Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: সরকারি স্কুল

স্কুলে মানুষ প্রথম সামাজিকতার পাঠ নেয়। তাই এর কোনও বিকল্প হয় না। অনলাইনে পড়াশোনা কখনও এর সহায়ক নয়।

শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০২১ ০৫:২৫

সন্দীপন নন্দীর লেখা ‘তালা ঝোলা স্কুল, স্তব্ধ শৈশব’ (১১-১০)শীর্ষক প্রবন্ধটি আজকের বাংলা মাধ্যমের সরকারি বা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলোর প্রকৃত চিত্র তুলে ধরেছে। কিন্তু কেন এই দুরবস্থা? সব দিক থেকে উপযুক্ত, যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিই সরকারি স্কুলে শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত হন। সরকারি স্কুলে পড়াশোনা করতে তেমন কোনও খরচ নেই। তা হলেও কেন ছাত্রছাত্রী কমে যাচ্ছে? কেন স্কুলের পড়ার পরও প্রাইভেট টিউশন নিতে হয়? স্কুলে যদি ঠিকমতো পড়ানো হয়, সত্যিই কি দরকার আছে প্রাইভেট টিউশনের? আসলে শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্কের রসায়নটাই বদলে গিয়েছে। শিক্ষকরা বর্তমানে শিক্ষকতাকে শুধুমাত্র জীবিকা হিসাবেই দেখেন। কিন্তু শিক্ষকতা তো শুধুমাত্র পেশা নয়। শিক্ষকরা মানুষ তৈরির কারিগর, সমাজের রূপকার। তাই তাঁদের দায়িত্বও অন্যদের থেকে একটু বেশি।

এ দিকে আজকের দিনে ছাত্ররাও শিক্ষকের প্রতি অনুগত নয়। ছাত্রকে বকাঝকা করলেই অভিভাবক চলে যাচ্ছেন থানায় অভিযোগ জানাতে। কিন্তু এক বারও ভাবছেন না, শিক্ষকেরও ছাত্রদের ভালমন্দ দেখার অধিকার আছে। এই অভিযোগের ফলে শিক্ষকরা ভীত হয়ে ছাত্রদের শাসন করা ছেড়ে দিচ্ছেন। তবে এটাও ঠিক যে, শাসন যেন মাত্রাছাড়া না হয় বা শাসনের ফলে দৈহিক বা মানসিক ক্ষতি না হয়, সে দিকেও নজর রাখতে হবে।

আসলে স্কুল এমন এক পরিবেশ সৃষ্টি করে, যেখানে ছাত্রছাত্রীরা চিন্তা-ভাবনার আদানপ্রদান, মত বিনিময় করতে পারে। তাদের সম্পূর্ণ বিকাশ এ ভাবেই হয়। অনলাইনে পড়াশোনা কখনও এর সহায়ক নয়। স্কুলে মানুষ প্রথম সামাজিকতার পাঠ নেয়। তাই এর কোনও বিকল্প হয় না। আজ সময় এসেছে শিক্ষক ও ছাত্র উভয়েরই চিন্তাধারা বদলের। আশা করা যায়, ছাত্র, শিক্ষক ও শিক্ষার নীতিনির্ধারক— সকলের আন্তরিক চেষ্টায় আবার সরকারি স্কুলগুলোর হৃত গৌরব ফিরে আসবে।

সর্বানী গুপ্ত

বড়জোড়া, বাঁকুড়া

স্কুলছুট

‘নিরুদ্দেশ’ (৭-১০) শীর্ষক সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, সর্বভারতীয় এক সমীক্ষার রিপোর্ট অনুযায়ী, অতিমারিতে অনলাইন ক্লাসে নিয়মিত হাজির হওয়া পড়ুয়া শতাংশের বিচারে ২৪, গ্রামাঞ্চলে ৮। ওই রিপোর্টে পাকাপাকি ভাবে পড়াশোনা ছেড়ে দেওয়া, এক কথায় ‘স্কুলছুট’-এর শতাংশ শহরে ১৯, গ্রামে ৩৭। বেশ কয়েক মাস আগে কলকাতায় অমর্ত্য সেনের ‘প্রতীচী ট্রাস্ট’-এর রিপোর্টেও বলা হয়েছিল, কলকাতায় প্রায় ৪০ শতাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পড়ুয়া অনলাইন ক্লাসে অনুপস্থিত। উপরোক্ত সমীক্ষাগুলির রিপোর্টেই শিক্ষায় অশনিসঙ্কেত সুস্পষ্ট। ‘সর্বশিক্ষা অভিযান’-এ ‘সবার জন্য শিক্ষা’, এই ধারণাটিও যেন বাস্তবের আঙিনায় ধীরে ধীরে ফিকে হয়ে আসছে। অতিমারি কালে শিক্ষায় ‘ডিজিটাল ডিভাইড’ বিত্তবান এবং গরিব মানুষের মধ্যে এক অদৃশ্য ‘চিনের প্রাচীর’ তৈরি করেছে। স্কুলছুটের সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা খুব উদ্বেগের। এ বছর রাজ্যে মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের সময় সাংবাদিকদের পর্ষদ সভাপতি জানিয়েছিলেন, নবম শ্রেণিতে প্রায় ১১ লক্ষ ১২ হাজার পড়ুয়া রেজিস্ট্রেশন করেছিল। তার সঙ্গে যুক্ত ছিল সিসি এবং কম্পার্টমেন্টাল মিলে প্রায় ২ লক্ষ পড়ুয়া। কিন্তু বাস্তবে, মাধ্যমিকে ফর্ম পূরণ করেছে ১০ লক্ষ ৭৯ হাজার ৭৪৯ জন। অর্থাৎ, বাকি ২ লক্ষের বেশি পড়ুয়া অবধারিত ভাবে স্কুলছুট হয়েছে। অতিমারির কবলে আর্থ-সামাজিক ভাবে দুর্বল পরিবারের পড়ুয়ারা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। পরিবারের অনেকের চাকরি চলে যাওয়ায় জীবন সংগ্রামের ময়দানে তারাও নামতে বাধ্য হয়েছে। প্রায়ই খবরের কাগজ খুললে চোখে পড়ে, সারা দিন কেউ চকলেট, কেউ আনাজ, ফল, মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার ফেরি করে বেড়াচ্ছে। কেউ বা মাটির প্রতিমা গড়তে ব্যস্ত, কারণ এই প্রতিমা বিক্রির টাকায় সে পড়াশোনার জন্য একটি স্মার্টফোন কিনবে। জীবন, জীবিকার তাগিদে কত বেকার যে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। এ রাজ্যে সরকার দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ট্যাব কেনার টাকা দিলেও বহু ছাত্রছাত্রী স্মার্টফোন কেনেনি। যারা কিনেছে, তাদের সবাই অনলাইন ক্লাসেও উপস্থিত থাকে না। পড়াশোনার মূলস্রোত থেকে হারিয়ে যাওয়া এই পড়ুয়াদের শিক্ষার আলোয় ফিরিয়ে আনতে সুনির্দিষ্ট ও সুচিন্তিত পদক্ষেপ করা আশু প্রয়োজন।

অরুণ মালাকার

কলকাতা-১০৩

শিক্ষা উধাও

‘নিরুদ্দেশ’ সম্পাদকীয় অতিমারির সময়কালে ভারতের স্কুলপড়ুয়াদের এক করুণ চিত্র তুলে ধরেছে। আমরা যারা মফস্সল বা গ্রামাঞ্চলের স্কুলে কাজ করি, তারা সমীক্ষার বক্তব্য সম্পর্কে যথেষ্ট অবহিত। আমাদের দুর্ভাগ্য, শিক্ষার নীতিনির্ধারকরা শহরের ঠান্ডা ঘরে বসে তা বোঝার মতো অবস্থায় নেই।

অতিমারির কারণে স্কুলগুলি দেড় বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ। এই দেড় বছরে আমাদের রাজ্যের শিক্ষা দফতর স্কুলপড়ুয়াদের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছে। যেমন— প্রথমে টেলিভিশনের বিভিন্ন চ্যানেলের মাধ্যমে পড়ুয়াদের পাঠদানের চমক, তার পরে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থার প্রবর্তন এবং শেষে পড়ুয়াদের অ্যাক্টিভিটি টাস্ক-এর মাধ্যমে শিক্ষা দান। করোনার কারণে সবটাই বাড়ি বসে ছাত্রদের হোমওয়ার্ক করা। অনেকটা অফিসের ‘ওয়ার্ক ফ্রম হোম’-এর মতো। তবে পড়া তৈরি করা আর অফিসের কাজ এক পাল্লায় মাপা যায় না। এই সব পদ্ধতির সুফল অল্পসংখ্যক ছাত্রছাত্রী পেলেও পেতে পারে, তবে বেশির ভাগটাই ভস্মে ঘি ঢালা ছাড়া আর কিছু নয়। উপরোক্ত পদ্ধতির কোনওটা কি ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে দাগ কাটতে পেরেছে? পারলে সম্পাদকীয়তে উল্লিখিত সমীক্ষার করুণ দশা দেখতে হত না।

এক দিন না এক দিন স্কুল খুলবে। কিন্তু যে সমস্ত ছাত্রছাত্রী রোজগারে যুক্ত হয়েছে, তাদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। দরিদ্র শ্রেণির একাংশ বর্তমানে বিদ্যালয়গুলিকে বিকল্প আয়ের উৎস হিসাবে দেখেন। চাল-ডাল, জামাকাপড়, বিভিন্ন রকম আর্থিক অনুদান, কন্যাশ্রী, সাইকেল, স্মার্টফোন— এ সমস্ত সুযোগ সুবিধা শুধু স্কুলে নাম লেখানো থাকলেই সম্ভব। তাই কাগজে-কলমে ড্রপ আউট হয়তো হবে না, কিন্তু বাস্তবে পড়ুয়ার সংখ্যা কমে যাবে। তাই শুধু ছাত্রছাত্রীরাই নিরুদ্দেশ নয়, শিক্ষাব্যবস্থা থেকে শিক্ষাও হারিয়ে যেতে বসেছে।

জয়ন্ত কুমার দেবনাথ

রানাঘাট, নদিয়া

পরীক্ষাসূচি কবে?

পুজোর ছুটি চলছে, তাও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার কোনও দিন ঘোষণা হল না। করোনা আবহের মধ্যেও কোনও কিছুই থেমে নেই। একের পর এক ভোটের দিন ঘোষণা হচ্ছে, প্রচার হচ্ছে ও হবে। সিবিএসই, আইসিএসই ও আইএসসি তাদের আগামী দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষার সূচি ঘোষণা করে দিয়েছে। আর রাজ্য মধ্যশিক্ষা পর্ষদ ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ এখনও তাদের প্রায় ২০ লক্ষ পড়ুয়াদের জন্য পরীক্ষাসূচি সম্পর্কে কোনও তথ্য জানাতে পারেনি। তবু উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি মাননীয় চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, পরীক্ষা অফলাইনেই নেওয়া হবে। কিন্তু মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতির কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।

এর ফলে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা ক্রমশ পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এই ২০ লক্ষ পরীক্ষার্থীর পরীক্ষার দিন যদি পুজোর আগেই জানিয়ে দেওয়া হত, তা হলে হয়তো তারা কিছুটা হলেও পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ফিরে পেত। তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আবেদন, যত শীঘ্র সম্ভব আগামী বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সম্ভাব্য সময়সূচি ঘোষণা করা হোক।

ঋতুপর্ণা ভট্টাচার্য

চুঁচুড়া, হুগলি

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy