Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Letters to the editor

সম্পাদক সমীপেষু: বিস্মৃতির অন্ধকারে

সে দিন ওঁরা তিন জন বাংলা ভাষার স্বীকৃতির দাবিতে গণপরিষদে যে প্রস্তাব পেশ করলেন, তাতে বাংলাদেশ থেকে আগত অন্য কোনও প্রতিনিধি স্বাক্ষর করলেন না।

শেষ আপডেট: ০২ জানুয়ারি ২০২২ ০৬:০৭
Share: Save:

সেমন্তী ঘোষ ‘বাংলাদেশের হৃদয়’ (১৫-১২) প্রসঙ্গে সঙ্গত ভাবে বলেছেন “বাইরের সংগ্রাম মিটলেও অন্দরের সংগ্রামে, অন্তরের সংগ্রামে আজও ক্ষতবিক্ষত দেশটি।” ১৯৪৮ সালে মার্চ মাসে মহম্মদ আলি জিন্নার স্পর্ধিত উক্তি ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ সবাই মনে রেখেছেন। কিন্তু তার আগেই এই মর্মে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত (ছবিতে), রাজকুমার চক্রবর্তী আর প্রেমহরি বর্মার তীব্র প্রতিবাদের কথা ক’জন মনে রেখেছেন? সে দিন ওঁরা তিন জন বাংলা ভাষার স্বীকৃতির দাবিতে গণপরিষদে যে প্রস্তাব পেশ করলেন, তাতে বাংলাদেশ থেকে আগত অন্য কোনও প্রতিনিধি স্বাক্ষর করলেন না। নিশ্চয়ই অন্দরমহলে সংঘাতের কারণেই করলেন না। ওই একই কারণে বোধ হয় পঞ্চাশ বছর পূর্তির উৎসবে কোথাও শোনা গেল না ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান গণপরিষদের বিশাল কক্ষে দোর্দণ্ডপ্রতাপ প্রেসিডেন্ট জিন্নার মুখের উপর ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের সেই দৃপ্ত ভাষণের কথা, “...সো, স্যর, আই নো আই অ্যাম ভয়েসিং দ্য সেন্টিমেন্টস অব দ্য ভাস্ট মিলিয়নস অব আওয়ার স্টেট অ্যান্ড দেয়ারফোর বেঙ্গলি শুড নট বি ট্রিটেড অ্যাজ় আ প্রভিনশিয়াল ল্যাঙ্গোয়েজ। ইট শুড বি ট্রিটেড অ্যাজ় দ্য ল্যাঙ্গোয়েজ অব দ্য স্টেট।”

ওই ঘটনার মাত্র কিছু দিন আগে যুবক মুজিবুর রহমান কলকাতায় আজকের মৌলানা আজাদ কলেজ থেকে স্নাতক হয়ে দেশব্যাপী অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পথ খুঁজতে শুরু করেছেন। গণপরিষদের সেই ঝড় সে দিন যুবক মুজিবকে প্রবল ভাবে নাড়া দিয়েছিল। সদ্যগঠিত ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম সমিতি’ও ধীরেন্দ্রনাথ আর রাজকুমার-এর তুফান তোলা ভাষণ থেকে নতুন দিগন্তের সন্ধান পেয়েছিল। বিশেষ করে ‘কোরান’ থেকে অনর্গল উদ্ধৃতিসম্বলিত রাজকুমার চক্রবর্তীর ভাষণ গণপরিষদে সাড়া ফেলে দেয়। ডন পত্রিকা ‘মৌলবি চক্রবর্তী’ নামকরণ করে তাঁর ভাষণের প্রভূত প্রশংসা করে। আজ এই পঞ্চাশ বছর পূর্তির উৎসবে রাজকুমার চক্রবর্তী কোথায়?

১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হওয়ার ঠিক দু’দিন আগে কুমিল্লার বাড়ি থেকে পাক হানাদাররা ৮৫ বছরের বৃদ্ধ ধীরেন্দ্রনাথ ও তাঁর পুত্র দিলীপকে তুলে নিয়ে যায়। নৃশংস অত্যাচারের পরে খুন করে তাঁদের দেহ মাটি চাপা দিয়ে দেয়। তার পর? পঞ্চাশটা বছর চলে গিয়েছে, বিস্মৃতির অন্ধকারে ওঁদের আর আমরা দেখতে পাই না।

অরুণকান্তি দত্ত, বালি, হাওড়া

মুক্তিযোদ্ধা

আফরোজা খাতুন (‘মুক্তিযুদ্ধের অর্ধেক আকাশ’, ১৫-১২) গোবরা ক্যাম্প থেকে ট্রেনিং দিয়ে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে যাঁদের পাঠানো হয়েছিল এবং যাঁরা ৪-৫ মাস ফ্রন্টে কাজ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে দু’টি নাম তাঁর প্রবন্ধে লিখেছেন। নাম দু’টি, গীতা কর এবং গীতা মজুমদার। তাঁরা ছাড়াও ত্রিপুরার ওই আহত মুক্তিযোদ্ধা হাসপাতালে গোবরা ক্যাম্প থেকে পাঠানো আরও ১৩ জন মহিলা মুক্তিযোদ্ধা (মোট ১৫ জন) কাজ করেছিলেন। এঁদের কয়েক জন হলেন বিশাখা বৈরাগী (বিশ্বাস), রঞ্জিতা বিশ্বাস, ছায়া হালদার (মল্লিক), লক্ষ্মী মণ্ডল, ইরা কর, মঞ্জু বিশ্বাস, শোভা বৈরাগী, অনিলা, আরতি প্রমুখ। গোবরা ক্যাম্পে সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বে যে মহিলাদের মুক্তিযোদ্ধার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে মাত্র ১৫ জনকে প্রথম ব্যাচে ফ্রন্টে পাঠানো হয়েছিল এবং তাঁরা সাফল্যের সঙ্গে কাজ করেন। ওই ক্যাম্পটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ত্রিপুরার উপ্তাখালিতে, জায়গাটি ব্যানার্জিবাবুর বাগান বলে পরিচিত ছিল।

ওই ১৫ জনের এক জন বিশাখা বৈরাগী (বিশ্বাস) এখন কলকাতার অদূরে মধ্যমগ্রামে বসবাস করেন। তাঁর কাছে অনেক তথ্য ও অভিজ্ঞতার বর্ণনা পাওয়া যেতে পারে।

সুকৃতিরঞ্জন বিশ্বাস, মসলন্দপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

আশা ও দুশ্চিন্তা

‘বাংলাদেশের হৃদয়’ (১৫-১২) এক সাবলীল উপস্থাপনা। তবে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে কিছু বিষয় অনালোচিত থেকে গেল। ১৯৪০ সালে মুসলিম লীগের লাহোর অধিবেশনে এ কে ফজলুল হকের অবিভক্ত বাংলা-সহ ধর্মের ভিত্তিতে পৃথক পাকিস্তানের সংশোধিত প্রস্তাবের ভবিষ্যৎ পরিণাম ১৯৪৭-এর দেশভাগের ভিত্তিতে পূর্ব পাকিস্তান এবং ১৯৭১ স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম। সংশোধিত এই কারণে যে, ১৯৩৪ সালে মহম্মদ ইকবাল ও মহম্মদ আলি জিন্নার যৌথ উদ্যোগে ধর্মের ভিত্তিতে পৃথক রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাবে তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার কোনও নামই ছিল না। পাকিস্তান শব্দের উৎপত্তি ‘পাকস্তান’ থেকে, যার ব্যাখ্যায় ছিল ‘পি’ মানে পঞ্জাব, ‘এ’ আফগানিস্তান, ‘কে’ কাশ্মীর, ‘এস’ সিন্ধু প্রদেশ বা সিন্ধ এবং বেলুচিস্তানের শেষ তিনটি অক্ষর ‘টিএএন’। সুতরাং, ১৯৪০ সালে মুসলিম লীগের লাহোর অধিবেশনে ফজলুল হকের প্রস্তাবে তৎকালীন বাংলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। বাঙালির বিপর্যয়ের সূচনা সেখান থেকেই। যখন ফজলুল হক উপলব্ধি করেছিলেন যে এটা ভুল ছিল, তত দিনে পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে গিয়েছিল। তার পরিণাম, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ, দাঙ্গা, দেশভাগ, হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিটেমাটি, সম্মান এবং আত্মপরিচয় হারিয়ে উদ্বাস্তু হওয়া। তাই বাঙালির বিপর্যয়ের সূচনার দায় তাঁকেই নিতে হবে।

সেমন্তী ঘোষ আর একটি বিষয় উল্লেখ করে প্রশ্নচিহ্ন রেখেছেন— ১৯৪৮ সালে মহম্মদ আলি জিন্নার একটি ঘোষণা, উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। এই প্রশ্নচিহ্নের প্রেক্ষিতে আমার ব্যক্তিগত মত হল, দেশভাগের যন্ত্রণা ও ভিটেমাটি, স্বজন হারানোর হাহাকার নিয়ে বেঁচে থাকা বাঙালির ক্ষোভের আগুনে এটা ছিল ঘৃতাহুতি, হিন্দু-মুসলিম-সহ বাঙালি জাতিসত্তা ও তার সংস্কৃতিকে অবলুপ্ত করে দেওয়ার বিপজ্জনক প্রক্রিয়া। তার স্বাভাবিক পরিণাম মুক্তিযুদ্ধ ও ১৯৭১-এ স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমানের উদার নেতৃত্ব।

পরিশেষে লেখিকা লিখেছেন, বাইরের সংগ্রাম মিটলেও অন্তরের সংগ্রামে আজও ক্ষতবিক্ষত দেশটি। কথাটি যে ঠিক, সেটা সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো নিরীক্ষণ করলেই বোঝা যায়। আশার আলো এটাই যে, বাংলাদেশে শাহবাগ এখনও বেঁচে আছে। অপর দিকে দুশ্চিন্তা যে, বাংলাদেশের প্রশাসনের ভিতরে ধর্মান্ধ ও পাকপন্থী জামাত ধীরে ধীরে সংগঠিত হচ্ছে।

জ্যোৎস্না মুখোপাধ্যায়, বেলতলা পার্ক, বালুরঘাট

গর্বিত বাঙালি

ইন্দ্রনীল বন্দ্যোপাধ্যায়ের “শেষ হাসি ‘বাঙাল’দেরই” (২০-১২) প্রবন্ধ যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক। চলিত কথা আছে, বাঙালিরা কাঁকড়ার জাত। কেউ উপরে উঠলে তাকে যত ক্ষণ না টেনে নামাতে পারছে, তাদের শান্তি নেই। কিন্তু বাংলাদেশ তথা বাঙালিরা এই কথা মিথ্যা প্রমাণ করে দিয়েছেন। পশ্চিম পাকিস্তানের চাপিয়ে দেওয়া উর্দু ভাষা বর্জন করে বাংলা ভাষার লড়াইকে বিশ্বের ইতিহাসে স্থান পাইয়ে দিয়েছেন— এর থেকেই বোঝা যায় বাঙালিরা কত ঐক্যবদ্ধ। সেটা সম্ভব হয়েছে বাংলাদেশের মানুষ এবং অবশ্যই মুজিবুর রহমানের জন্য। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল স্বাধীন বাংলাদেশ, যে দেশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের থেকেও রয়েছে পর্যাপ্ত শস্যভান্ডার, যেখানে দু’বেলার ভাত, ডাল, মাছের অসুবিধা হবে না কোনও নাগরিকের। বঙ্গবন্ধু না থাকলে এই বাংলাদেশ এখনকার বাংলাদেশে পরিণত হত না। রাজনীতি করলেও আজ এই বাঙালিরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ— যে কোনও মূল্যে দেশকে সীমিত পরিসরেও উপরে নিয়ে যেতে হবে।

প্রদীপ মারিক, কলকাতা-১৪৪

ফুটব্রিজ চাই

সম্প্রতি অনেকগুলি প্যাসেঞ্জার ট্রেনের টার্মিনাল হাওড়া স্টেশন থেকে শালিমারে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। কিন্তু যাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রায় কিছুই করা হয়নি। দু’টি লেভেল ক্রসিং আছে, যেগুলি অধিকাংশ সময়ই পথচারীদের জন্য বন্ধ রাখা হয়। ফলে, মানুষ এই দু’টি লেভেল ক্রসিংয়ে দীর্ঘ ক্ষণ অপেক্ষমাণ থাকেন। কেউ কেউ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেনের উপর বা তলা দিয়ে যেতে বাধ্য হন। দুর্ঘটনাও ঘটে। জনসাধারণের অনেক দিনের চাহিদা, লেভেল ক্রসিং দু’টিতে ফুট ব্রিজ করা হোক।

অমিতাভ চক্রবর্তী, বি গার্ডেন, হাওড়া

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Letters to the editor Dhirendranath Datta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE