Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: মঞ্চে পকেটমার

মঞ্চে ছিল বিশৃঙ্খল অবস্থা। বেশ ভিড়। মঞ্চ থেকে নেমে হঠাৎই লক্ষ করলাম, পাঞ্জাবির বুকপকেট এবং সাইড পকেট থেকে মোবাইল এবং মানিব্যাগ উধাও।

শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:১৪
Share: Save:

‘মঞ্চেই উধাও বিধায়কের ব্যাগ’ শীর্ষক সংবাদ প্রসঙ্গে বলি, বেশ কয়েক বছর আগে ধর্মতলায় একটি রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে আমারও অনুরূপ অভিজ্ঞতা হয়েছিল। মঞ্চে ছিল বিশৃঙ্খল অবস্থা। বেশ ভিড়। মঞ্চ থেকে নেমে হঠাৎই লক্ষ করলাম, পাঞ্জাবির বুকপকেট এবং সাইড পকেট থেকে মোবাইল এবং মানিব্যাগ উধাও। ময়দান থানাতে অভিযোগ জানালাম। এক পুলিশ অফিসার জানালেন, ধর্মতলা চত্বরে কোনও রাজনৈতিক অনুষ্ঠান হলে রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে পকেটমাররাও ভিড়ে মিশে এই অপকর্ম করে। প্রতিকার হিসেবে জানালেন, ধুতি-পাঞ্জাবি বা পাজামা পাঞ্জাবি পরলে, গেঞ্জি অবশ্যই ধুতি বা পাজামার মধ্যে গুঁজে পরতে হবে। গেঞ্জির মধ্যে মানিব্যাগ ও মোবাইল রাখতে হবে। পকেটমাররা কিছু করতে পারবে না। ওঁর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে সুফল পেয়েছি।

শোভনলাল বকসী

কলকাতা-৪৫

রাধাকৃষ্ণণ

শ্যামল মৈত্র সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণের ‘ইন্ডিয়ান ফিলজ়ফি’ বইটি সম্বন্ধে চিঠিতে লিখেছেন (‘জেনে রাখা ভাল’, ৫-৯), ‘‘তাঁর (যদুনাথ সিংহ-র) মতে বইটির অনেকটা অংশই তাঁর গবেষণাপত্রের হুবহু নকল।’’ এই অভিযোগের উত্তরে ১৯২৯-এর মার্চে ‘মডার্ন রিভিউ’ পত্রিকায় লেখা চিঠিতে রাধাকৃষ্ণণ লেখেন যে ও রকম পারস্পরিক মিল ম্যাক্স মুলার, হিউম ও মিড-এর বইগুলোতেও প্রচুর দেখা যায়। তার কারণ মূল সংস্কৃত বইয়ের পাঠ বা ভাষ্য একই, বিষয় ও এমনকি শৈলীও একই। রাধাকৃষ্ণণ এও বলেন যে তিনি মূল যে সব সংস্কৃত বই ও তার অনুবাদ থেকে পাঠ ও ভাষ্য নিয়েছিলেন তাদের প্রত্যেকটিরই নাম গ্রন্থসূত্র হিসেবে যথাযথ ভাবে উল্লেখ করেছেন। ভারতীয় ‘ষট্ দর্শন’-এর ক্ষেত্রে তাঁর ও যদুনাথের লেখায় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ওরিয়েন্টাল সিরিজ়’ ও ‘সেক্রেড বুকস অব দ্য হিন্দুজ় সিরিজ়’-এর ইংরেজি অনুবাদের বইগুলির ব্যাস, বাচস্পতি মিশ্র, বিজ্ঞানভিক্ষু, প্রভাকর ইত্যাদিদের ভাষ্য ও পাঠ ব্যবহৃত হয়েছে বলেই দু’টির মধ্যে বেশ মিল দেখা যায়।

ড. রাধাকৃষ্ণণ অধ্যাপক গঙ্গানাথ ঝা অনূদিত (১৯১৬) শ্রীধর আচার্যের ‘ন্যায় কন্দলী’র পাতার পর পাতা যদুনাথের এই গবেষণাপত্রে একেবারে হুবহু চলে আসার বেশ কয়েকটি প্রমাণ ও নমুনা চিঠিতে দেখান। যদুনাথের মামলার প্রত্যুত্তরে রাধাকৃষ্ণণ যদুনাথের বিরুদ্ধে কলকাতা হাই কোর্টে এক লাখ টাকার মানহানির মামলা করলে রাধাকৃষ্ণণের পক্ষে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য কলকাতায় চলে আসেন স্বয়ং লেখক-অধ্যাপক গঙ্গানাথ ঝা ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি কলেজের সংস্কৃত ও ফিলোলজির বিখ্যাত অধ্যাপক কুপুস্বামী শাস্ত্রী। এই অবস্থায় জয়ের ব্যাপারে অনিশ্চয়তার কারণেই যদুনাথ মামলা তুলে নিতে রাজি হন।

‘মডার্ন রিভিউ’-এর সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় যদুনাথকেই অহেতুক এই মামলাটি করার জন্য দায়ী করেছিলেন। এই মামলা প্রসঙ্গে রামানন্দ লিখেছেন, ‘‘অধ্যাপক যদুনাথ সিংহের যদি মোকদ্দমা করিবার ইচ্ছা ছিল, তাহা হইলে মডার্ন রিভিউয়ের চারি সংখ্যার এতগুলি পাতা নষ্ট করিয়া আমাকে না জড়ালেই ভাল হইত।... তিনি মোকদ্দমা না করিলে খুব সম্ভব অধ্যাপক রাধাকৃষ্ণণও তাঁহার ও আমার নামে মোকদ্দমা করিতেন না। ...অধ্যাপক রাধাকৃষ্ণণকে আমি মোকদ্দমা করার জন্য তেমন দোষ দি না যেমন দি অধ্যাপক যদুনাথ সিংহকে।’’ (‘প্রবাসী’, ৩৩তম ভাগ, ১ম খণ্ড)।

পীযূষ রায়

বেহালা

প্রাইভেট টিউশন

বাম আমলে স্কুল মাস্টারদের উপর যখন প্রাইভেট টিউশন বন্ধের খাঁড়া নেমে এসেছিল তখন স্কুলেরই এক নামকরা ইংরাজি স্যরের বাড়িতে পড়তে যেতাম। মনে পড়ে সিঁড়ির নীচের অন্ধকার ঘুপচিতে স্তূপাকার জুতোর ছবি আর মাস্টারমশাইয়ের নিত্যকার সাবধানবাণী, ‘‘খবরদার কাউকে বলবি না যে আমার কাছে পড়িস।’’ বছর পনেরো আগে ক্লাস ইলেভেনে ‘কোথায় পড়ব’জনিত উদ্বেগের মেঘ ক’দিনের জন্য দেখা দিলেও অচিরেই কেটে গিয়েছিল। সরকারি নির্দেশের মুখে ছাই দিয়ে শেষ হাসি হেসেছিল প্রাইভেট টিউশন। ‘শিক্ষকদের টিউশন বন্ধের আর্জি’ (১৩-৯) শীর্ষক খবরের প্রেক্ষিতে বলা ভাল, স্কুলশিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশনের জন্য পশ্চিমবঙ্গ গৃহশিক্ষক কল্যাণ সমিতি যে ভাবে নিজেদের অস্তিত্ব সঙ্কটের কথা তুলে ধরেছে তা আংশিক সত্য হলেও অনেকাংশেই মনগড়া ও সারবত্তাহীন। সরকার পরিচালিত ও পোষিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শ্রেণিপিছু শিক্ষার্থী-শিক্ষকের অনুপাত ক্রমশই ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ায় এবং মিড ডে মিল বা কন্যাশ্রী-সহ একাধিক প্রকল্পের জনমোহিনী জালে শিক্ষকদের সিংহভাগ জড়িয়ে পড়ায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পড়ার মান সন্তোষজনক থাকছে না। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে যাতায়াতের হয়রানি, নিজেকে সোশ্যাল প্রমাণ করার মুঠোফোন ব্যাধি ও ক্লাসরুমের সীমাহীন বিশৃঙ্খলাকে বাগে আনার অনীহা। ফলে আন্তরিকতায় খাদ না থাকলেও অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকাই ব্যবস্থার কাছে বিবেক সমর্পণে বাধ্য হন।

প্রথাগত শিক্ষার ফাঁককে ও শিক্ষকদের একাংশের ফাঁকিকে কাজে লাগিয়েই বেড়ে উঠেছে গার্হস্থ্য বিদ্যা-ব্যবসার এই বহুচর্চিত বাজার। যার উপর ভিত্তি করে এই দোদুল্যমান অর্থনীতিতেও বুকভরা অক্সিজেন পেতে পারেন লক্ষ লক্ষ বেকার ছেলেমেয়ে-গৃহবধূ-অবসরপ্রাপ্ত কর্মী এমনকি বেসরকারি কলকারখানায় কোনও মতে চাকরি বাঁচানো অনিশ্চয়তার গোলকধাঁধায় ঘুরতে থাকা মধ্যবয়সি শ্রমিকও। উদীয়মান প্রেমিক থেকে উঠতি সেলসম্যান— ভ্যালেন্টাইন বা বৌয়ের বায়না মেটানোর রসদ জোগাতে— দুটো শাঁসালো বাড়ির প্রাইভেট টিউশন অনেকের কাছেই সবেধন নীলমণি। কর্মক্ষেত্রে লালবাতি জ্বলতে থাকা রাজ্যে এই বাড়তি পাওনায় নজরদারি চালিয়ে সরকারও হাত পোড়াতে চায় না। কেবল বশ্যতায় খুশি না হলে একটু সার্কুলারের চোখরাঙানি। ফলে সরকারি বেতনভুক শিক্ষকদের অনেকেই বস্তুগত তাড়নায় দুটো উপরি লাভের আশায় গৃহশিক্ষকের বর্ম ধারণ করেন।

প্রসঙ্গত, শিক্ষককুলের প্রাইভেটে পড়ানোয় অশনি সঙ্কেত দেখতে পাওয়া সমালোচনায় মুখর গৃহশিক্ষকদের একাংশের প্রতিবাদের ধরনে যেন ঈর্ষা ও পরশ্রীকাতরতার সম্মিলিত আভাস মেলে। রুট নিয়ে অটো আর টোটো চালকরা যেমন পরস্পরের রোষের শিকার হন, ঠিক তেমন। এক জন যোগ্য স্কুলশিক্ষক যদি মেকি আদর্শের নামাবলি জড়িয়ে তথাকথিত শিক্ষাদানের রাস্তায় না হেঁটে শিক্ষা বিপণনের মধ্যেই বেশি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন এবং তাতে যদি শিক্ষার্থীরাও লাভবান হয়, তা হলে দোষটা কোথায়? যদি প্রশ্ন ওঠে, বিনা পারিশ্রমিকেই তো স্কুলশিক্ষকরা পড়াতে পারেন, তা হলে বলতেই হবে, ইনসেন্টিভ বা উৎসাহ ভাতা ছাড়া উৎসাহে ভাটা পড়বেই। রাজনৈতিক দলের কোনও মূর্খ জনপ্রতিনিধি যদি শংসাপত্রে সই করার জন্য গোপনে টাকা চাইতে পারেন, তবে তাঁর চেয়ে যোগ্যতর এক জন শিক্ষকের ফি নিয়ে সরব হতে দোষটা কোথায়? ঘটনাচক্রে ক্লাসটিচারের রক্তচক্ষুর ভয়ে, বেশি নম্বর বা সাজেশনের লোভে ছাত্রছাত্রীদের একাংশ যদি তাঁরই কাছে ঘরোয়া পাঠ নিতে যায়, তা হলেও গৃহশিক্ষকদের তোলা ‘ভাতে মারার’ অভিযোগটা কত দূর যুক্তিগ্রাহ্য হবে?

স্কুলশিক্ষক বনাম গৃহশিক্ষকের এই শিশুসুলভ দ্বৈরথে পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ যেন তমসাচ্ছন্ন না হয়ে পড়ে। শিক্ষা কারও একচেটিয়া স্বত্ব নয়। তাই কার কাছে প্রাইভেটে পড়ব— এই নির্বাচনের অধিকার থাকুক শুধুই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। আলঙ্কারিক অনশনে বসে সহানুভূতি কুড়িয়ে লাভ কী, বরং শিক্ষার্থীর প্রকৃত মানোন্নয়নের লক্ষ্যে দু’পক্ষের সুস্থ প্রতিযোগিতাই বিদ্যাচর্চার মডেল হয়ে উঠুক।

সুগত কর্মকার

কলকাতা-১৩৭

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Meeting Stage Pick Pocket
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE