোন অনুষ্ঠান কোন চ্যানেলে যাবে তা দেখভাল করা, সবটা মিলিয়ে এই সুবৃহৎ কর্মযজ্ঞে দু-একটা ভুলভ্রান্তি হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক অথচ বেশির ভাগ সময়েই নিঁখুত ঘোষণা হয়। রেডিয়োর প্রাণপুরুষ স্বয়ং বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রর সময়েও ভুল ঘোষণা নিয়ে অনেক মজার মজার গল্প আছে। তবে হ্যাঁ, বর্তমান আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ যদি মনে করেন স্রোতা কমে গেছে বলে ভুল ঘোষণাও কেউ বুঝতে পারবে না তা হলে সেটা অবশ্যই বড় ভুল হবে। আকাশবাণীর যারা ঘোষক, উপস্থাপক (পুরুষ মহিলা) প্রত্যেকের কণ্ঠই অত্যন্ত সুন্দর কিন্তু উক্ত পত্রকারের সঙ্গে সহমত পোষণ করে বলি, আবেগ দিয়ে কথা বললে মানুষকে ভাল বশ করা যায়। দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়দের সময়ে এমনকী খবরের মধ্যে মৃত্যু সংবাদ থাকলেও সেই খবর অন্য খবরের চেয়ে আলাদা আবেগ দিয়ে পড়া হত।

শঙ্খ অধিকারী। সাবড়াকোণ, বাঁকুড়া

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE