Advertisement
০৫ মে ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

কয়েক দিন আগে নদিয়া জেলার মায়াপুরের কাছে বামুনপুকুরে ‘বল্লাল ঢিপি’ দেখে এলাম। এখানে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের একটি বোর্ডে বল্লাল ঢিপির ইতিহাস লেখা আছে।

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

ইতিহাস জরাজীর্ণ

কয়েক দিন আগে নদিয়া জেলার মায়াপুরের কাছে বামুনপুকুরে ‘বল্লাল ঢিপি’ দেখে এলাম। এখানে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের একটি বোর্ডে বল্লাল ঢিপির ইতিহাস লেখা আছে। সেন রাজবংশের রাজা বল্লাল সেনের নামাঙ্কিত এই বিরাট ঢিপিতে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ ১৯৮২-’৮৩ থেকে ১৯৮৮-’৮৯ সালের মধ্যে উৎখনন পরিচালনা করে। এখানে পাওয়া গেছে বিস্তৃত প্রাঙ্গণে বিরাট ইটের ইমারত, যার চারিদিকে ছিল উঁচু পাঁচিল। যে সব প্রত্নবস্তু পাওয়া গিয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল পঙ্খের মূর্তি, পোড়ামাটির মানুষ ও জীবজন্তুর মূর্তি, তামা ও লোহার তৈরি নানান বাসন, পেরেক ও আরও নানান জিনিস। অষ্টম ও নবম শতকের ধ্বংস হয়ে যাওয়া পুরনো স্থাপত্যকীর্তির উপরে আবার গড়ে তোলা এই সৌধের উপরিভাগ আনুমানিক দ্বাদশ শতকের। বিভিন্ন সময়ের মেরামত, অদলবদল ও সংযোজনের নিদর্শনবাহী এই স্থাপত্য দ্বাদশ শতকে একটি বিশাল দেবালয়ের রূপ নেয়। এখন এই সৌধটির অনেক জায়গায় ইট খসে খসে পড়ছে। কিছু জায়গায় ইট ভেঙে গিয়েছে। অবিলম্বে রক্ষণাবেক্ষণ শুরু না হলে সেন আমলের এই প্রাচীন ইতিহাস হারিয়ে যাবে।

পীযূষ দত্ত মগরা, হুগলি

উলটপুরাণ

একেই বলে উলটপুরাণ! ৮ নভেম্বর নোট বাতিলের আগে দেখেছি খুচরোর চরম আকাল। খুচরো যেন ফল্গুর মতো শুকিয়ে গিয়েছে। বাসে, হাটে-বাজারে, অটোতে খুচরো নিয়ে বাদানুবাদ, এমনকী হাতাহাতি বেধেছে। কিন্তু, ৮ নভেম্বরের পরে খুচরোর মরা গাঙে যেন সুনামি এসেছে। চারিদিকে খুচরো থইথই করছে। আগে খুচরো দেখলে যাঁদের চোখ চকচক করে উঠত, এখন খুচরো দেখলে তাঁদের মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে। মুদি দোকানি, সবজিওয়ালা, অটো বলছে— কয়েন নয়, নোট দিন। অনেক ব্যাঙ্ক খুচরোর থলে দিচ্ছে; কিন্তু নিতে চাইছে না। আগে খুচরো পেতে গেলে কমিশন দিতে হত, আর এখন খুচরো দিতে গেলে অনেকে কমিশন চাইছে! সত্যি, সময় বড় অদ্ভুত।

প্রণবকুমার মাটিয়া পাথরপ্রতিমা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

সহপ্রধান শিক্ষক

অনেক স্কুলে সহপ্রধান শিক্ষকের পদ আছে, কিন্তু তার পদমর্যাদা এবং দায়িত্ব-কর্তব্য সম্বন্ধে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নিয়মকানুনে কিছু বলা নেই (‘আমলাগিরি নয়, পড়াতে চান প্রধান শিক্ষকেরা,’ ৯-৩)। চলে আসা প্রথানুযায়ী, সহপ্রধান শিক্ষক স্কুলের রুটিন তৈরি করেন। যে শিক্ষকরা আসেননি, তাঁদের ক্লাসগুলো ভাগ করে দেন উপস্থিত থাকা শিক্ষকদের মধ্যে। সারা বছরের অ্যাকাডেমিক ক্যালেন্ডার তৈরি করেন। বছরের বিভিন্ন সময়ে পরীক্ষা এবং মূল্যায়নের অন্যান্য ব্যবস্থার সামগ্রিক পরিকল্পনা তৈরি করেন, তা সবাইকে জানিয়ে দেন, এবং সমগ্র মূল্যায়ন ব্যবস্থা পরিচালনা করেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের মার্কশিট অভিভাবকের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং উচ্চ মাধ্যমিক কাউন্সিলের পরীক্ষা এবং বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত সার্ভিস কমিশন, জয়েন্ট এন্ট্রান্স, প্রভৃতি পরীক্ষার ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা করেন।

এতগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করা সত্ত্বেও, আশ্চর্য হল, বিদ্যালয় পরিচালন সমিতিতে সহপ্রধান শিক্ষকের কোনও স্থান নেই। ওই সমিতিতে সহশিক্ষক এবং অশিক্ষক কর্মী সদস্য হতে পারেন, কিন্তু সহপ্রধান শিক্ষক পারেন না। প্রধান শিক্ষক পদাধিকারবলে পরিচালন সমিতির সম্পাদক। সহপ্রধান শিক্ষক কেন তা হলে পদাধিকারবলে বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির যুগ্মসম্পাদক হবেন না? সহপ্রধান শিক্ষককে পরিচালন সমিতিতে স্থান দিলে, বিদ্যালয়ের অনেকগুলি সমস্যা ও তার সমাধানের কথা স্পষ্ট ভাবে আলোচনা করা যাবে, স্কুল আরও সুষ্ঠু ভাবে চালানো যাবে।

পর্ষদের নিয়মে সহপ্রধান শিক্ষকদের সম্বন্ধে কেবলমাত্র একটি বিষয় লেখা আছে: সহপ্রধান শিক্ষক পদাধিকারবলে বিদ্যালয় অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সম্পাদক। বিদ্যালয় পরিচালন সমিতির সম্পাদক হিসেবে সমিতির সভা ডাকেন প্রধান শিক্ষক। কিন্তু অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সম্পাদক হিসেবে সহপ্রধান শিক্ষক মিটিং ডাকতে গেলে, বাধা পান। পর্ষদ একটু খোঁজ নিলেই জানতে পারবে যে প্রায় সব স্কুলে (ব্যতিক্রম থাকতে পারে) এই অরাজকতা বহু দিন ধরে চলে আসছে।

এখনকার বিদ্যালয় পরিচালনায় প্রধান শিক্ষকদের এত দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে যে তাঁরা হাঁসফাঁস করছেন, পড়ানোর কাজটাই পিছনের সারিতে চলে যাচ্ছে এ সব দায়দায়িত্বের প্রকাণ্ড চাপে। সহপ্রধান শিক্ষকদের পদমর্যাদা, দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্দিষ্ট ভাবে নির্ধারণ করে, তাঁদের আরও কিছু দায়িত্ব ভাগ করে দিলে, প্রধান শিক্ষকদের এই পাহাড়প্রমাণ চাপ কমানো যেতে পারে। এই পদক্ষেপ নিলে, স্কুলে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও অ্যাকাডেমিক উৎকর্ষ: দুই-ই অনেকটা বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা।

প্রদীপকুমার বাগচী সভাপতি, কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেড-মাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেড-মিস্ট্রেসেস

‘নিট’ ফল

সর্বভারতীয় মেডিক্যাল এন্ট্রান্স টেস্ট বা ‘নিট’-এর যে বিষয়টি সব থেকে বিতর্কিত, তা হল: বিভিন্ন রাজ্য বোর্ডের সিলেবাস ভিন্ন হওয়ার কারণে, পরীক্ষার্থীদের অভিন্ন সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষায় অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
কিন্তু বিষয়টি যখন ‘বিজ্ঞান’ সম্পর্কিত, তখন বিভিন্ন রাজ্য বোর্ডের সিলেবাস ভিন্ন হবে কেন? এই প্রধান প্রশ্নটি অমীমাংসিত থেকে যাচ্ছে (‘প্রবেশিকা প্রহেলিকা’, সম্পাদকীয়, ৩-২)।

স্বাধীনতার পর এতগুলো বছর কেটে গেলেও উচ্চশিক্ষায় প্রবেশিকার একটি অভিন্ন সিলেবাস যদি তৈরি না করা যায়, তা হলে সেটি একান্ত ভাবেই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলির সম্মিলিত চরম ব্যর্থতাকেই প্রকাশ করে, যার ফল দুর্ভাগ্যজনক ভাবে ভোগ করতে হচ্ছে পরীক্ষার্থীদের। আজ দেশের সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়ের তিরস্কারে এই পথে এগনোর যে একটা প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে, আশা রাখি ভবিষ্যতে তার সুফল পাওয়া যাবে।

কিন্তু ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষায় টাকার খেলা বন্ধ করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের এই রায় (অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষা বাধ্যতামূলক) সময়োচিত হলেও অসম্পূর্ণ। বিগত বছরগুলিতে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন খবরে দেখা গেছে, ভর্তির প্রক্রিয়া অর্থাৎ কাউন্সেলিংকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন বেসরকারি মেডিকাল কলেজগুলি কী ভীষণ ভাবে দুর্নীতির খেলায় মেতে ওঠে। এর একমাত্র কারণ কাউন্সেলিং পদ্ধতিতে স্বচ্ছতার অভাব। টাকার খেলা সত্যিই বন্ধ করতে গেলে, অভিন্ন প্রবেশিকা পরীক্ষার পাশাপাশি, সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি মেডিকাল কলেজগুলিতে ভর্তির জন্য কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের তত্ত্বাবধানে কেন্দ্রীয় কাউন্সেলিং প্রয়োজন। নিটের বিজ্ঞপ্তিতে এর কোনও নির্দেশিকা এখনও পর্যন্ত নেই। এ ব্যাপারে অবিলম্বে সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ না ঘটলে, বিগত বছরগুলির মতো, এ বছরেও বহু মেধাবী ছাত্রছাত্রী ক্ষতিগ্রস্ত ও বঞ্চিত হতে পারে।

আর এই প্রসঙ্গে যে বিষয়টি সমস্ত রাজনৈতিক দল ও সংবাদমাধ্যম বুঝেশুনে এড়িয়ে চলছে, তা হল: উচ্চশিক্ষায়, বিশেষ করে ডাক্তারি ও ইঞ্জিনিয়ারিং পেশার প্রবেশিকা পরীক্ষায়, জাতভিত্তিক সংরক্ষণের প্রথা সম্পর্কে নতুন করে চিন্তাভাবনা করা। এই সংরক্ষণের ফলে যে শুধু মেধার সঙ্গে আপস করা হচ্ছে তা-ই নয়, আপস করা হচ্ছে দেশের ভবিষ্যতের সঙ্গে। বরং এক সত্যিকারের বিকল্প ব্যবস্থা তৈরি করা প্রয়োজন, যাতে আমাদের সমাজের পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েরা উচ্চশিক্ষার প্রবেশিকা পরীক্ষায় নিজেদের সত্যিকারের সমর্থ করে তুলতে পারে, কোনও রকম সংরক্ষণের সাহায্য ছাড়াই।

দীপাঞ্জন বক্সী দুর্গাপুর

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE