—প্রতীকী চিত্র।
স্বপ্নেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘প্রাতিষ্ঠানিক অচলায়তন’ (২৯-৮) পড়ে ভাল লাগল। তাত্ত্বিক ভাবে বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। অফিস-আদালত, শিক্ষাক্ষেত্র, সরকারি-বেসরকারি, সর্বত্র কর্মচারীর মধ্যে সত্যিই কতকগুলো শ্রেণি তৈরি হয়েছে। ছাত্রও ছাড় পায় না। সরকারি ক্ষেত্রে বেশি মাত্রায়, বেসরকারি ক্ষেত্রে তুলনামূলক কম। ক্ষমতাকে ধরে রাখার জন্য রাজনৈতিক দলগুলি ছাত্র, কর্মচারীদের মধ্যে তাদের অনুগত সৈনিক খোঁজে। ‘আসব যাব পয়সা পাব’, ‘গা বাঁচিয়ে চলা’, ‘তালে তাল দিয়ে চলা’— এই তিন ধরনের শ্রেণির চিহ্নিতকরণ করা হয়। (ছাত্রদের ক্ষেত্রে পড়াশোনার চেয়ে দলভুক্ত হলে সহজেই লক্ষ্যভেদ করা যাবে— এই ধারণা থেকে শ্রেণিভুক্ত হয়।) প্রয়োজন অনুযায়ী উপযুক্ত শ্রেণিগুলোকে যদি একজোট করা যায়, তা হলেই কেল্লা ফতে। সেই প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগ শ্রমিক ওই রাজনৈতিক দলের অধীন হবেন। ‘কিছুর মধ্যে জড়াতে চাই না’— এতেই সেই শ্রেণি বিবেকের কাছে তৃপ্ত। এই দলের মতামত থাকে অপ্রকাশিত। ফলে তাঁদের নিয়ে টানাটানি চলে না। যেমন কোনও প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ ‘নোটা’ করে না, এ ক্ষেত্রেও তাই। এঁরা আসলে কাজের লোক। হয়তো একটু ভিতু। তাঁদের মধ্যে অনেকেই পদোন্নতিকে পদস্খলন মনে করেন। তাই তাঁরা সেটা চান না। যেমন, অনেকেই আছেন যাঁরা পুলিশ কনস্টেবল থেকে প্রোমোশন নিয়ে অফিসার হতে চান না, আবার সহকারী শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিতে চান না। মনে হয় তাঁরা ভাবেন, উন্নতি হলে হয়তো তাঁদের জো-হুজুরির কলে পড়তে হবে, অর্থাৎ তাঁবেদারি করতে হবে। দলভুক্তকরণ করার পরেই শুরু হয় ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের নামে দলগুলির ক্ষমতা দখলের লড়াই। শ্রমিক স্বার্থ খুব কমই চরিতার্থ হয়। যেটা বেশি হয় তা হল, দলগুলির ক্ষমতা চরিতার্থ করা। এর ফলে সত্যিই অচলায়তন তৈরি হয়।
প্রবন্ধকার শেষে বলেছেন, তা হলে অচলায়তনের শেষ কোথায়? গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা যখন ক্ষমতাতান্ত্রিক হয়ে পড়ে, তখন অচলায়তন তৈরি হয়। এর থেকে বেরোতে প্রয়োজন জনসচেতনতা, আর এক বলিষ্ঠ নেতৃত্ব। হতাশ না হয়ে বলা যায় সে দিন আসবেই, আসতে বাধ্য।
শুভেন্দু মণ্ডল, বগুলা, নদিয়া
ঝাঁকের কই
‘প্রাতিষ্ঠানিক অচলায়তন’ শীর্ষক প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। ‘দুর্নীতি আত্মজ্ঞান ও রামমোহন’ শীর্ষক প্রবন্ধে (দেশ, ৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮) অম্লান দত্ত বলেছিলেন, “রবীন্দ্রনাথের উদ্যোগে অথবা তাঁর নামে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষায়তনও মূঢ় দলীয়তার এই ব্যাধি থেকে মুক্ত নয়। বিশ্বভারতীতে কংগ্রেসের দুই উপদল বছরের পর বছর নির্লজ্জভাবে খণ্ডযুদ্ধে মত্ত। ছাত্র ভর্তির ব্যাপারে নীতির বালাই নেই। রবীন্দ্রভারতীতে অধ্যাপক নিয়োগের আগে প্রার্থীর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, বামফ্রন্ট সরকার সম্বন্ধে প্রার্থীর অভিমত কী? না, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নয়, নৃত্যশিল্পীর নির্বাচনে এই প্রশ্ন! এতে যে প্রার্থীর যোগ্যতা যাচাই হয় না, নির্বাচকের যোগ্যতা ও নিরপেক্ষতা সম্বন্ধেই সন্দেহ জাগে, এ বিষয়ে কি নির্বাচন কমিটির অভিজ্ঞ সভাপতি সচেতন নন? সচেতন হওয়া প্রয়োজন বলেও মনে করেন না? এই ধরনের অবিচারে জনমত অতি অভ্যস্ত অতএব প্রতিবাদহীন। তবু বাঙালি সমাজের শিক্ষা-সংস্কৃতির সাম্প্রতিক ইতিহাসের ওপর ঘটনাটি আলোকপাত করে বলেই উল্লেখযোগ্য। বিশ্বভারতী ও রবীন্দ্রভারতীর যদি এই অবস্থা হয় তবে এ রাজ্যে অন্যান্য কলেজে ও বিদ্যালয়ে গ্রামে গ্রামে অবস্থা কোথায় ঠেকেছে, সেটা অনুমান করা কঠিন নয়।”
সমাজের এক জন বিদগ্ধ মানুষের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বুঝতে পারি, অচলায়তনের সাম্রাজ্য যুগে যুগে বিস্তার লাভ করেছে। এক সময় সমাজের অযৌক্তিক চিন্তাভাবনার দ্বারা গঠিত অচলায়তনকে ভাঙতে গিয়েই বাংলায় নবজাগরণের উন্মেষ। শ্রীচৈতন্য, রামমোহন, বিদ্যাসাগর, এঁদের হাত ধরেই বাংলা তথা ভারত আলোকপথের দিশারি হয়েছিল।
প্রবন্ধকার প্রাতিষ্ঠানিক অচলায়তনের ক্ষেত্রে পিছন দিকে এগিয়ে চলার কথা বলেছেন। দেশ তথা রাজ্য জুড়ে এর প্রভাব আমরা সাধারণ নাগরিক সমাজ প্রতিনিয়ত প্রত্যক্ষ করেই চলেছি। হাতের মুঠোয় যখন আমরা চাঁদ পাওয়ার খবর সংবাদপত্রের পৃষ্ঠায় পাই, ঠিক তার পাশেই স্থান পায় উত্তরপ্রদেশের এক শিক্ষিকা ক্লাসের সংখ্যালঘু ছাত্রকে প্রহার করার নিদান দিচ্ছেন তার সহপাঠীদের।
দেশ জুড়ে বিজ্ঞানের জয়যাত্রায় আমরা যন্ত্রের পর চাঁদে রোবট মানুষ পাঠানোর কথাও ভাবছি। এরই পাশাপাশি এই সমাজ সমান ভাবে অবিজ্ঞানের চর্চাতেও ব্রতী। এক শ্রেণির মানুষ জ্যোতিষ-টিয়াপাখির চর্চাতেই মেতে থাকেন, কিংবা অতিমারিতে আমরা দেখেছি করোনা থেকে মুক্ত হতে সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনেই গোষ্ঠীবদ্ধ ভাবে কিছু মানুষ গোমূত্র সেবন করছেন। ঝাঁকের কই হয়ে থাকতেই আমাদের সমাজ স্বচ্ছন্দ বোধ করে। তাই কর্মস্থলে যে মানুষটি নিজের দক্ষতা এবং জ্ঞানের পরিধির উপর যথেষ্ট আস্থা রেখে নিয়মমতে চলেন এবং তাঁর কর্তব্য পালন করেন, সেখানে সৎ-কর্মনিষ্ঠ মানুষের প্রতি অচলায়তনে আস্থা-রাখা গোষ্ঠীবদ্ধ মানুষগুলির থেকে যে আঘাত আসবেই, সে বিষয়ে সংশয় নেই। তবু মনে হয়, এই মানুষগুলির সকলেই যে অদক্ষ-অকর্মণ্য তা হয়তো নয়, কিন্তু ঝুট-ঝামেলার মধ্যে না গিয়ে তাঁরা দল ভারীর দিকেই ঝুঁকে থাকতে পছন্দ করেন। কারণ তাঁরা জানেন যে, আখেরে তাঁদের মতো সুবিধাবাদী গোষ্ঠীগুলিই লাভবান হবে। তাই ‘চোরে চোরে মাসতুতো ভাই’ হয়ে থাকাই যুক্তিযুক্ত কাজ। এমন ভাবনাচিন্তার ক্ষেত্রে তখন তাঁদের জীবনের আদর্শ এবং দর্শনের বোধগুলি খানিক স্তিমিত হয়ে আসে। তাই অচলায়তনের প্রতি আস্থা রাখাই তাঁরা শ্রেয় মনে করেন। এ ভাবেই ‘শৃঙ্খল’ আকারে সমাজে অচলায়তনের পক্ষে মানুষের দল বাড়তেই থাকে।
এই অনৈতিকতার পথ ধরেই একটু একটু করে অবক্ষয়ের রোগ দানা বাঁধতে থাকে। আমাদের জীবনের চার পাশ জুড়ে কৃতী মানুষদের ভিড় থাকলেও উনিশ শতকের মতো কোনও মহামানবের আবির্ভাব এখনও এই সমাজে ঘটেনি। ইতিহাসের হাত ধরে আবারও এক দিন হয়তো কোনও যুগমানব উঠে আসবেন। ক্ষুদ্র স্বার্থের সাধনায় চলতে থাকা এই সমাজ ক্রমেই এক দিন অচলায়তনের প্রান্তিক অবস্থানে পৌঁছে খাদের কিনারায় এসে দাঁড়াবে। সে দিনও আমরা সেই মহামানবের আবির্ভাবের অপেক্ষাতেই থাকব।
সঞ্জয় রায়, দানেশ শেখ লেন, হাওড়া
কাগজের ঘুড়ি
বিশ্বকর্মা পুজোর অন্যতম মুখ্য আকর্ষণ ঘুড়ি ওড়ানো। প্রতি বছরই পুজোর দিন কলকাতা-সহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের আকাশ ছয়লাপ হয়ে থাকে রংবেরঙের ঘুড়িতে। বিগত দুই দশক আগে পর্যন্ত সাধারণত কাগজের ঘুড়ি ও সুতির সুতোর মাধ্যমে ঘুড়ি ওড়াতে দেখা যেত। দিন যত সামনের দিকে এগিয়ে আধুনিক থেকে আধুনিকতর হয়েছে, কাগজের ঘুড়ির পরিবর্তে বাজারে এসেছে প্লাস্টিকের ঘুড়ি, সুতির সুতোর পরিবর্তে এসেছে নাইলন সুতো।
বলা বাহুল্য এই দু’টি জিনিসই পরিবেশের পক্ষে ক্ষতিকর। আমরা মাঝেমধ্যে সংবাদপত্রের পাতায় দেখতে পাই চিনা মাঞ্জা সুতো লেগে বাইক আরোহীর দুর্ঘটনার কথা। শরীরের কোথাও নাইলন সুতো জড়িয়ে রক্তপাতের ঘটনা। নাইলন সুতো শুধু মানুষের ক্ষতি করে না, বহু পাখি এই সুতো জড়িয়ে মারা যায়। এই সুতো সাধারণত রঙিন হওয়ায় দূর থেকে দেখা যায় না বলে আকস্মিক ভাবে আহত হতে হয়। প্রশাসনকে প্লাস্টিক ঘুড়ি ও নাইলন সুতো ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি-সহ সমস্ত ব্যবহারকারী ও বিক্রেতাদের যথাযোগ্য শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
শ্রীমন্ত পাঁজা, গঙ্গাধরপুর, হাওড়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy