Advertisement
০৪ মে ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: চেতনার বাতিঘর

সব মানুষই বুদ্ধিজীবী, এ কথা তাই বলা যায়, কিন্তু সমাজে সকলের ভূমিকা বুদ্ধিজীবীর নয়।

শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৪:২৫
Share: Save:

ইটালির বামপন্থী বুদ্ধিজীবী, দার্শনিক, সাংবাদিক আন্তোনিয়ো গ্রামশি-কে মুসোলিনি কারারুদ্ধ করেছিলেন (১৯২৬-৩৭)। গ্রামশি তাঁর কারাগার জীবনের নোটবইতে লিখেছিলেন, “সব মানুষই বুদ্ধিজীবী, এ কথা তাই বলা যায়, কিন্তু সমাজে সকলের ভূমিকা বুদ্ধিজীবীর নয়।” জাগরী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দলের বাইরে স্বভূমিতে’ (৩০-১) নিবন্ধটি পড়ে মনের ভাবনাগুলি দোলাচলে পড়ল। সমাজবদ্ধ জীব হিসেবে ব্যক্তিমানুষ সমাজেরই একটি অংশ। তবু জীবনপথের পথিক কি একলা পথ চলতে পারে! অথচ গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে সেই পথিকের ভাবনাচিন্তাগুলি যে বদ্ধ জলাশয়ে গুমরে মরবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়? স্বাধীন মত প্রকাশের প্রেরণায় অস্বস্তিকর প্রশ্ন তুলে নিজেকে বিপন্ন করার অর্থ গোষ্ঠীচ্যুতিরই নামান্তর। সমাজে প্রতিনিয়ত আমরা লাল-হলুদ-নীল-সবুজ-কমলা চৌখুপিতে বিভক্ত হয়ে, নিবন্ধীকৃত গোষ্ঠীর ঘরের লোক হয়ে ওঠার তাগিদে স্বাধীন চিন্তাভাবনাগুলিতে জল ঢেলে দিই। তাই হাততালি বা চুনকালির পরোয়া না করে নিষ্কম্প থেকে যাওয়ার মানুষ সমাজে বাড়ন্ত। রবীন্দ্রনাথের লেখনী যখন আগ্রাসী দেশপ্রেমের বিরুদ্ধেও কলম ধরে, তখন দেশদ্রোহী তকমা লাগার ভয়ে বহু বুদ্ধিজীবীর কলম নিস্তব্ধতার আঁচড়েই সীমাবদ্ধ থাকে।

আমার ব্যক্তিমনও একলা পথ চলার দ্বন্দ্বে দীর্ণ। গোষ্ঠীভুক্ত জীব হতে না পারার দোষে দুষ্ট মন নিয়েও আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়ানোর মন্ত্রে নিজেকে উদ্বুদ্ধ করি। নির্ভীক মন আশেপাশের শঙ্কিত চেতনার দোলায় কখনও বা টাল খায়। তবুও সমাজে থেকে যাওয়া সামান্য কিছু বুদ্ধিজীবী মানুষের নিঃস্বার্থ মনের চেতনা, বোধের সলতেটুকু আমার ক্ষুদ্র নাগরিক মনে প্রজ্বলিত রাখার চেষ্টা করে যাই। শ্রদ্ধেয় শম্ভু মিত্র, শঙ্খ ঘোষের মতো ব্যক্তিত্ব চেতনার বাতিঘর হয়ে আমার ব্যক্তিসত্তাকে প্রভাবিত করেন।

সঞ্জয় রায়, দানেশ শেখ লেন, হাওড়া

বাঙালিয়ানা

‘দাঁড়াও পথিকবর...’
(২৬-১) পড়ে অবাক হইনি। ভোটের বাজারে কেন্দ্র ও রাজ্যের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল মানুষের আবেগকে ভোটবাক্সে প্রতিফলিত করার চেষ্টা করছে। যে স্বামীজি উদারপন্থী মুক্তমনা ছিলেন, কাশ্মীরের মুসলমান মাঝির বালিকা কন্যাকে মাতৃজ্ঞানে কুমারী পূজা করেছিলেন, সেই স্বামীজিকে হিন্দুত্বের সঙ্কীর্ণ গণ্ডিতে বেঁধে ফেলা হচ্ছে।

এরা প্রয়োজনে বিদ্যাসাগরের নাম স্মরণ করে, আবার সুযোগমতো তাঁর মূর্তিও ভাঙে। অবশ্য কার দ্বারা এই অপকর্মটি সাধিত হয়েছে, তা জানা যায় না। কারণ উভয় দলই পরস্পরকে দোষারোপ করে। অথচ, মিলটনের সঙ্গে তুলনীয় অমিত্রাক্ষর ছন্দের স্রষ্টা মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ১৯৮তম জন্মদিনে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ-এর প্রাক্তন সম্পাদক শক্তিসাধন মুখোপাধ্যায়-সহ কয়েক জন প্রবীণ নাগরিক ছাড়া মল্লিকবাজারে কবির সমাধিসৌধে মালা দিতে আর কাউকে দেখা গেল না। মধুসূদন দত্ত রাবণকে পুরুষকারের প্রতীক বলেছেন ও মেঘনাদের দেশপ্রেমের প্রশংসা করেছেন। মেঘনাদবধ কাব্য-এ যখন বিভীষণ পথ দেখিয়ে লক্ষ্মণকে ইন্দ্রজিতের যজ্ঞগৃহে নিয়ে আসেন, তখন মেঘনাদের আক্ষেপ, “নিজ গৃহপথ তাত দেখাও তস্করে?” একটু পরে আবার প্রশ্ন ছুড়ে দেন, “কে বা সে অধম রাম?” ভোটে যারা রামকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে, তাদের পক্ষে এতটা হজম করা কঠিন। যে বাঙালি কবি লিখেছিলেন, “(জননীর কোলে শিশু লভয়ে যেমতি বিরাম) মহীর পদে মহানিদ্রাবৃত, দত্ত কুলোদ্ভব কবি শ্রীমধুসূদন”— কয়েক বছর আগে তাঁর জন্মদিনে রাজ্য সরকারের অনুষ্ঠানে ছবি ছিল তরুণ রবীন্দ্রনাথের! আর এক নেতা তো ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল কাব্যের সেই বিখ্যাত উক্তি, “আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে”-কে জীবনানন্দ দাশের কবিতা বলে নিজের বাঙালিয়ানা জাহির করেছেন!

ভোট কুক্ষিগত করার অস্ত্র নয় বলে সমাজ সংস্কারক রামমোহন রায় বা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও উচ্চারিত হয় না।

শিখা সেনগুপ্ত, কলকাতা-৫১

মহৎ বন্ধুত্ব

নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মজয়ন্তীর ‘পরাক্রম’ দেখা গেল। পাশাপাশি অবহেলায় পেরিয়ে গেল তাঁর অগ্রজ সুহৃদ দিলীপকুমার রায়ের ১২৫তম জন্মদিন। তিনি (২২ জানুয়ারি, ১৮৯৭-৬ জানুয়ারি, ১৯৮০) ছিলেন সুভাষের চেয়ে এক দিনের বড়। নাট্যকার-সঙ্গীতকার দ্বিজেন্দ্রলাল-পুত্র দিলীপকুমারও ছিলেন সঙ্গীতজ্ঞানী, সুরকার, গীতিকার ও গায়ক। প্রেসিডেন্সি কলেজের দুই ছাত্র-বন্ধু উচ্চশিক্ষার্থে পাড়ি দেন বিলেতে। সুভাষের লক্ষ্য আইসিএস আর দিলীপের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ট্রাইপস’। শিক্ষাকালে দিলীপ শিক্ষিত হতে থাকেন পাশ্চাত্য সঙ্গীতে। গানের টানেই আয়ত্ত করেন ফরাসি-জার্মান-ইটালীয় ভাষা। সান্নিধ্য পান রোমাঁ রল্যাঁ, বার্ট্রান্ড রাসেল, হারমান হেস প্রমুখ মনীষীর।

দেশে ফিরে সুভাষের সঙ্গে সক্রিয় রাজনীতিতে যোগ দিতে চান। আপত্তি জানান প্রিয় বন্ধু— “তুমি তোমার গানের... মধ্যে দিয়ে আমাদের দেশের কাজ করবে... অশ্রান্তভাবে গাইবে উদ্দীপক গান... মাতিয়ে দেবে সবাইকে গান গেয়ে।” দেশ জাগানোর কাজে সঙ্গীতের নতুন ধারায় মাতলেন দিলীপ।

১৯২৬-এর ৯ অক্টোবর মান্দালয়ে জেলবন্দি সুভাষ চিঠি লিখছেন, “বন্ধু, সারা দেশকে সঙ্গীতের বন্যায় প্লাবিত করে দাও, আর যে সহজ আনন্দ আমরা প্রায় হারিয়ে বসেছি তা আবার জীবনে ফিরিয়ে আনো। যার হৃদয়ে আনন্দ নেই, সঙ্গীতে যার চিত্ত সাড়া দেয় না, তার পক্ষে জীবনে বৃহৎ বা মহৎ কিছু সম্পাদন করা কখনও কি সম্ভব?” দুই অসামান্য মানুষের সূত্রে স্মরণ করতে হয় এক মহৎ বন্ধুত্ব, বন্ধুত্বের মহত্ত্ব।

দেবজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-৭৫

কুনাট্যের জবাব

এই সময়ের অত্যন্ত জরুরি দাবিগুলি স্থান পেয়েছে ‘উত্তরণের দাবিপত্র’ (১-২) নিবন্ধে। রাজনীতিকদের সাম্প্রতিক কুনাট্যরঙ্গ দেখে নাভিশ্বাস উঠেছে আমাদের। নিদারুণ প্রয়োজনের বিষয়গুলির থেকে নজর ঘুরিয়ে দিয়ে কিছু অর্থহীন শব্দবন্ধ নিয়ে খেলা, আর প্রতিদ্বন্দ্বীর প্রতি কুৎসিত তর্জনগর্জন, অসৌজন্য প্রদর্শন, এতেই মেতে উঠেছেন রাজনীতিকরা। সাধারণ মানুষের পছন্দ-অপছন্দের তোয়াক্কা করছেন না তাঁরা। নির্বাচন দোরগোড়ায়, এমন সময় সংবাদমাধ্যম রাজনীতিকদের সচেতন করতে সক্রিয় ভূমিকা নিক। প্রতি দিন শুধু রাজনীতির সার্কাসের খবর না ছেপে এই মুহূর্তের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কথাগুলি রাজনীতির নাটুকে কুশীলবদের কানে বার বার এমন করেই পৌঁছে দিক।

সত্যরঞ্জন দাস, তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর

তিন টাকা

‘সংসদ-ক্যান্টিনে বুফে এখন ৭০০ টাকা’ (২৯-১) সংবাদের প্রেক্ষিতে উল্লেখ্য, ভর্তুকি ওঠার পরেও খাবারের যা দাম ধার্য হয়েছে, তা দিল্লির কোনও সাধারণ মানের হোটেলে পাওয়া অসম্ভব। একটা রুটি তিন টাকা হলে, প্রশ্ন ওঠে, ক্যান্টিনে বিদ্যুৎ, জল বা পরিকাঠামো কি নিখরচায় মিলছে?

মোটা অঙ্কের বেতন এবং ভাতা ছাড়াও অধিবেশন এবং সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থিত থাকার জন্য দৈনিক ভাতাও মেলে সাংসদদের। তা হলে জনগণের টাকায় তাঁদের এই বাড়তি সুবিধা দেওয়া কেন? অতিমারি আবহে বয়স্ক নাগরিকদের ট্রেন ভাড়ায় ছাড় সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। রান্নার গ্যাসে ভর্তুকিও প্রায় ওঠার মুখে। লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধিতে জনগণের নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড়। সস্তার নন-ভেজ বুফে মাননীয় সাংসদদের বিস্বাদ ঠেকবে কি?

ধীরেন্দ্র মোহন সাহা, কলকাতা-১০৭

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE