স্কুলের পোশাকের সঙ্গে মিশে আছে স্কুলের ঐতিহ্য ও প্রাক্তনীদের পরশ। নিজস্ব চিত্র।
আর্যভট্ট খানের প্রতিবেদন (‘পোশাকের রং বদলে নারাজ, চিঠি শহরের ৩১টি স্কুলের’, ১৯-১২) পড়ে জানতে পারলাম, বেশ কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষ ঐতিহ্য জলাঞ্জলি দিতে নারাজ। স্কুলের পোশাকের সঙ্গে মিশে আছে স্কুলের ঐতিহ্য ও প্রাক্তনীদের পরশ। স্কুল প্রতিষ্ঠার দিনে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়, তাঁদের হাতে প্রজ্বলিত হয় প্রদীপ শিখা। তার আলোয় নতুন করে পথ চলা শুরু হয় বিদ্যালয়ের। বিদ্যোৎসাহী মানুষের মননের স্বাক্ষর পোশাক এবং মনোগ্রামও বহন করে। আজ সরকারি ফতোয়ায় এত কালের নিয়ম-নীতি, ঐতিহ্য, হার্দিক সম্পর্ক সব হারাতে বসেছে। একে একে অধিকাংশ স্কুল অনিচ্ছা সত্ত্বেও নির্দেশ মানতে বাধ্য হচ্ছে ভয়ে-শঙ্কায়। কিছু বাস্তব সমস্যারও সম্মুখীন হতে হচ্ছে। প্রথমত, আমরা, যাঁরা প্রাক্তন মাস্টারমশাই, তাঁরা আশেপাশের দশটি স্কুলের ছেলেমেয়েদের ইউনিফর্মের রং ও মনোগ্রাম জানি। পড়ুয়া কোন স্কুলের, তাদের দেখে জানতে চেষ্টা করি। এখন আর সেটা সম্ভব হবে না।
দ্বিতীয়ত, অনেক ছাত্রছাত্রী এই ইউনিফর্ম যত্নের সঙ্গে রেখে দেয়, আমৃত্যু। তার বাবা-কাকা বা মা-মাসি হয়তো পড়েছেন একই স্কুলে। বিদায়লগ্নে ইউনিফর্মে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অটোগ্রাফও নিয়ে রাখে তারা। সেই আত্মিক সম্পর্ক আর তৈরি হবে না, কোথায় যেন একটা ফাটল ধরে গিয়েছে। তৃতীয়ত, ছাত্র-ছাত্রীদের আত্মপরিচয়ের যে বোধ তৈরি হয়, তার একটা মাত্রা হল স্কুল। প্রাক্তনীদের (শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে ছাত্র-ছাত্রী) বিদ্যালয়ে উপস্থিতি, এমনকি নানান অনুষ্ঠানে আসা-যাওয়া, সব কিছুতে স্কুলের ইউনিফর্মের একটা বিশিষ্ট ভূমিকা থাকে। চতুর্থত, একই স্কুলে দু’রকম ইউনিফর্ম চালু থাকবে, পঞ্চম থেকে অষ্টম এক রকম, নবম থেকে দ্বাদশ আর এক রকম। দু’রকম পোশাক-বিধি ভাল দেখায় না। সরকার বা মধ্যশিক্ষা পর্ষদ যেন এই বিষয়টি নিয়ে ভাবে।
কর্মের খরা
‘অঙ্গনওয়াড়ি পরীক্ষায় এমএ-ও’ (১৯-১২) খবরটি পড়ে স্নাতক বা স্নাতকোত্তীর্ণদের দুরবস্থা কোন নিরিখে দেখব, ভাবতে গিয়ে মাথা গুলিয়ে গেল। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীর পদের জন্য যোগ্যতা মাধ্যমিক পাশ, সহায়ক পদের জন্য অষ্টম শ্রেণি পাশ। সেখানে জলপাইগুড়ি জেলায় উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্নদের দরখাস্ত করতে হচ্ছে কেন? প্রকৃতপক্ষে, এর মধ্য দিয়ে দুরবস্থা প্রকট হচ্ছে রাজ্যের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে। আবেদনপত্র জমা পড়েছে ২০১৯-এ, পরীক্ষা হল তিন বছর পর। এই তিন বছরে আরও কত সহস্র কর্মপ্রার্থী স্কুল-কলেজ পাশ করে বেরিয়েছে, তার হিসাব তো সরকারের কাছেই আছে। একে মানবসম্পদ বা জনশক্তির অপপ্রয়োগ, না কি না-প্রয়োগ, কী বলা উচিত! পরীক্ষার্থীদের মধ্যে বি এড, ডি এড ডিগ্রিধারীরাও আছেন। এর আগে এনআরএস হাসপাতালে ডোম পদের জন্যও উচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্নরা আবেদন করে খবরের শিরোনামে উঠে এসেছিলেন। এতে তো রাজ্যে কর্মনিযুক্তির খরাই ফুটে উঠছে। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ জনগণের রায় নিয়ে ক্ষমতার আসনে বসে শুধু দলের রাজনৈতিক ক্ষমতা বিস্তারের কাজে সময় কাটালে, বা রাজনৈতিক কচকচানি শুনিয়ে জনগণকে ভোলাতে চাইলে, সামাজিক উন্নয়ন ব্যাহত হয়। এই মেধাবী, যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মপ্রার্থীরা কোন দিকে তাকিয়ে জীবন কাটাবেন? না ভারী শিল্প-কারখানা স্থাপন হয়ে কাজের সুযোগ বাড়ছে, না স্কুল-কলেজের নিয়োগ স্বচ্ছতার সঙ্গে হচ্ছে। শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতী, বা বৃত্তিমূলক শিক্ষায় শিক্ষিত লোকেদের উপযুক্ত কাজ দেওয়ার লক্ষ্যে আরও উদ্যোগী হোক সরকার।
দূষিত গঙ্গা
‘সন্ধ্যারতি সংবাদ’ (৬-১২) শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রসঙ্গে কিছু বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। হরিদ্বারের, বারাণসীর গঙ্গার ঘাটের সন্ধ্যারতি অবশ্যই মনোগ্রাহী এবং অতি মনোরম পরিবেশের মধ্য দিয়ে তা সুসম্পন্ন হয়।
কিন্তু গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ থেকে যে নদীর উৎপত্তি, সেই পতিতপাবনী গঙ্গা যে সব জনবসতির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে, যার জলধারায় মানুষ নানা ভাবে উপকৃত হয়েছেন, যেমন— চাষাবাদ, ব্যবসা, বাণিজ্য, মৎস্যজীবীদের রুজিরোজগার ইত্যাদি আরও কত কিছু, সেই মানুষরা কতটুকু গঙ্গার যত্ন নিয়েছেন? দুর্ভাগ্যজনক ভাবে, আমরা যত বেশি ‘গঙ্গা মাইয়া’র পূজাপাঠে বিশ্বাসী, তার জলের পরিশোধন বিষয়ে তেমন উদ্যোগী নই। যে নদীকে আমরা মাতৃজ্ঞানে পুজো করি, সেই স্রোতস্বিনী গঙ্গার ধারা যাতে অবরুদ্ধ না হয়, জল যাতে দূষণমুক্ত হয়, সে বিষয়ে তেমন ফলপ্রসূ কার্যকর উদ্যোগ করা হয়েছে কি?
একদা কেন্দ্রীয় সরকারের গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান-এ নাকি গঙ্গার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রভূত অর্থ বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, হরিদ্বার থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ঘাট পূতিগন্ধময়! আদি গঙ্গার কথা যত কম বলা যায় ততই ভাল। বিশ্বের পঞ্চম দূষিত নদী গঙ্গা। গঙ্গার তলদেশ পলি পড়ে ভরাট হওয়ার ফলে নাব্যতা ক্রমশ কমছে এবং জলধারণ ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার ফলে, অতিবৃষ্টিতে দুই পার প্লাবিত হয়ে বন্যায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। গঙ্গার জলকে দূষণমুক্ত করতে অনেক লেখালিখির পরেও কারও হুঁশ ফেরেনি।
কলকাতার গঙ্গার ঘাটের সন্ধ্যারতির ব্যবস্থা স্বাগত। কিন্তু কমপক্ষে ঘাটগুলির পরিচ্ছন্নতার দিকেও দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। অনেক ঘাট দুষ্কৃতীদের আড্ডাস্থল হয়ে উঠেছে। সে দিকেও পুলিশ প্রশাসনের নজরদারির দরকার আছে।
ইন্টারভিউ কেন?
টেট পরীক্ষায় পাশ করা পরীক্ষার্থীকে ইন্টারভিউয়ে ফেল করানোর অধিকার কতটা যুক্তিসঙ্গত? বি এড অথবা ডিএল এড ডিগ্রি যিনি পেয়েছেন, তার পর টেট পরীক্ষায় পাশ করেছেন, ইন্টারভিউ তাঁর কোন যোগ্যতা পরীক্ষা করে? তবে কি ইন্টারভিউয়ের ওই পাঁচ-সাত মিনিটের মধ্যেই বোঝা যাবে যে,ওই পরীক্ষার্থীর শিক্ষা, মার্কশিট, ডিগ্রি, সবটাই মিথ্যা? সে তো এক ভয়ঙ্কর সম্ভাবনা। আর তা হলে তো আমাদের শিক্ষা, পরীক্ষার পরিকাঠামোটারই নাক কাটা যাবে। পরীক্ষকদের আত্মাভিমান,আক্রোশ, স্বার্থ ইত্যাদি যে ইন্টারভিউয়ের সময়ে কাজ করবে না, তারই বা কী নিশ্চয়তা আছে? যদি চাকরির ক্ষেত্রে পাঁচ মিনিটের ইন্টারভিউয়ের এতই গুরুত্ব, তবে সরাসরি ইন্টারভিউ নেওয়া হয় না কেন? যদি চাকরিক্ষেত্রে শারীরিক সক্ষমতা বা ‘ফিটনেস’ প্রয়োজন হয়, তা হলে মেডিক্যাল টেস্ট হতে পারে। যদি ব্যক্তির পরিচয় নির্ণয় করার প্রয়োজন হয়, তাঁর আইডেন্টিটি টেস্ট করা যেতে পারে। কিন্তু যাঁর পরীক্ষায় পাশ করার যোগ্যতা আছে, তাঁকে আবার ইন্টারভিউয়ে ফেল করানোটা শুধু অবিচারই নয়, অপমানও বটে।
জীর্ণ টাওয়ার
দক্ষিণ বাঁকুড়ার রানিবাঁধ-এর কাছে অবস্থিত সুতান জঙ্গলের হাতছানি এড়িয়ে যাওয়া ভ্রমণপিপাসুদের পক্ষে কঠিন। কিন্তু জঙ্গলের মাঝখানে সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ারটির জীর্ণ অবস্থা সম্পর্কে অনেকেই ওয়াকিবহাল নন। এর উপরে ওঠার পর কম্পন স্পষ্ট ভাবে অনুভূত হয়। নেই কোনও রেলিং। বিভিন্ন জায়গায় প্লাস্টার খুলে রড বেরিয়ে পড়েছে। প্রশাসনের উদাসীনতা অবাক করার মতো। টাওয়ার-এর পাশে বা গায়ে নেই কোনও সাবধান-বার্তা। অবিলম্বে পুরনো টাওয়ারটির বদলে নতুন টাওয়ার বসানো হোক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy