সারা পৃথিবী জুড়ে একটা বড় সমস্যা, কী ভাবে পরিবেশ রক্ষা করা যায়। জীববৈচিত্র যাতে ঠিক ভাবে বজায় থাকে, তা নিয়ে ২০০২ সালে বায়োডাইভারসিটি আইন সংসদে গৃহীত, যার সাহায্যে ভারতের বিশাল জীবসম্পদকে সংরক্ষণ ও বিজ্ঞানসম্মত ভাবে পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাস্তবে অবশ্য বিষয়টি অন্য রকম। ভারতে অবৈধ ভাবে বন্যপ্রাণী আমদানি ও রফতানির মাধ্যমে বছরে প্রায় কোটি কোটি ডলার উপার্জিত হচ্ছে। সব প্রাণীই বন্যপ্রাণী আইন দ্বারা ভারতে সুরক্ষিত। এ সব প্রাণীদের হত্যা, বেআইনি শিকার, আমোদপ্রমোদের জন্য বা সার্কাসে ব্যবহার, বিক্রয় করে অর্থ উপার্জন, ব্যবসা করা বা বিদেশে পাচার অপরাধ। কিন্তু মানছে ক’জন?
কাগজে দেখলাম, হাওড়ায় রাস্তার ধারে অপেক্ষা করছে কত বাঁদরছানা, দড়ি দিয়ে ফুটপাতে বাঁধা, বিক্রির অপেক্ষায়। কয়েক দিন আগে এক মৃত গন্ডার পাওয়া গেল, তার শিংটি উধাও। উত্তরবঙ্গে হাতি রেল লাইনে পিষ্ট হয়ে মৃত, দাঁত উধাও।
পাখিদের নিয়েও ব্যবসা চলছে। ম্যাকাওয়ের একটি ডিমের দাম ৬০-৭০ হাজার টাকা। ডিম ফুটিয়ে বাচ্চা বেরোলে প্রতিটি বাচ্চা বিকোতে পারে দেড় থেকে আড়াই লক্ষ টাকায়। ‘বিজ্ঞান মেলা’ পত্রিকার তরফ থেকে প্রকাশিত এক সংবাদে জানা যায়, কলকাতা ও শহরতলিতে ম্যাকাওয়ের ডিম ফোটানোর ব্যবসা খুলে ফেলেছে শ’খানেক লোক। শুধু ম্যাকাও নয়, ফোটানো হচ্ছে কাকাতুয়া, ধূসর টিয়ার ডিমও। এই তথ্যের সত্যতা মিলেছে কেন্দ্রীয় বন মন্ত্রকের বন্যপ্রাণী অপরাধ নিয়ন্ত্রণ শাখা (ডব্লিউএলসিসিবি) থেকে। ওই সংস্থার আঞ্চলিক ডেপুটি ডিরেক্টর চতুর্ভুজ বেহরার হিসেব, গত দু’বছরে কলকাতা ও শহরতলিতে চোরাই বিদেশি পশু, সরীসৃপ ও পাখি নিয়ে ৫৮ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে। এক বাড়িতে হানা দিয়ে ডব্লিউএলসিসিবি কর্তারা অনেকগুলি ধূসর টিয়া উদ্ধার করেছেন। সরকারি মতে, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে ওই সব বিরল পাখির ডিম মূলত বাংলাদেশ ও নেপাল হয়ে দেশে ঢোকে। তার পর সড়কপথে চলে আসে কলকাতায়। পাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানোর ব্যবসার এখন কলকাতায় রমরমা।
শুভব্রত রায় চৌধুরী
কলকাতা-৮
ইতর প্রাণী
ষোলোটি কুকুরছানা হত্যার ঘটনা আমাদের নাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু কুকুর বা অন্য প্রাণীদের প্রতি নৃশংস আচরণ এ দেশে প্রায় নিয়ম। কুকুরকে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং পশুপ্রেমীরা যাতে হাসপাতালে নিয়ে যেতে না পারেন সেই জন্য তাকে গ্যারাজে বন্দি করে রাখা হয়েছে, এই ইতরতাও কলকাতায় ঘটেছে। ‘জাল্লিকাট্টু’তে ষাঁড়কে বিড়ম্বনায় ফেলা তো ‘ঐতিহ্য’, আইনকে কাঁচকলা দেখিয়ে চলেইছে। আর মুরগিদের যে ভাবে সাইকেলের হ্যান্ডেলে উল্টো করে ঝুলিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়, তা মানুষের মতো ইতর প্রাণীই পারে।
অনল দাস
কলকাতা-৩৩
কৃষিঋণ
অভিরূপ সরকার তাঁর ‘সহায়ক মূল্যই আসল অস্ত্র’ (২-১) নিবন্ধে বলেছেন, ২৫ শতাংশেরও কম কৃষক কৃষিঋণের নাগাল পেয়ে থাকেন। আসলে এই দেশে সর্বাধিক ১৫ শতাংশের বেশি কৃষক ঋণ পান না। ব্যাঙ্ক কিন্তু টাকা ফেরতের গ্যারান্টি না পেলে ঋণ দেয় না। যে গ্যারান্টি কেবল সম্পন্ন কৃষকই দিতে পারেন। সেই জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একর প্রতি ৫০০০ টাকা চাষের খরচ হিসেবে সব কৃষককে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। সদ্য জয়ী তিন রাজ্যে কংগ্রেস সরকারের ঋণ মকুবের পরিমাণ এটা প্রমাণ করে, খুব কম সংখ্যক কৃষক ঋণ পাওয়ার জন্যই কম টাকা ঋণ মকুব করতে হয়েছে। আসলে সম্পন্ন কৃষক বাদে আপামর কৃষকদের চাহিদা এখন ফসলবিমা। মোদী সরকার যতই কৃষকদরদি বলে সরকারের ঢাক পেটাক না কেন, সত্য হল প্রান্তিক চাষিদের কাছে ফসলবিমা আজ পর্যন্ত পৌঁছনোর কোনও সদিচ্ছা না আছে কেন্দ্রীয় সরকারের, না আছে রাজ্য সরকারের। অতিবৃষ্টি, খরা ইত্যাদি কারণে ফসল নষ্ট হলে মহাজনের দেনা শোধ করতে না পেরে চাষিরা আত্মহত্যা করেন। এই সব চাষি কৃষিঋণ কোনওদিন পাননি, পাবেনও না। রাজনৈতিক দলগুলো ভোট এলে নানান প্রতিশ্রুতি দেয়। ভোট আসে, যায়। এঁদের অবস্থার কোনও পরিবর্তন হয় না। এঁদের পা মেলাতে হয় লংমার্চে। দাবি কি এঁদের সব পূরণ হয়? বোধ হয় না, কারণ তার পরেও এঁদের কেউ কেউ আত্মহত্যা করেন। মোদ্দা কথা হল— জমি যার যত, ঋণ পায় সে তত। কৃষিঋণ পাওয়া অত সহজ নয়।
কমল চৌধুরী
কলকাতা-১৪০
পুজোর খরচ
পুজো কমিটিগুলোর হিসাবের ওপরে আয়কর দফতরের এ বার থেকে নজরদারি সত্যিই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা কেবল এই পুজোয় গত মরসুমে খরচ হয়েছে জেনে আমাদের চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায়। যে রাজ্যের প্রায় চল্লিশ হাজার কোটি টাকার ঋণ, যথেষ্ট পরিমাণ চাকরির সুযোগ না পেয়ে বেকারত্ব ক্রমে বেড়েই চলেছে, নতুন শিল্প আনা তো দূর সঙ্গে বন্ধ কলকারখানাগুলো নতুন করে অর্থাভাবে চালু করবার অনীহা, নতুন পে-কমিশন আজ অবধি চালু না হওয়ায় বেতনবৃদ্ধি স্থগিত— সেখানে এত ঢালাও পরিমাণ অর্থের বেশ কিছু অংশ জনকল্যাণমূলক কাজে বরাদ্দ করতে সরকারই তো আইন চালু করতে পারে। যেখানে এত টাকার বিনিময়ে কয়েক দিনের উৎসব হয় সেখানে ওই অর্থ বাঁচিয়ে নতুন শিল্পতালুকে বরাদ্দ করলে অসংখ্য মানুষের জীবনে প্রতি মুহূর্তে উৎসব নেমে আসতে পারে। সরকারের সঙ্গে এই সচেতনতা জনসাধারণেরও থাকতে হবে, তা হলে বোধ হয়
এত অস্থির অর্থনৈতিক সঙ্কটে তিন দিনের পুজোর আনন্দকে সকলে মিলে প্রতি তিনশো পঁয়ষট্টি দিনে ভাগ করে নিতে পারব।
শুভজিৎ বসাক
কলকাতা-৫০
কৌশলী
‘এ বছর রাজ্যে পাশ-ফেল ফিরবে কি না সংশয়’ শীর্ষক সংবাদের (৫-১) পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। এ সংশয় অমূলক নয়। রাজ্য সরকারের গতিবিধি এবং মুখের ভাষা অন্তত সে কথাই বলছে। এত দিন রাজ্য সরকার এ ব্যাপারে কেন্দ্রের বিরুদ্ধাচরণ না করে কেন্দ্রের দিকে স্রেফ আঙুল দেখিয়ে নিজের কাঁধ থেকে সব দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে ব্যস্ত ছিল। এ বার আর তা পারছে না। কারণ, সংসদের উভয় কক্ষেই শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯-এর সংশোধনী বিলটি পাশ হয়ে গিয়েছে। এর ফলে পঞ্চম এবং অষ্টম শ্রেণিতে পরীক্ষা পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার অধিকার পেয়েছে সব রাজ্য। ওড়িশা সরকার তো পঞ্চম বা অষ্টম নয়, ইতিমধ্যেই রাজ্য জুড়ে প্রথম শ্রেণি থেকে পাশ-ফেল চালুর ফরমান জারি করেছে।
নতুন শিক্ষাবর্ষ যে হেতু বাস্তবে না হলেও খাতা-কলমে চালু হয়ে গিয়েছে, সে কারণে পাশ-ফেল ব্যবস্থা চালু করার সমস্যার কথা তুলেছে এ রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতর। শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবু বলছেন, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। এ কি কালহরণের কৌশলী পদক্ষেপ নয়? এ নিয়ে এত দিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে কে তাঁকে মানা করেছিল? সংশোধনী বিল তো অনেক আগেই সবার গোচরে এসেছে। লোকসভায় পাশ হওয়ার পর, পাশ হওয়ার অপেক্ষায় অনেক দিন এই বিল রাজ্যসভায় পড়েছিল।
আর একটা প্রশ্ন হল, পাশ-ফেল তুলে দেওয়ার সময় তো বামফ্রন্ট বা তৃণমূল সরকার বিভিন্ন মহলের মতামত নেওয়ার মাধ্যমে এমন গণতান্ত্রিক আচরণ করেনি, অথচ চালুর সময় হঠাৎ কী কারণে সমস্ত মহলের মতামত নেওয়ার চেষ্টা? হঠাৎ অতি-গণতান্ত্রিক হয়ে গেলেন?
জয়শ্রী চক্রবর্তী
সাঁজোয়াল, খড়্গপুর
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy