E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: ভোটের স্মৃতি

ব্যালট বাক্স এবং আনুষঙ্গিক কাগজপত্র রক্ষা করতে গিয়ে আমাদের প্রাণ যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কাছাকাছি সেক্টর অফিসের তৎপরতায় সে যাত্রা প্রাণে বেঁচে ফিরেছি।

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৩ ০৪:৩১
violence.

একটি গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্রের উৎসবে এত রক্ত ঝরবে কেন! —ফাইল চিত্র।

আমি সাত বার মালদহ জেলায় ভোটে প্রিজ়াইডিং অফিসারের কর্তব্য পালন করেছি। বিভিন্ন জায়গায় নানা ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে। এক বার পঞ্চায়েত ভোটের দায়িত্বে ছিলাম। তখন ভোট শেষে ব্যালট পেপার গণনা করে ফলাফল ঘোষণা করতে হত। সে বার মাত্র তিন ভোটে এক প্রার্থীর পরাজয়কে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার কাণ্ড ঘটে গেল। উভয় পক্ষের হাতাহাতি, মারামারি চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। ভোটকর্মীরাও বাদ থাকেননি। ব্যালট বাক্স এবং আনুষঙ্গিক কাগজপত্র রক্ষা করতে গিয়ে আমাদের প্রাণ যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কাছাকাছি সেক্টর অফিসের তৎপরতায় সে যাত্রা প্রাণে বেঁচে ফিরেছি। সে বার পরাজিত প্রার্থীর একটি কথা এখনও মনে আছে। তিনি তাঁর চার বিঘা জমি বিক্রির টাকা খরচ করে এই ভোটে নেমেছিলেন। এই পরাজয় ছিল তাঁর কাছে মৃত্যুতুল্য।

এই ঘটনা থেকে ধারণা করা যায়, কোনও সেবা বা উন্নয়নের মানসিকতা নিয়ে পঞ্চায়েতের ভোটে কেউ নামেন না। সব কাটমানি দেওয়া-নেওয়ার খেলা। তা না হলে পাঁচ বছরে পঞ্চায়েত প্রধান ও তাঁর শাগরেদরা অফুরন্ত অর্থ, বাড়ি, গাড়ির মালিক হতে পারেন না। তাই ভোটে জান লড়িয়ে দিতে বা জান নিতে একটুও সময় লাগে না। বিবেকে বাধে না। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দীর্ঘ দিন ধরে ভোট অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করার কথা বলে আসছেন। সবাই সাবলীল ভাবে মনোনয়ন জমা দিতে পারবেন— এ আশ্বাস দিয়েছেন। মনোনয়ন দিতে সমস্যা হলে পাশে থাকার কথা বলেছেন। একটু কান পাতলে শোনা যাবে, নিচুতলার কর্মীরা বলছেন, এগুলো কথার কথা। নেতাদের ভাবমূর্তি বজায় রাখার জন্য এ সব কথা বলতে হয়। কিন্তু পার্টির নির্দেশ আলাদা। তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ আমরা দেখলাম মনোনয়নে রক্তপাত শুরু হয়ে গেল। ভাঙড়ে এবং চোপড়ায় সংঘর্ষে প্রাণ হারালেন তিন জন তরতাজা মানুষ। আহত অসংখ্য।

মৃতরা কোন দলের, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হল একটি গণতান্ত্রিক দেশে গণতন্ত্রের উৎসবে এত রক্ত ঝরবে কেন! মৃত্যুমিছিল শুরু হয়ে গেছে। এর শেষ কোথায় এবং কবে, তা সকলের অজানা। জাতি, ধর্ম, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে রাজ্যের শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার কাজে।

গৌতম পতি, তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর

দ্বন্দ্বের বিষ

মণিপুরে কুকি জনজাতিরা মেইতেইদের সংরক্ষণভুক্তির বিরোধিতায় সরব। সম্প্রতি ঝাড়গ্রামেও কুড়মিদের বিরুদ্ধে জনজাতিরা একই কারণে সরব হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভিন্ন ভিন্ন সংরক্ষিত গোষ্ঠীর এই মনোভাব দেখা যায়।

এটা হল দীর্ঘ দিন ধরে অবৈজ্ঞানিক ভাবে দেশের পিছিয়ে-পড়া জনগোষ্ঠীকে সংরক্ষণের মাধ্যমে এগিয়ে আনার চেষ্টার কুফল। কিছু জনগোষ্ঠীর অনুন্নয়নের দায় যারা নিজেদের এগিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি বলে দাবি করে, তাদের। তফসিলিভুক্ত জাতি, জনজাতিকে সামগ্রিক ভাবে মূল স্রোতে আনার বদলে, তাদের সামনে আমরা সংরক্ষণের টোপ ঝুলিয়ে রাখি, যা বস্তুত ভোট বৈতরণি পার হওয়ার বন্দোবস্ত। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ সেই প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিয়ে আজ নেতা হয়েছেন। পিছিয়েই থেকে গিয়েছে আদিবাসী জনসমাজ। অথচ, তাদের নিজস্ব ভাষা আছে, আছে নিজস্ব সংস্কৃতি। আছে প্রকৃতির সঙ্গে মিশে, প্রকৃতির ক্ষতি না করে জীবনধারণের জীবনাদর্শ। তাদের সেই প্রকৃতিবান্ধব সভ্যতাকে গ্রহণ করা, স্বীকৃতি দেওয়ার বদলে আমরা অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে তাদের ঘাড়ে আমাদের তথাকথিত ‘উন্নত সভ্যতা’-র দায়ভার চাপিয়েছি। এতে এক ত্রিশঙ্কু পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তারই বহিঃপ্রকাশ সংরক্ষিত গোষ্ঠীগুলির এই বিক্ষোভ। দেশের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের পরিবেশের বদলে আমরা সৃষ্টি করেছি দ্বন্দ্বের বিষবৃক্ষ, যার ফল সবে ধরতে শুরু করেছে।

পিনাকী ধাড়া, কলকাতা-৭৪

দুই ধারাই থাক

বিশিষ্ট কবি সুবোধ সরকার তাঁর ‘অখণ্ড ভারতী মানসের ফুল’ (১৭-৬) শীর্ষক প্রবন্ধে প্রশ্ন তুলেছেন, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বলেছেন, ইকবাল ‘সারে জঁহা সে আচ্ছা’ লিখেছিলেন ঠিকই, কিন্তু তিনি নিজেই তা বিশ্বাস করতেন না— এই তথ‍্য উপাচার্য কোথা থেকে পেলেন? উপাচার্য কোথা থেকে ওই তথ‍্য পেয়েছেন, সেটা তিনিই বলতে পারবেন। তবে ইকবাল যে অখণ্ড ভারতে একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের স্বার্থ রক্ষায় বরাবর জোরালো সওয়াল করেছেন, সেটা তাঁর চিঠিপত্রে চোখ রাখলেই বোঝা যায়।

মহম্মদ আলি জিন্না তাঁর রাজনৈতিক জীবন কংগ্রেস থেকে শুরু করেছিলেন। ইকবালের রাজনৈতিক জীবন মুসলিম লীগে কেটেছে, অবশ্যই তার অর্থ এই নয় যে, তিনি ‘হিন্দুবিরোধী’ ছিলেন। কিন্তু ‘উপনিষদের প্রভাব’ (প্রবন্ধকার উবাচ) তাঁর কাব‍্যচেতনাকে প্রণোদনা দিলেও রাজনৈতিক চিন্তাধারাকে ধর্মনিরপেক্ষ করেছিল কি? উপনিষদের গভীর প্রভাবের কথা নিজের বইয়ের ভূমিকায় লিখেও সেটা যদি মৌলবিদের আক্রমণে লেখক বাদ দিতে বাধ‍্য হন, তবে তাঁর বিশ্বাসের ও আত্মবিশ্বাসের দৃঢ়তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।

এ-প্রসঙ্গে নজরুলের কথা বলতে হয়। প্রবন্ধকারই তাঁর কথা উল্লেখ করেছেন। নজরুলও তো রাজনৈতিক কবিতা ও গান লিখেছেন। সেই জন‍্য ব্রিটিশের রোষেও পড়েছেন (সাম্প্রদায়িক রাজনীতির মূল ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’-এর বিরোধিতায় ইকবাল সরব হয়েছেন কি?)। ধর্মে মুসলমান হয়েও নজরুলকে কিন্তু ভারতে আলাদা করে ইসলামের অধিকার বা দাবিদাওয়া রক্ষায় নামতে হয়নি। বরং ধর্মনিরপেক্ষ লেখাই তাঁর কাছ থেকে বরাবর পাওয়া গিয়েছে। মৌলবাদী ফতোয়া তাঁর বিরুদ্ধেও জারি ছিল। তাই নজরুলের সঙ্গে ইকবালের তফাতটা সহজেই লক্ষ‍ করা যায়। অতএব দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মতো আরও কারও যদি ‘সারে জঁহা সে আচ্ছা’র কবির কথায় ও কাজে অমিল চোখে পড়ে— দোষ দেওয়া যায় কি?

তবে প্রবন্ধকারের সঙ্গে সহমত পোষণ করেই পাঠ‍্যসূচি থেকে ইকবালকে বাদ দেওয়া সমর্থন করছি না। উর্দু-ফারসি সাহিত্যের আধুনিক ইতিহাসে তো কথাই নেই, ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাস থেকেও তাঁকে বাদ দেওয়া চলে না। কারণ, ইতিহাসে ইতিবাচক ও নেতিবাচক— দু’দিকই থাকে। কোনও একটা বাদ দিলে অর্ধসত‍্যকে প্রশ্রয় দেওয়া হয়। সুতরাং, পাঠ‍্যসূচি থেকে ইকবালকে বাদ দেওয়ার বিপক্ষে ‘ভারতেরই অসম্মান’ একমাত্র কারণ নয়। পূর্ণাঙ্গ ইতিহাসের দাবিতেই ‘ইয়ে হিন্দুস্থান হমারা’ লেখার সঙ্গে সঙ্গে ‘পাকিস্তানের স্বপ্ন’ও তিনি কী ভাবে দেখিয়েছিলেন— সেই দুটো ধারাই আগামী প্রজন্ম জানুক।

পরাগ চৌধুরী, সিউড়ি, বীরভূম

মন্দিরে বৈষম্য

আমরা প্রায়ই সংবাদমাধ্যমে দেখতে পাই যে, বিভিন্ন ভিআইপি দেশের নানা মন্দিরে গিয়ে পুজো দিচ্ছেন। প্রিন্ট মিডিয়াতে ছবি আর ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে সেই ভিডিয়ো দেখা যায়। অথচ, আমাদের মতো সাধারণ মানুষ যখন সেই মন্দিরে যাই, কোনও মতেই আমাদের কোনও ছবি তুলতে দেওয়া হয় না, ভিডিয়ো করা তো দূরে থাক। অনেকে লুকিয়ে ছবি তুলতে গিয়ে মন্দির প্রশাসনের কাছে মারধর খেয়েছেন এবং নিজের সাধের মোবাইলটিও খুইয়েছেন— এ আমার চোখে দেখা। কেন এই চূড়ান্ত বৈষম্য? কেন এই ভেদাভেদ? তা হলে কি আমরা ধরে নেব যে, এক জন ভিআইপি ভগবানের কাছে বেশি আপনজন?

আমার একান্ত অনুরোধ যে, সরকার বা আদালত নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করে এই ধরনের বৈষম্য দূর করার উপযুক্ত ব্যবস্থা করুক।

সৌলিমা বিশ্বাস, কলকাতা-২৮

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Panchayat Elction West Bengal

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy