Advertisement
০৪ মে ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

আমি কোনও রাজনৈতিক বা ধর্মনৈতিক দলের সমর্থক নই। এবং রামচন্দ্র অবশ্যই আমার ইষ্টদেব নন। কিন্তু সাধারণ বুদ্ধিতে আমার মনে হয়, রামচন্দ্রের তীব্র নির্মম নারীবিরোধিতা যদি প্রক্ষিপ্ত বলে প্রমাণ করা যায় এবং তা জনসমক্ষে আনা যায়, তাতে এই উপমহাদেশের নারীদের সীমাহীন উপকার হবে।

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

পরিবর্তনটা জরুরি

খবরে প্রকাশ, রামায়ণের উত্তরাকাণ্ড (উত্তরকাণ্ড) প্রক্ষিপ্ত কি না (অর্থাৎ মূল রামায়ণের অংশ নয় এবং বাল্মীকি রচিত নয়, পরে সংযোজিত), তার উত্তর খুঁজতে গোরক্ষপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সম্মেলনের আয়োজন করেছে আরএসএস। মনে করা হচ্ছে, রামচন্দ্রের নারীবিরোধী ভাবমূর্তির পরিবতর্নই এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য। এই চেষ্টার অনেকে সমালোচনাও করেছেন (‘ভুল রামায়ণ শোধরাতে...’, ১০-৭)।

আমি কোনও রাজনৈতিক বা ধর্মনৈতিক দলের সমর্থক নই। এবং রামচন্দ্র অবশ্যই আমার ইষ্টদেব নন। কিন্তু সাধারণ বুদ্ধিতে আমার মনে হয়, রামচন্দ্রের তীব্র নির্মম নারীবিরোধিতা যদি প্রক্ষিপ্ত বলে প্রমাণ করা যায় এবং তা জনসমক্ষে আনা যায়, তাতে এই উপমহাদেশের নারীদের সীমাহীন উপকার হবে। কারণ, রামচন্দ্র শুধু রামায়ণের নায়ক নন, তিনি দেহধারী ঈশ্বর রূপে পূজিত, এবং সেই কারণে তাঁর প্রচলিত নির্মম এবং ভণ্ড (কারণ সীতার জন্য কান্নার সঙ্গে সীতার প্রতি নিষ্ঠুর অন্যায়কে মেলানো যায় না। কান্নাটা ভণ্ডামি বলেই মনে হয়) রূপকেই আদর্শ করে নিয়ে মেয়েরা ধর্ষিতা বা অপহৃতা হয়ে ফিরে এলে তাদের নিজের পরিবার থেকেই তাদের আত্মহত্যা করতে উৎসাহ দেওয়া হয় বা ঘর থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। ধর্মনিরপেক্ষ মানবতাবাদীরা অবশ্যই এর বিরুদ্ধে এক দিক থেকে লড়ছেন। কিন্তু অপর মেরুতে অবস্থিত ব্রাহ্মণ্যবাদী আদর্শেও যদি পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হয়, তবে সে চেষ্টাকে স্বাগত জানানোই উচিত।

রামায়ণ গবেষক শ্রদ্ধেয় নবনীতা দেব সেন বলেছেন, প্রক্ষিপ্ত বলে উত্তরকাণ্ড বাদ দিলে একটি ‘ব্রাহ্মণ্যবাদী ছিবড়ে’ পড়ে থাকবে। তাই কি? না কি মধ্যযুগীয় ব্রাহ্মণ্যবাদের সংযোজন বাদ দিয়ে একটি মানবিক মহাকাব্য বেরিয়ে আসবে? মহাভারত একটি মানবিক মহাকাব্য, তার নায়ক যুধিষ্ঠির দেবতা নন, মানুষ, তাই তাঁর অন্যায়কে (দ্রৌপদীকে বাজি রাখা) কখনও অনুসরণীয় বলে মনে করা হয়নি। রামায়ণ ভয়ংকর ভাবে ব্রাহ্মণ্যবাদী বলেই মানবিক আবেদনে মহাভারতের ধারেকাছেও যেতে পারেনি। সেই ব্রাহ্মণ্যবাদ অন্তত কিছুটা বাদ গেলে, অর্থাৎ সীতা বিসর্জন ও শূদ্র তপস্বী শম্বুকের হত্যা প্রক্ষিপ্ত বলে যদি সত্যই প্রমাণিত হয়, তবে মানবিক আবেদনে রামায়ণ মহাভারতের কাছাকাছি আসতে পারবে। মনে রাখতে হবে, স্বয়ং তুলসীদাসও সীতা বিসর্জন, শম্বুক বধ এবং প্রথম অগ্নিপরীক্ষার আগে রামের মুখের অশালীন উক্তিগুলি (রাবণ স্পর্শ করার ফলে সীতা এখনে কুকুরে চাটা ঘিয়ের সমান, তিনি এখন বিভীষণ, সুগ্রীব বা নিজের কোনও দেবরের সঙ্গেও বাস করতে পারেন) বাদ দিয়েছেন। তা কি তিনি ওগুলি প্রক্ষিপ্ত বলে মনে করেছিলেন বলেই? তুলসীদাস লিখেছেন, সীতাই প্রথম অগ্নিপরীক্ষা চেয়েছিলেন, নিজের সুনামের জন্য, রামচন্দ্র তাতে প্ররোচনা দেননি। অবশ্য বাধাও দেননি। তবে সীতার বেঁচে থাকাই সম্ভবত প্রমাণ করে, অগ্নিপরীক্ষা শেষ পর্যন্ত হয়নি। এ সব নিয়েই আলোচনা হওয়া উচিত।

সুস্মিতা ভট্টাচার্য

কলকাতা-২৬

কৃষি-বিজ্ঞান

অরূপরতন ঘোষ কৃষি বিষয়ক অনেক সদর্থক চিন্তাভাবনার দিক নির্দেশ করেছেন, কিন্তু মূল সমস্যার দিকে আলোকপাত করেননি (‘কৃষির সমস্যা’, ২১-৭ ও ‘কৃষির জন্য যা...’, ২২-৭)। একটি রাষ্ট্রায়ত্ত কৃষি সংস্থার সঙ্গে দীর্ঘ ৩৪ বছর যুক্ত থাকার সুবাদে এবং এই রাজ্যের প্রতিটি জেলায় পেশাগত কারণে ঘোরার সুবাদে যে উপলব্ধি হয়েছে, তা জানাতে চাই।

১) পশ্চিমবঙ্গের কৃষিব্যবস্থা এখনও মান্ধাতার যুগেই পড়ে। প্রধান সমস্যা, কৃষিজমির খণ্ড মালিকানা। একলপ্তে কারও ৩০-৪০ বিঘে জমি নেই। এই ক্ষেত্রে সমবায় ভিত্তিতে, আধুনিক বিজ্ঞাননির্ভর প্রযুক্তিতে চাষবাস হলে আর্থিক দিক থেকে কিছুটা লাভবান হতেন চাষিরা।

২) উন্নত শংসিত মানের বীজ ব্যবহারের ক্ষেত্রেও পশ্চিমবঙ্গের কৃষক বহু পিছনে। বীজ তিন রকমের। প্রথমে, ব্রিডার সিড (অর্থাৎ, মাদার সিড) দ্বিতীয় পর্যায়ে ফাউন্ডেশন সিড এবং তৃতীয় পর্যায়ে সার্টিফায়েড সিড বা শংসিত বীজ। মোট কথা, যে কোনও উন্নত বীজ তিন বছরের বেশি ব্যবহার করা যায় না। গেলে উৎপাদন ব্যাহত হয় বা কমে যায়। দুঃখের বিষয়, পশ্চিমবঙ্গের শতকরা নব্বই ভাগ চাষি এখনও নিজের জমির উৎপাদিত দশ-পনেরো বছরের পুরনো ফসল, বীজ হিসেবে ব্যবহার করেন। লেখক লিখেছেন, ফল, ফুল, সবজি ইত্যাদির যত নতুন জাত বা ফসল আমাদের দেশে এসেছে, তার একটা বড় অং‌শ এসেছে তাইল্যান্ড থেকে। সবিনয়ে জানাই, ভারতের বীজ ব্যবসার সিংহভাগ এখনও দখল করে রয়েছে কিছু আমেরিকান এবং জাপানি বহুজাতিক কোম্পানি।

৩) পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরা কোন ফসল চাষ করলে আর্থিক ভাবে যথার্থ লাভবান হবেন, সেই বিষয়ে সম্পূর্ণ উদাসীন এবং সেকেলে চিন্তার পথিক। যেমন, আশির দশকের পরে পাট আর অর্থকরী ফসল নয়। এখন পাটচাষ মানেই প্রভূত লোকসান। তাই কৃষিকে লাভজনক করতে হলে চাষিদের ধান, পাটের বদলে বিকল্প চাষে ঝুঁকতে হবে। যেমন, ভুট্টাচাষ করে মুর্শিদাবাদের অনেক চাষি লাভবান হয়েছেন। এ রাজ্যে ডাল এবং তৈলবীজ চাষের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। এগুলিও ধান, পাটের চেয়ে যথেষ্ট লাভজনক।

পুরুলিয়া, বাঁকুড়ায় রুক্ষ পাথুরে জমিতে ইদানীং মুসম্বি, কমলালেবু, আঙুর, আম প্রভৃতি চাষ যথেষ্ট লাভজনক হয়েছে। পুরুলিয়ার ভালপাহাড়ের রুক্ষ জমি কবি কমল চক্রবর্তীর (কৌরব সম্পাদক) ঐকান্তিক চেষ্টায় সবুজে ঢেকে গিয়েছে। সেখানে আধুনিক পন্থায় চাষবাস হচ্ছে। বনসৃজন হয়েছে।

মুর্শিদাবাদের বাগড়ি (ভাগীরথীর পূর্ব পাড়) অঞ্চলে জমির চরিত্র কিছুটা বদলে হাইব্রিড আমের বাগান (মল্লিকা, আম্রপালি) করা যেতে পারে। এই হাইব্রিড আমগাছে প্রতি বছর গাছপিছু সর্বোচ্চ ৫০০ আম হয়। এক বিঘে জমিতে একশোর বেশি গাছ লাগানো যায়। গাছের নীচে হলুদ চাষ অনায়াসে করা যায়।

৪) নবীন প্রজন্মের মধ্যে চাষবাসের প্রতি এখন তীব্র অনীহা। সকলেই কম-বেশি শিক্ষিত। কিন্তু, সরকারি এবং বেসরকারি চাকরির বাজার ক্রমশ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। সে ক্ষেত্রে বেকারত্বের জ্বালা না ভোগ করে, যেটুকু জোত-জমি রয়েছে, তাতেই আধুনিক বৈজ্ঞানিক পন্থায় সোনার ফসল ফলানো যেতে পারে। পনেরো-কুড়ি জন মিলে গ্রামে তৈরি করা যেতে পারে ফারমার্স কো-অপারেটিভ ক্লাব। কৃষিক্ষেত্রে এখন সরকারি পরিষেবাও অনেক, রয়েছে অনেক স্কিম। সমবায় তৈরি করে চাষ আরম্ভ করলে সরকারি পরিষেবা বা সাহায্য খুব তাড়াতাড়ি পাওয়া যায়।

তুষার ভট্টাচার্য

কাশিমবাজার, মুর্শিদাবাদ

সেতু নয়, জেটি

আবারও পূর্ব মেদিনীপুরের উদ্বেল উপকূলে উন্নয়নের তরী এসে ভিড়ল। সমুদ্রবিধৌত নদীবেষ্টিত প্রত্যন্ত খেজুরি-২ নং ব্লকের লক্ষাধিক অনুন্নত তফসিলি মানুষ সবিস্ময়ে দেখল তাদের জন্য সেতু নয়, রসুলপুর নদীতে হয়েছে রসুলপুর-বোগা ঘাটে স্থায়ী জেটি। জলে, ঝড়ে, রাত-বিরেতে রোগী নিয়ে ঘুরপথে হেঁড়িয়া হয়ে ৭০ কিমি পথ পেরিয়ে মহকুমা হাসপাতালে পৌঁছতে হাজার টাকা গুনে যেতে হয় কিংবা বহু পুরনো ডিঙিতে শিশু-বৃদ্ধ-অন্তঃসত্ত্বারা বাইকের চাপাচাপিতে প্রাণ হাতে নদী পার হয়। এই কারণে মানুষজন দীর্ঘ দিন ধরে সেতুর জন্য আবেদন জানাচ্ছিল।

ত্রুটি মার্জনীয়। রাজনীতির স্বার্থেই উন্নয়ন— তবু আবার আমাদের চাওয়া— খেজুরি-২-এর প্রাণকেন্দ্র জনকার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রটিকে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উন্নীত করে অন্তত দু’জন এমবিবিএস ডাক্তার দেওয়া হোক। বিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহেরও আবেদন জানাই সরকারের নিকট। রসুলপুর থেকে খেজুরি দীর্ঘ দশ কিমি বেলাভূমি সুদৃশ্য সুশোভন, দিঘার সহচরী হতে পারে। সম্ভব শুধুমাত্র সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায়।

সন্তোষকুমার বেরা

জাফরচক, পূর্ব মেদিনীপুর

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Letters To Editor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE