সুপ্রতিম দত্ত, কলকাতা-৮৪
ভয়ের দেশ
অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের নিবন্ধটি সাম্প্রতিক পরিস্থিতির প্রামাণ্য দলিল। দেশ জুড়ে প্রান্তিক খেটে-খাওয়া মানুষের দুর্দশা তাঁদের চোখেই শুধু পড়বে না, যাঁরা তাঁবেদারি করাকে ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছেন। অপ্রতুল টিকা, সমন্বয়ের অভাব, স্বাস্থ্যব্যবস্থার কঙ্কালসার দশা, অক্সিজেনের ঘাটতি, দু’টি টিকা গ্রহণের মধ্যবর্তী সময়ের ব্যবধান বাড়ানোর বার বার নির্দেশিকা বদল— নাগরিক সমাজকে আতঙ্কিতও করেছে। দেশ জুড়ে পুনরায় লকডাউন ঘোষিত হয়নি বটে, তবে যে ভাবে কোভিড মোকাবিলায় রাজ্যগুলিকে নিজ নিজ পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ জারি করা হয়েছে, তাতে এটুকু পরিষ্কার যে, সাফল্যের কৃতিত্ব নিলেও কেন্দ্র ব্যর্থতার দায় নিতে প্রস্তুত নয়। ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণ রুখে দেওয়ার একমাত্র উপায় এখনও পর্যন্ত লকডাউন করা। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশ এই পথেই হেঁটেছে। প্রথম পর্বে দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা কেন্দ্রের তরফেই করা হয়েছে, তা হলে আজ আবার আলাদা করে রাজ্যগুলিকে পদক্ষেপ করার নির্দেশ কেন? যদি যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো অক্ষুণ্ণ রাখার যুক্তি দেওয়া হয়, তবে প্রথম পর্বেই তা ক্ষুণ্ণ হয়নি কি! পরিযায়ী শ্রমিকের সমস্যা তো ছিলই, সঙ্গে এক বছরের বেশি সময় ধরে চলা অচলাবস্থা ছোট, বড়, মাঝারি সব ব্যবসায়ীকে আর্থিক ভাবে হীনবল করেছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা তলানিতে।
একটি বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার একশো শতাংশ সফল। জনমনে এক ভয়ের বাতাবরণ তারা তৈরি করেছে। স্বাধীন মত প্রকাশে সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে! সংবাদপত্র, সমাজমাধ্যমে কে কী লিখবে, তা নিয়েও ধন্দে পড়তে হচ্ছে। রাজরোষে পড়ার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র, যা গণতন্ত্রের পরিপন্থী। তবুও এর বিপ্রতীপে গড়ে ওঠে জনমত। সুশীল সমাজের নিদ্রাভঙ্গ হয়, শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ বিপদ উপেক্ষা করে অগ্রবর্তী হন। সেই ভরসাতেই আজও লেখক, কবি কলম ধরেন।
রাজা বাগচি, গুপ্তিপাড়া, হুগলি
বাঁধভাঙা ক্ষোভ
অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সহমত। ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েই তো আসে অধৈর্যের প্লাবন। আর সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের এই প্রবল আন্দোলনের মুখে অতি বড় স্বৈরাচারী শাসকেরও পতন ঘটে। এটা ঐতিহাসিক সত্য।
যখন প্রশাসনের অপদার্থতা প্রকট হয়, তখনই হস্তক্ষেপ করতে দেখা যায় বিচার বিভাগকে। তাই পরিযায়ী শ্রমিকদের খাদ্যের জোগান দিতে সরকারকে নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। লকডাউনের সময়ে যখন সাধারণ মানুষ কর্মহীন, ক্রয়ক্ষমতা তলানিতে, তখন মোদী সরকারকে গরিব মানুষের হাতে নগদ টাকার জোগান দিতে বলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ও অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। কান দেয়নি কেন্দ্রীয় সরকার। অতিমারির মতো বিপর্যয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে। গণতন্ত্রে সেটাই দস্তুর। টাকা আসবে সরকার-ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের মুনাফার উপর কর বসিয়ে, সেন্ট্রাল ভিস্টার কাজ বন্ধ করে, মন্ত্রীদের খরচ ছাঁটাই করে। মানুষের জন্য গণতন্ত্রে স্বৈরাচারী শাসকের জায়গা কোথায়?
দিলীপ কুমার সেনগুপ্ত, কলকাতা-৫১
ধৈর্যের গুণ
‘অধৈর্য হওয়াই এখন কর্তব্য’ নিবন্ধে পেলাম আমেরিকান লেখক অ্যামব্রোস বিয়ার্স-এর উদ্ধৃতি, “ধৈর্য ব্যাপারটা হতাশার একটা ছোটখাটো রূপ, যা সদ্গুণের ছদ্মবেশে থাকে।” আলোচ্য প্রবন্ধের প্রেক্ষিতে উক্তিটি সঠিক হতে পারে, কিন্তু সকল ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কবি-শিল্পী-সাহিত্যিক-বৈজ্ঞানিকদের ধৈর্য একটা বিরাট গুণ। এঁদের বেশির ভাগই দীর্ঘ সাধনার পরে সাফল্যের মুখ দেখেছেন। মিগেল দে সের্ভান্তেস-এর দন কিহোতে উপন্যাসটি যখন বেরোয়, সের্ভান্তেস তখন ষাট-ছুঁইছুঁই। সমরেশ মজুমদার বলছেন, প্রথম ছোট গল্পটি লেখার পরে তাঁকে আট বছর অপেক্ষা করতে হয়েছিল উপন্যাস লেখার সুযোগ পাওয়ার জন্য। অধৈর্য হয়ে এর মাঝে যদি তিনি কলম সরিয়ে রাখতেন আমরা কালবেলা, এত রক্ত কেন, সিংহবাহিনী— কিছুই পেতাম না। অতঃপর, শ্রেষ্ঠ বাঙালি কে? প্রবন্ধ সঙ্কলনে নীরদচন্দ্র চৌধুরী লিখেছেন, ১৯৮৭ সালের পর তিনি লেখক হিসেবে জনপ্রিয় হয়েছেন। নীরদবাবুর জন্ম ১৮৯৭ সালে। চার্লস ডারউইনের অন দ্য অরিজিন অব স্পিসিস-এর প্রকাশকালে বিজ্ঞানীর বয়স পঞ্চাশ। আমেরিকান লেখিকা লরা ওয়াইল্ডার (জন্ম, ১৮৬৭) ১৯৩২-এ তাঁর প্রথম পুস্তক প্রকাশ করতে সক্ষম হন। জর্জ অরওয়েল অ্যানিম্যাল ফার্ম লিখলেন চল্লিশ পেরিয়ে, নাইনটিন এইট্টি-ফোর বেরোয় আরও চার-পাঁচ বছর বাদে।
সুগত ত্রিপাঠী, মুগবেড়িয়া, পূর্ব মেদিনীপুর
মিষ্টিতে সাবধান
অধিকাংশ মিষ্টির দোকানেই দোকানদার বা কর্মচারীরা যে হাতে টাকা নিচ্ছেন, সেই হাতেই মিষ্টি দিচ্ছেন। এমনকি মোবাইল ব্যবহার করতে করতে সেই হাতেই মিষ্টি বিক্রি করছেন। ব্যবহার করছেন না হাতা, চিমটে, হ্যান্ডওয়াশ বা স্যানিটাইজ়ার। অনেকে থুতু দিয়ে টাকা গোনেন। এই কোভিড পরিস্থিতিতে টাকা ব্যবহারের পর হাত না ধুয়ে খোলা খাদ্যে হাত দেওয়া একেবারেই উচিত নয়। অতি সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, পাশ্চাত্য দেশগুলির তুলনায় খাদ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে ভারত অনেক ঢিলেঢালা। সুতরাং, জনস্বাস্থ্যের দিকে তাকিয়ে দোকানে দোকানে গিয়ে খাদ্য-বিক্রি সংক্রান্ত বিধিনিষেধ আরোপ করুক সরকার।
বিশ্বজিৎ মহন্ত, বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ