Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু

ছোটবেলায় চিনা রূপকথায় পড়েছিলাম, একটা ছেলে খাতায় যা আঁকে, তা-ই জীবন্ত হয়ে ওঠে। যেই পাখি এঁকেছে, খাতা থেকে উড়ে গেল পাখি। শরদিন্দুর গল্প অবিকল সে রকম। নিটোল, সম্পূর্ণ, বহুমাত্রিক। কলমের এক-একটা আঁচড় ‘ভার্চুয়াল রিয়ালিটি’র থেকেও বেশি কিছু সৃষ্টি করছে।

শেষ আপডেট: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:০০

তাঁর গল্পকে ছোঁয়া যায়

“বাঙ্গালী আমার লেখা পড়ে তাহাতে সন্দেহ নাই। হয়তো সব কথা বুঝিয়া পড়ে না, তবু পড়ে।” শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন ১৯৫০ সালে, সঙ্গে কৌতূহল, আরও ৫০ বছর পর কি কেউ মনে রাখবে তাঁকে? তা সত্ত্বেও ছিল বিশ্বাস, “আমার চিন্তা ও স্বপ্নের বীজ যদি বাঙ্গালীর সারবান মনের ক্ষেত্রে পড়িয়া থাকে, তবে আমার নাম সকলে ভুলিয়া গেলেও আমার বাঁচিয়া থাকা নিরর্থক নয়।”

ছোটবেলায় চিনা রূপকথায় পড়েছিলাম, একটা ছেলে খাতায় যা আঁকে, তা-ই জীবন্ত হয়ে ওঠে। যেই পাখি এঁকেছে, খাতা থেকে উড়ে গেল পাখি। শরদিন্দুর গল্প অবিকল সে রকম। নিটোল, সম্পূর্ণ, বহুমাত্রিক। কলমের এক-একটা আঁচড় ‘ভার্চুয়াল রিয়ালিটি’র থেকেও বেশি কিছু সৃষ্টি করছে। যেন ছোঁয়া যায়, ব্যোমকেশ সিগারেট ধরালে গন্ধ পাওয়া যায়। গল্প-বলিয়ে হিসেবে শরদিন্দুর সম্মোহনী শক্তি এমনই দুর্নিবার যে, কে বলবে ‘কালের মন্দিরা’-য়
একটা সেমিকোলনের পর বারো বছরের গ্যাপ!

শরদিন্দুর ব্যক্তিগত জীবন-পরিক্রমার উপলব্ধি তাঁকে দিয়ে এক আশ্চর্য কথা লিখিয়েছে— “মাতৃভূমি বলিয়া কোনও বিশেষ ভূখন্ড নাই। মানুষের সহজাত সংস্কৃতির কেন্দ্র যেখানে, মাতৃভূমিও সেইখানে।” জৌনপুরে জন্ম, মুঙ্গেরে বাল্যকাল, লেখাপড়া কলকাতায়, কর্মজীবন বম্বে ও পুণায়। যদি জানতেন তাঁর প্রয়াণ (২২ সেপ্টেম্বর, ১৯৭০) ঘটবে এই কলকাতায়, তা হলে কী আশ্চর্য হতেন ফলিত জ্যোতিষে পারঙ্গম এই নিখিল ভারতীয় সাহিত্যিক?

শরদিন্দুর সঙ্গে ব্যোমকেশের দেখা হয় একবারই, ‘প্রিয় চরিত্র’ গল্পে। যেখানে অজিত অভিমানে অনুপস্থিত। লেখকের বিরক্তির উত্তরে ব্যোমকেশ নির্বিকার স্বরে বলে যে, সে জানে তারা লেখকের প্রিয় চরিত্র নয়, এবং সে এও জানে সেই প্রিয় চরিত্র কে। কিন্তু লোকটা কে? নাম কি?

“‘শুনবেন?’ ব্যোমকেশ আমার কানের কাছে মুখ আনিয়া চুপিচুপি একটা নাম বলিল।

চমকিয়া উঠিলাম। মনের অগোচর পাপ নাই, ব্যোমকেশ ঠিকই ধরিয়াছে। কিছুক্ষণ মুখ-ব্যাদান করিয়া থাকিয়া বলিলাম, ‘তুমি কি করে জানলে?’

ব্যোমকেশ অট্টহাস্য করিয়া উঠিল, বলিল, ‘আপনার প্রশ্নটা অজিতের প্রশ্নের মতো শোনাচ্ছে!’’’

শাণিত মস্তিষ্ক, তীব্র উইট ও মানবিক বোধসম্পন্ন এই সুপারহিরো শরদিন্দুকে এমন বেস্ট-সেলার করেছে যে অনেক ব্যোমকেশ-ভক্ত তাঁর অন্যান্য গল্প প্রায় পড়েনইনি। কিন্তু যে হেতু ব্যোমকেশ শরদিন্দুর ‘সেলফ-প্রজেকশন’ বা আত্মকৃতি (তাঁরই কথায়), তাই তাঁর মেজাজের অসাধারণ উচ্চতা ও প্রফুল্ল বাঙালিয়ানাকে বুঝতে হলে বা সিনেমা বানাতে হলে গোটা শরদিন্দু (কবিতা বাদ দিয়ে) পড়া প্রয়োজন। নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, বাংলায় একমাত্র শরদিন্দুর লেখাতেই ‘সাহিত্য ও ক্রাইম ডিটেকশনের মণিকাঞ্চন যোগ ঘটেছে।’ তাই আটপৌরে প্রতিপার্শ্ব— তক্তাপোশ, ট্রাম, কাফে শাজাহানের খিচুড়ি বা কলেজ স্কোয়ার— তাঁর ম্যাজিক স্পর্শে নিছক হু-ডান-ইট ছাড়িয়ে এমন বর্ণময়।

সাহিত্যের ধরাবাঁধা খাতে শরদিন্দু কখনও চলেননি, তিনি এক জন সিদ্ধকাম অভিযাত্রী। অপরাধ, ইতিহাসের লুপ্তপ্রায় জগৎ, জন্মান্তর, শিউরে-ওঠা অলৌকিক, অক্লান্ত হাস্যরস। জাতিস্মর, সত্যান্বেষী, ভেনডেটা, ধীরেন ঘোষের বিবাহ, কালো মোরগ, গোপন কথা, গৌড়মল্লার— কত নাম করব! তেমনই রচনার ম্যাপ— ওয়ারাঙ্গল থেকে মহাবলেশ্বর হয়ে বিস্মৃত রাজপুতানা ও বিজয়নগর। মুশকিল হল, বাংলা ভাষা ও ক্লাসিক‌্স-এর প্রতি আকর্ষণ কমে গেছে, তৈরি হয়েছে অনীহা, তাই প্রমথ বিশী শরদিন্দুকে যতই বলুন না কেন যে ‘বঙ্কিম ছাড়া আপনার জুড়ি নেই’, ধ্রুপদী বাংলা যাঁদের অনায়ত্ত, তাঁরা স্বভাবতই শরদিন্দুকে ভুলে মেরে দিয়েছে ও দেবে।

তাঁর সত্যিকার পরিচয় কিসে? প্রশ্ন করেছেন নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, উত্তর দেননি। চাই না জানতে। এই ব্যাপ্ত উপমহাদেশের নিঃশ্বাসের শব্দ শরদিন্দুর লেখায় লুকিয়ে আছে, কান পাতলেই শোনা যায়। তাঁর লেখা পড়লে আত্মবিস্মৃতি কমে।

সুরঞ্জন চৌধুরী

কলকাতা-৯৭

মুসলিম মেয়েরা

আফরোজা খাতুনের প্রথম প্রশ্নটি খুবই যুক্তিপূর্ণ ও ভাবার বিষয় (‘তিন তালাক রদের পর?’, ৬-৯)। তবে তাৎক্ষণিক তিন তালাক রদ হলে ‘হালালা’ প্রথা স্বাভাবিক ভাবে লোপ পাবে। রাগের বশে বা ঘুমের ঘোরে দেওয়া তাৎক্ষণিক তালাককে বৈধ মানার কারণেই ‘হালালা নিকা’র প্রথা চালু রয়েছে, যা আইনসিদ্ধ নয়। পুরুষের বহু বিবাহের অধিকার রয়েছে বলেই যে পুরুষরা ৩/৪টি বিয়ে করেন এবং স্ত্রীরা একসঙ্গে থাকতে বাধ্য হন, এমনটা খুব একটা ঘটতে দেখা যায় না। এতগুলো বউ-বাচ্চা পোষার সামর্থ্য কোথায় (তবে দু’জন স্ত্রী দেখা যায়)? এখানে সমস্যা তৈরি করছে, পুরুষের বহু বিবাহের অধিকার। এই অধিকারের খাঁড়া কখন যে কার ওপর নেমে আসবে, সেই ভয়েই স্বামীনির্ভর স্ত্রী-দের স্বামীর সমস্ত অন্যায়-অত্যাচার মুখ বুজে সহ্য করতে হয়। এ ছাড়াও স্বামী তালাক দিলে স্ত্রী যদি আদালতে যান, তবে মামলার ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত স্ত্রী দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারবেন না। কিন্তু আইনি অধিকারের বলে স্বামী দিব্যি দ্বিতীয় বিয়ে করে সংসার করতে পারেন।

বাবার জীবদ্দশায় ছেলের মৃত্যু হলে তাঁর ছেলে ঠাকুরদার সম্পত্তি পায় না। বিধবা মেয়ের শ্বশুরের সম্পত্তি পাওয়া তো দূরের কথা, বাবার সম্পত্তিরও ন্যায্য অধিকার নেই। বাবার সম্পত্তির অংশ ছেলে যা পায়, মেয়ে তার অর্ধেক পায়। কোনও মেয়ে বাবার একমাত্র সন্তান হলেও বাবার সমস্ত সম্পত্তির মালিক হতে পারে না। নিজের ভাই না থাক, খুড়তুতো, জ্যাঠতুতো ভাই থাকলে সম্পত্তির একটা অংশ তাদের ওপর বর্তাবে। তালাকের ক্ষেত্রে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল খোরপোশ। তালাকের পর মুসলিম মহিলারা মাত্র ৩ মাস খোরপোশ পান। তাও শর্তসাপেক্ষে। তার পরের দায়িত্ব মহিলার বাপের বাড়ির। বাস্তবে মহিলাকে নিজের এবং শিশু সন্তানের গ্রাসাচ্ছাদনের ব্যবস্থা নিজেকেই করতে হয়। এখানেই শেষ নয়, তালাকপ্রাপ্ত বা বিধবা মা একা সন্তান প্রতিপালন করলেও মহিলা হওয়ার অপরাধে সেই সন্তানের অভিভাবক হতে পারবেন না। বাবা কিংবা বাবার পক্ষের কোনও পুরুষ হবেন। এই মুহূর্তে যে বিষয়ে কোর্টের রায়ে আমরা খুশি, তা কিন্তু শরিয়তি আইনের অংশ নয়। একটি ভুল পদ্ধতি রদ করার নির্দেশ মাত্র। অন্যান্য বিষয়গুলির ক্ষেত্রে সমানাধিকার পেতে হলে,‘অভিন্ন দেওয়ানি বিধি’ই একমাত্র পথ বলেই মনে হয়। তা না হলে ভবিষ্যতে মুসলিম মহিলাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন আইন চালু করতে হতে পারে।

রোশেনারা খান

মেদিনীপুর

পুরীতে গিয়ে

সম্প্রতি পুরী ভ্রমণ ও জগন্নাথদেব দর্শনে গিয়েছিলাম। আমরা ও আমাদের মতো অনেকেই যে সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হয়েছি, তা সকলের অবগতির জন্য সবিস্তারে জানানো দরকার বলে মনে করি।
১) জগন্নাথ মন্দিরে যথাযথ লাইন না থাকায় এমন হুড়োহুড়ি ও বিশৃঙ্খল অবস্থার সৃষ্টি হয়, যা শিশু, মহিলা ও বয়স্ক ব্যক্তির পক্ষে খুবই অসহনীয় ও দুর্ভাগ্যজনক। ২) বেলাভূমিতে অসংখ্য ডাবের খোলা, ব্যবহৃত চা-কফির কাপ, চিপস্-এর প্যাকেট ইত্যাদি পড়ে থাকে, যা পরিবেশ ও সমুদ্র দূষণ করে। ৩) স্বর্গদ্বার শ্মশান থেকে মারাত্মক দূষণ ওই জনবহুল এলাকায় দিনরাত্তির ছড়িয়ে পড়ছে! ৪) দিঘা-শঙ্করপুরের মতো সমুদ্রের পাড় বাঁধিয়ে বসার ব্যবস্থা করলেও বেলাভূমির অস্থায়ী দোকানগুলো যদি নির্দিষ্ট জায়গায় সারিবদ্ধ ভাবে বানিয়ে দেওয়া হয়, তবে তা দৃষ্টিনন্দন হবে। ৫) অবিলম্বে নির্দিষ্ট দূরত্ব অন্তর কয়েকটি পরিচ্ছন্ন সুলভ শৌচালয় নির্মাণ বিশেষ জরুরি। এ ব্যাপারে পুরীর মন্দির কর্তৃপক্ষ, পুরসভা ও প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

নিত্যানন্দ দাস

গুজারপুর, শ্যামপুর, হাওড়া

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

Sharadindu Bandyopadhyay শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy