গণতন্ত্র।
সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন দলীয় কার্যকলাপের উপর ভিত্তি করে বাস্তবে অস্তিত্বহীন ৮৬টি রাজনৈতিক দলের রেজিস্ট্রেশন বাতিল ও ২৫৩টি দলকে নিষ্ক্রিয় বলে অভিহিত করেছে। এই প্রসঙ্গে ‘শুদ্ধিকরণ’ (১৯-৯) শীর্ষক সম্পাদকীয়তে বড় দলগুলির দুর্নীতির পরিপ্রেক্ষিতে এই ব্যবস্থা করা নিতান্তই ‘প্রসাধনিক’ কি না, এই নিয়ে যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, সেটি খুবই যুক্তিসঙ্গত। আর্থিক বেনিয়ম, কর ফাঁকি এবং কিছু ক্ষেত্রে বড় রাজনৈতিক দলেরই সৃষ্টি করা বিভিন্ন স্বীকৃত বা অস্বীকৃত এই ছোট দলগুলো ভোটারদের বিভ্রান্ত করার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার উপর যে আঘাত হানে, সেটা আটকাতে এই পদক্ষেপ নির্বাচন কমিশনের প্রাথমিক ভাবে যথার্থ বলে মনে হয়। কোনও নির্বাচনে একটি আসনে প্রদত্ত ভোটের ন্যূনতম এক শতাংশ ভোট না পেলে পরবর্তী একটি নির্বাচনের জন্যে সংশ্লিষ্ট দলকে শুধুমাত্র সেই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বিরত রাখার জন্য নির্বাচনী বিধি সংশোধন করা হোক। আবার কোনও নির্বাচিত প্রতিনিধি আর্থিক বা যে কোনও ফৌজদারি অভিযোগের ক্ষেত্রে দোষী প্রমাণিত হলে, পরবর্তী নির্বাচনে অভিযুক্ত ব্যক্তির দলের ক্ষেত্রেও একই পদক্ষেপ করা হোক। আশা করি, এই ধরনের সাহসী পদক্ষেপ আগামী দিনে ভারতের গণতন্ত্রকে আরও মজবুত করবে।
অশোক দাশ, রিষড়া, হুগলি
পুনরুজ্জীবন
কোভিডকালে প্রায় তিন বছর ধরে হোটেল এবং পর্যটন শিল্প ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ছোট-বড় সব হোটেলে করোনার আগে পর্যন্ত প্রচুর কর্মচারী দক্ষ এবং অদক্ষ বিভাগে শ্রমিক ও কারিগর হিসাবে সংসারের ভাত-রুটি জোগাড় করতে সমর্থ হয়েছেন। কিন্তু অতিমারির পরে তাঁদের অনেকেই কাজ হারান। শিল্পের সঙ্গে যুক্ত যানবাহন যেমন, অটো, টোটো, টুরিস্ট বাস বা গাড়ির কর্মী ও মালিকরা চরম আর্থিক সঙ্কটের সম্মুখীন হন।
হোটেল শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরাও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কায় চিন্তিত। এ ছাড়া কোনও বিশেষ পর্যটনস্থলে সেই জায়গার অনেক শিল্পকলার ব্যবসা-বাণিজ্যের কারণে ভূমিসন্তানদের উপকার হয়। এ রাজ্যের ক্ষেত্রে যেমন উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, বিষ্ণুপুরের তাঁত শিল্প, বাঁকুড়ার ঘোড়া ও টেরাকোটার নানা শিল্পসম্ভার বা পুরুলিয়ার চড়িদা অঞ্চলের ছৌ নাচের মুখোশের কথা। অন্য দিকে, কাশ্মীরের শাল ও গালিচা শিল্পও বিখ্যাত।
খবরে জানতে পারলাম, হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় সমস্ত রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার সম্মিলিত ভাবে এই শিল্পের পুনরুজ্জীবনের বিষয়ে আলোচনায় বসেছেন। প্রশাসনের সক্রিয় সহযোগিতা এই শিল্পের পুনরুজ্জীবনে সাহায্য করবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
স্মৃতি শেখর মিত্র, আসানসোল, পশ্চিম বর্ধমান
ফুটবলের দুর্দিন
এখন আর পুরোপুরি গলা ছেড়ে গাইবার জো নেই, ‘সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল’! দর্শক হিসাবে এখনও অবশ্যই বাঙালির কাছে সেরা ফুটবলই, কিন্তু খেলোয়াড় হিসাবে ফুটবলে বাঙালি এখন কোথায়? জাতীয় দলের প্রথম এগারো জনের টিমে নিয়মিত বঙ্গসন্তানদের দেখা না গেলেও টিমে দেখা যাচ্ছিল রিজ়ার্ভ বেঞ্চ আলোকিত করতে। এ বার সেটাও গেল। এ বারের দলে এক জনও বাঙালি খেলোয়াড় নেই! নতুন বাঙালি ফুটবলার সভাপতির জমানায় বাংলার এই হাল!
অথচ, বাঙালি ফুটবলার ছাড়া ভারতীয় দল এক সময় কল্পনা করা যেত না। ১৯৪৮ থেকে ১৯৬০, যে চারটে অলিম্পিক্সে ভারতীয় ফুটবল দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে, তাতে বাংলার খেলোয়াড়দের আধিপত্য ছিল। ১৯৪৮-এ নাগাল্যান্ডের ফুটবলার ডাক্তার টি আও বাদে বাকি তিনটি অলিম্পিক্সেই অধিনায়ক ছিলেন তিন জন নিখাদ বঙ্গসন্তান। তাঁরা যথাক্রমে— শৈলেন মান্না (১৯৫২), বদ্রু বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯৫৬) এবং পিকে বন্দ্যোপাধ্যায় (১৯৬০)। দু’বার এশিয়াডে সোনা পাওয়া দলের অধিনায়ক ছিলেন যথাক্রমে ১৯৫১ সালে শৈলেন মান্না আর ১৯৬২-তে চুনী গোস্বামী। ১৯৭০ সালে শেষ যে বার এশিয়ান গেমস থেকে (ব্রোঞ্জ) পদক আসে, সে বার ক্যাপ্টেন ছিলেন সৈয়দ নইমুদ্দিন। হায়দরাবাদে জন্ম হলেও খেলেছেন এবং পাকাপাকি ভাবে থেকে গিয়েছেন কলকাতায়। প্রসঙ্গত, নইমুদ্দিন হলেন ‘দ্রোণাচার্য’ পুরস্কার পাওয়া ফুটবল প্রশিক্ষক।
গত শতকের সত্তর-আশির দশকে দেখা গিয়েছে ভারতীয় দলের প্রথম একাদশের হয়ে নয়-দশ জন, এমনকি এগারো জন বাঙালি ফুটবলারও মাঠে নেমেছেন। আর আজ? পরিকাঠামোর অভাব। ফুটবলকে ভালবেসে গ্রাম-গঞ্জ থেকে খেলোয়াড় তুলে আনতেন যে ফুটবলপাগল মানুষগুলো, তাঁদেরও আর দেখা যায় না। ক্লাবে ক্লাবে ‘স্পটার’রাও বিলুপ্ত। কলকাতার দলগুলোর খেলোয়াড় তুলে আনায় অনীহা। ক্লাবগুলোতে বয়সভিত্তিক দল, অ্যাকাডেমি— কিছুই নেই। ট্রফি জেতার চটজলদি সমাধানের লক্ষ্যে ভিন্ রাজ্য বা ভিন্ দেশ থেকে খেলোয়াড় এনে দল ভারী করা হচ্ছে।
আরও একটা বড় কারণ, ক্রিকেটে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের অবিস্মরণীয় উত্থান এবং ধারাবাহিক পারফরম্যান্স। সৌরভের সাফল্য, গ্ল্যামার, অধিনায়কত্ব দেখে বাঙালি মা-বাবারা ছেলেদের সৌরভ বানাতে গেলেন। চাহিদা থাকায় জোগান হিসাবে গ্রামে-গঞ্জে অলিতে গলিতে ক্রিকেট কোচিং সেন্টার গজিয়ে উঠল। বেশির ভাগ সেন্টারের কোচেরাই প্রথাগত প্রশিক্ষণ দেওয়ার অ-আ-ক-খ পর্যন্ত জানেন না। তাই, ব্যাট-প্যাড কাঁধে সেন্টারে আসা ছোট ছোট ছেলেগুলো মাঠে প্রাণপণ লড়াই করেও সে ভাবে দাগ কাটতে পারল না। ও দিকে ফুটবলের স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ত একটা সাপ্লাই চেন ছিল বাংলার অলিতে গলিতে, ক্রিকেটার হওয়ার নেশায় সেটা বন্ধ হয়ে গেল। শেষে না তৈরি হল ক্রিকেটার, না হল ফুটবলার। ফল হিসেবে, সব ক্ষেত্রের মতো ফুটবলেও পিছোতে পিছোতে এখন আমরা লাস্ট বয়। আর ফুটবলের ফার্স্ট বয় এখন উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলো।
পার্থ নন্দী, শেওড়াফুলি, হুগলি
পুলিশের কর্তব্য
‘ক্ষমতার হুঙ্কার’ (১৬-৯) শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রসঙ্গে বলতে চাই, প্রতি বছর ২১ জুলাই স্মরণে, তৃণমূল তথা শাসক দল ঘটা করে তৎকালীন পুলিশের এলোপাথাড়ি গুলিচালনার ঘটনায় নিহত তেরো জন শহিদের উদ্দেশে রাজ্য জুড়ে বিরাট স্মৃতি-তর্পণের আয়োজন করে থাকে। এই প্রসঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুলিচালনা বিষয়ক মন্তব্যটি কি নির্লজ্জ নয়? পুলিশ ম্যানুয়াল অনুযায়ী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার চরম পরিস্থিতির মোকাবিলা এবং মারাত্মক উস্কানির মধ্যেও, পুলিশ কিন্তু অপরাধীর মাথা বা কপালকে নিশানা করে গুলি করতে পারে না। গুলি যদি চালাতেই হয়, তবে তা করতে হবে পা বা হাঁটুর নীচের দিকে নিশানা করে। পুলিশ ম্যানুয়ালের ২১৭ নম্বর ধারায় এর ব্যাখ্যাও আছে। পুলিশের গুলির উদ্দেশ্য হবে হত্যা নয়, ছত্রভঙ্গ বা নিবৃত্ত করা।
১৯৯৩ সালে ২১ জুলাইয়ের ঘটনার একটু পুনরাবৃত্তি করা যাক। সে দিনের রাইটার্স বিল্ডিং বা মহাকরণ অভিযানে এক সময়ে রেড রোডে পুলিশের ভ্যানে আন্দোলনকারীরা আগুন ধরিয়ে দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশকে লক্ষ্য করে চলে যথেচ্ছ ইট-পাথরবৃষ্টিও। পুলিশও মারমুখী হয়ে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে কংগ্রেসের তেরো জন যুব-কর্মীকে হত্যা করে। পরবর্তী কালে প্রবীণ আইপিএস অফিসারদের একাংশ পুলিশের এমন নির্বিচার গুলিচালনার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন।
পৃথ্বীশ মজুমদার, কোন্নগর, হুগলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy