Advertisement
১৯ মে ২০২৪
India-China Border Conflict

সম্পাদক সমীপেষু: সীমান্ত সঙ্কট

সেনার গতিবিধি নিশ্চয়ই জনগণের জানার অধিকার নেই, কিন্তু নিজের দেশের উপর আক্রমণ সম্বন্ধে জানার অধিকার অবশ্যই আছে।

ভারতীয় সেনা চিনকে যোগ্য প্রত্যুত্তর দিয়েছে, ভবিষ্যতেও দেওয়ার জন্য তৈরি আছে।

ভারতীয় সেনা চিনকে যোগ্য প্রত্যুত্তর দিয়েছে, ভবিষ্যতেও দেওয়ার জন্য তৈরি আছে। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৩ ০৫:৩১
Share: Save:

‘তাওয়াং: প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন-চেষ্টা মানল কেন্দ্র’ (১৪-১২) শীর্ষক সংবাদ উদ্বেগজনক। বিগত কয়েক বছর ধরেই চিনা আগ্রাসনের এই ছবি দেখা যাচ্ছে। গালওয়ান, তাওয়াং ইত্যাদি স্পর্শকাতর জায়গায় বার বার চিন হামলা চালাচ্ছে, এবং নিজেদের দখলে নেওয়ার ধারাবাহিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা গর্বিত, ভারতীয় সেনা যোগ্য প্রত্যুত্তর দিয়েছে, ভবিষ্যতেও দেওয়ার জন্য তৈরি আছে।

কিন্তু সন্দেহ জাগে কেন্দ্রীয় সরকারের আচরণে। সংবাদ গোপন রাখার এমন চেষ্টা কেন! সেনার গতিবিধি নিশ্চয়ই জনগণের জানার অধিকার নেই, কিন্তু নিজের দেশের উপর আক্রমণ সম্বন্ধে জানার অধিকার অবশ্যই আছে। অথচ, গত ৯ ডিসেম্বরে ঘটে যাওয়া ঘটনা স্বীকার করা হল ১৩ ডিসেম্বরে, তা-ও আবার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার, এবং সংসদে বিরোধী দলগুলোর সম্মিলিত দাবির পরে। দেশের স্বার্থ বিঘ্নিত হলে দলমত নির্বিশেষে দেশের প্রতিটি নাগরিকের উচিত অন্যান্য সমস্যা দূরে সরিয়ে রেখে দেশের সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করা। সেই সঙ্গে সরকারেরও উচিত, ঢাক ঢাক গুড়গুড় না করে বিরোধী দলের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করা।

দেশ কখনও কোনও নির্দিষ্ট দলের নয়। রাজনৈতিক দলের সরকার আসবে যাবে। কিন্তু দেশ জনগণেরই থাকবে। বিদেশি শক্তি যখন আক্রমণ করে, তখন সরকারের উচিত সমস্ত স্বীকৃত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করা। ঘটনা চেপে যাওয়ার চেষ্টা হলেই বরং তা সন্দেহের জন্ম দেয়। সংসদে সরকার কেন আলোচনা করতে চাইল না, সেটা এক রহস্য। পর পর তিন দিন বিরোধীদের দাবি উড়িয়ে দিয়ে সংসদে আলোচনার কোনও সুযোগ দেওয়া হল না। হয়তো কোনও অপ্রিয় প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার দায় এড়াল কেন্দ্র, কিন্তু এই আচরণের জন্য অনেক ভ্রু কুঞ্চনেরও জন্ম দিয়ে গেল।

সুরজিত কুন্ডু, উত্তরপাড়া, হুগলি

হিন্দুত্বের অর্থ

অমিতাভ গুপ্তের প্রবন্ধ ‘সহাবস্থান, কিন্তু আধিপত্য’ (৯-১১) এবং সেই পরিপ্রেক্ষিতে লেখা আনন্দ মোহন দাসের ‘হিন্দুত্বের মানে কী’ (১৪-১২) শীর্ষক পত্রখানি পড়লাম। প্রবন্ধের বক্তব্য যতখানি যুক্তি ও তথ্যপূর্ণ, পত্রখানি ঠিক তার উল্টো। পত্রলেখক যুক্তি ও তথ্যের চেয়ে আবেগকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। উল্লেখ করেছেন, “সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবত বলেছেন যে, ভারতবর্ষের সকলের ডিএনএ এক।” বর্তমানে মোহন ভাগবত এমন তত্ত্ব আওড়াচ্ছেন কেন? ডিএনএ গবেষণা এমন কোনও ইঙ্গিত দেয়নি। কেন এমন একটা ‘মিথ’ বা কল্পকাহিনি তৈরির প্রয়োজন পড়ছে ভারতে? পত্রলেখক নানা ধরনের উপাসনা ও উপাসকদের উদাহরণ টেনে সিদ্ধান্তে এসেছেন, “হিন্দু ধর্মে কোনও গোঁড়ামি বা সঙ্কীর্ণতার স্থান নেই।” পত্রলেখকের এই সিদ্ধান্ত সোনার পাথরবাটির মতো। হিন্দু ধর্মে গোঁড়ামি বা সঙ্কীর্ণতা আছে কি না, তা প্রমাণ করার জন্য একটিমাত্র শাস্ত্রগ্রন্থের নাম উল্লেখ করলেই যথেষ্ট। সেটি হল ব্রাহ্মণ সুমতি ভার্গব (মনু) রচিত মনুস্মৃতি। শাস্ত্রগ্রন্থ চুনী কোটালকে আপন করে নিতে পারেনি, রোহিত ভেমুলাকে আপন করতে পারেনি। পারলে প্রতি দিন সংবাদপত্রের পাতায় দলিত হত্যা, দলিত নির্যাতন, দলিত নারী ধর্ষণ দেখতে হত না। সম্প্রতি খাস কলকাতার এক নামী কলেজের অধ্যাপককে বেধড়ক মারা হল, শাস্ত্রগ্রন্থে উল্লিখিত বিষয় নিয়ে যুক্তিপূর্ণ কথা বলার জন্য।

পত্রলেখক মন্তব্য করেছেন, “বিজেপি রাজনৈতিক দল হিসেবে স্বতন্ত্র সিদ্ধান্ত নেয়, এ বিষয়ে আরএসএস-এর হস্তক্ষেপের বিষয়টি একেবারেই কল্পনাপ্রসূত।” এই কথাগুলিই বরং কল্পিত। আরএসএস-এর প্রতিষ্ঠাতা কে বি হেডগেওয়ারের মতে, আরএসএস-এর দু’টি প্রধান লক্ষ্য হল, ১) হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐক্য ও পুনরুজ্জীবন, এবং ২) ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। আরএসএস-এর দ্বিতীয় সঙ্ঘপ্রধান এমএস গোলওয়ালকর ঘোষণা করেছিলেন, এই সংগঠনের সর্বোচ্চ লক্ষ্য হল হিন্দু রাষ্ট্রের সর্বাঙ্গীণ গৌরব অর্জন করা (বিজেপি, আরএসএস অ্যান্ড দি ইন্ডিয়ান পলিটিক্স, পৃ ৫)। রাহুল কবিরাজ ও সুরথ কুমার মালিক, বইয়ের এই দুই লেখক সিদ্ধান্ত টেনেছেন এই বলে, “তাই আরএসএস বিজেপির মতাদর্শী হয়ে উঠেছে, এবং হিন্দুত্বের বিষয়টি ভারতীয় রাজনীতির আঙিনায় একটি অত্যন্ত প্রাণবন্ত প্রশ্ন হয়ে উঠেছে বিজেপি এবং হিন্দুদের ক্ষেত্রে। বিজেপি সর্বদা হিন্দুত্বের বিষয়টিকে রাজনৈতিক ক্ষমতা পাওয়ার জন্য ব্যবহার করে এবং আরএসএস সর্বদা বিজেপিকে সমর্থন করে।” আরএসএস-এর রাজনৈতিক শাখা হল বিজেপি। এবং আরএসএস ও বিজেপি কী ভাবে নিজেদের মধ্যে সমন্বয় ও যোগাযোগ রেখে চলে, তা জানা যাবে ক্রিস্টফ জাফ্রেলো-র মোদী’জ় ইন্ডিয়া: হিন্দু ন্যাশনালিজ়ম অ্যান্ড দ্য রাইজ় অব এথনিক ডেমোক্র্যাসি বইটি, এবং বিনয় সীতাপতির যুগলবন্দি: দ্য বিজেপি বিফোর মোদী বইগুলি পড়লে। আপাতদৃষ্টিতে পৃথক কর্মসূচি নিয়ে চললেও দুয়ের মধ্যে যে একটি অলঙ্ঘনীয় টান ও মেলবন্ধন আছে, তা স্পষ্ট হয় এই লেখাগুলি থেকে।

পত্রলেখক সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতকে উদ্ধৃত করে বলেছেন যে, ভারতের সকলেই হিন্দু, এবং হিন্দুত্বই ভারতের রাষ্ট্রীয়ত্ব— এই তত্ত্বে সঙ্ঘ বিশ্বাসী। ১৯৩৯ সালে হিন্দু মহাসভার কলকাতা অধিবেশনে সভাপ্রধানের ভাষণে সাভারকর হিন্দুত্ববাদ, হিন্দুত্ব ও হিন্দুসমাজ— শব্দ ত্রয়ের ব্যাখ্যা করেছিলেন। হিন্দুত্ববাদের অর্থ হল “হিন্দুদের অনুসৃত ধর্মীয় পদ্ধতি বা সম্প্রদায়।” আর হিন্দুত্ব বলতে সাভারকর বলছেন, “হিন্দুত্ব শব্দটি আরও ব্যাপক, এবং ‘হিন্দুইজ়ম’ শব্দটির মতো কেবলমাত্র হিন্দুদের ধর্মীয় ব্যাপারগুলিকেই বোঝায় না, তাদের সংস্কৃতিগত, ভাষাগত, সমাজগত এবং রাজনীতিগত ব্যাপারগুলিকেও বোঝায়।” ভারতের ইতিহাস বিষয়ে সামান্য ধারণা থাকলে ‘হিন্দুত্বই ভারতের রাষ্ট্রীয়ত্ব’ এই কথাগুলি বলা যায় না। অতীতে দীর্ঘ সময় ধরে ভারতীয়দের (রাষ্ট্রীয়) ধর্ম (ধম্ম) ছিল বৌদ্ধ ধর্ম। সমগ্র বঙ্গদেশও বৌদ্ধস্থান ছিল। এ বিষয়ে স্বপন কুমার বিশ্বাসের বিখ্যাত গ্রন্থ বৌদ্ধ ধর্ম্ম: সিন্ধু-হরপ্পা কালের ভারতীয় ধৰ্ম্ম গ্রন্থটি প্রণিধানযোগ্য। সমাজমাধ্যমে ভ্রান্ত প্রচার, বা জাতীয় শিক্ষানীতিকে গৈরিকীকরণ সাময়িক ভাবে প্রকৃত ইতিহাসকে ঢেকে রাখতে পারলেও, মুছে ফেলতে পারবে না।

চণ্ডাল বিশ্বাস, চাকদহ, নদিয়া

ডেপুটি স্পিকার

‘অর্থ থেকে স্বরাষ্ট্রে?’ (দিল্লি ডায়েরি, ১৮-১২) শীর্ষক রচনাতে লোকসভা সাংসদ রমা দেবীকে ডেপুটি স্পিকার লেখা হয়েছে, যা ভুল। লোকসভার রেকর্ড অনুসারে মোদী সরকারের প্রথম কার্যকালে এই পদের জন্য শেষ নির্বাচন হয় অগস্ট, ২০১৪ সালে, এবং তামিলনাড়ুর করুর সংসদীয় ক্ষেত্র থেকে নির্বাচিত এম থাম্বিদুরাইকে ১৬তম ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করা হয়। এআইএডিএমকে পার্টির সদস্য এম থাম্বিদুরাই ২৫ মে ২০১৯ পর্যন্ত এই পদে ছিলেন। বর্তমানে লোকসভাতে কোনও আধিকারিক ডেপুটি স্পিকার নেই। রমা দেবী লোকসভা স্পিকার পর্ষদের সদস্য, এবং তিনি সে দিন স্পিকার ওম বিড়লার অনুপস্থিতিতে লোকসভার পরিচালনা করেন। তাই তাঁকে ডেপুটি স্পিকার লেখা ঠিক নয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর দ্বিতীয় কার্যকালে লোকসভার ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন না করে সংসদীয় প্রণালীকে লঙ্ঘন করছেন। সংবিধানে স্পষ্ট বলা আছে, কোনও কারণে যদি লোকসভা স্পিকারকে ইস্তফা দিতে হয়, সে ক্ষেত্রে তাঁর পদত্যাগ পত্র ডেপুটি স্পিকারকে দিতে হবে, এবং নতুন স্পিকার নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত তাঁকেই স্পিকার পদের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের অসাংবিধানিক আচরণে দেশ যে কোনও সময়ে সমস্যায় পড়তে পারে।

অভিজিৎ রায়, জামশেদপুর

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE