Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: গুরুদেব ও ‘চাষা’

গুরুদেবের সঙ্গে এলমহার্স্টের এই নিবিড় সম্পর্কের বিষয়টি ‘বিস্মৃতপ্রায়’, ঠিক যে ভাবে গুরুদেবের পল্লি সংগঠনের কাজ ও লেখা নিয়ে আমরা খুব বেশি আলোচনা করি না।

শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৮ ০০:২৭

পল্লিসংগঠক রবীন্দ্রনাথকে আমরা সে ভাবে আবিষ্কার করতে পারিনি। ‘পল্লী প্রকৃতি’র মধ্যে পল্লিবাসীর দুঃখ, দারিদ্র আর তা উপশমের যে চিত্র পাই তা আজও সমান প্রাসঙ্গিক। রবীন্দ্রনাথ মূলত নিজের পরিচয় দিয়েছেন কবি হিসাবে, আর এলমহার্স্ট নিজের প্রকৃত পরিচয় দিয়েছেন ‘চাষা’ হিসাবে। এলমহার্স্টের লেখা চিঠিপত্র থেকে তাঁর সঙ্গে গুরুদেবের আত্মিক সম্পর্কের কথা জানতে পারি। ৬ জুন ২০১৮, এলমহার্স্টের ১২৪তম জন্মদিবস পার হল।

গুরুদেবের সঙ্গে এলমহার্স্টের এই নিবিড় সম্পর্কের বিষয়টি ‘বিস্মৃতপ্রায়’, ঠিক যে ভাবে গুরুদেবের পল্লি সংগঠনের কাজ ও লেখা নিয়ে আমরা খুব বেশি আলোচনা করি না। ‘গ্রামে গাঁথা ভারতবর্ষ’-এর মুক্তির পথ খোঁজার জন্য অধুনা বাংলাদেশের শিলাইদহ কুঠিবাড়ি থেকে যে কাজ তিনি শুরু করেছিলেন, পরবর্তী কালে ১৯২২ সালে শ্রীনিকেতন প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে তা পূর্ণতা পায়। গুরুদেবের এই কাজে যে ক’জন বিশেষ ভাবে সহযোগিতা করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে লেনার্ড নাইট এলমহার্স্ট অন্যতম। ১৯২০ সালে আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহরে তাঁর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের পরিচয় ঘটে বিখ্যাত কৃষিবিদ হিগিনবটমের মাধ্যমে। এলমহার্স্ট গুরুদেবের অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব দেখে মুগ্ধ হন।

এলমহার্স্ট কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষিবিদ্যায় স্নাতক হয়ে ভারতবর্ষে এলেন ১৯২১ সালে। তিন বছর শ্রীনিকেতনের পল্লি পুনর্গঠনের কাজে যুক্ত ছিলেন। সেই সময় পরাধীন ভারতবর্ষে পল্লিপুনর্গঠন ও কৃষিকাজের উন্নয়ন সহজ ছিল না, কিন্তু এলমহার্স্ট অসীম অধ্যবসায় আর সাধনায় গুরুদেবের চিন্তাভাবনাকে কাজে পরিণত করার চেষ্টা করেছিলেন। গ্রামে গ্রামে ব্রতীদল গঠন, সমবায় প্রথায় বিজ্ঞানভিত্তিক চাষ, স্বাস্থ্য সমবায় গঠন, গ্রামীণ হস্তশিল্পীদের প্রশিক্ষিত করা প্রভৃতি কাজ বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।

দেশে ফিরে ১৯২৫-এ ডেভনশায়ারে ডারটিংটন হল ট্রাস্ট-এর প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২২-১৯৪৭ পর্যন্ত এলমহার্স্ট ও তাঁর সহধর্মিণী ডরোথি শ্রীনিকেতনের কাজে আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। ১৯৫২-য় ভারত সরকারের ‘কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট’-এর কাজ শুরুর সময়, এলমহার্স্টের শ্রীনিকেতনের অভিজ্ঞতা বিশেষ ভাবে কাজে লাগানো হয়। এলমহার্স্ট জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ছিলেন গুরুদেবের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং নিজেকে বিশ্বভারতীর এক সেবক ভাবতে ভালবাসতেন।

গুরুদেবের মৃত্যুর পর এলমহার্স্ট শান্তিনিকেতনে এসে সাইকেলে করে গ্রাম পরিদর্শন করতেন, তা এখনও অনেক শান্তিনিকেতনবাসীর স্মৃতিতে উজ্জ্বল। ভারতবর্ষ ছিল তাঁর কাছে প্রকৃত গৃহ, আর শান্তিনিকেতন শান্তির নীড়। তিনি কৃষক, শিল্পী, কারিগরদের প্রকৃত বন্ধু।

ভারতবর্ষের কৃষি কাজের উন্নয়ন ও আরও কতকগুলি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পিছনে লেনার্ড এলমহার্স্টের অবদান অনস্বীকার্য। মহান মানুষটি ১৯৪৭ সালের ১৬ এপ্রিল পরলোকগমন করেন। এলমহার্স্টকে নিয়ে এবং এলমহার্স্ট ও গুরুদেবের আত্মিক বন্ধনের বিষয় নিয়ে আরও বেশি চর্চার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি।

বিকাশ মাঝি বিশ্বভারতী, বীরভূম

মেয়েদের পৈতে

ড. কমলকৃষ্ণ চক্রবর্তী রচিত মনু সংহিতা-র টীকায় আছে (বিএ সংস্কৃত বীথিকা, ২য় খণ্ড), হিন্দু মেয়েদের পৈতের বিধান ছিল না। কিন্তু এ মতের সমর্থনে ঋগ্বেদ সংহিতা-য় কোনও শ্লোক দৃষ্ট হয় না। নির্ণয় সাগর প্রেস থেকে যে মনুস্মৃতি প্রকাশিত হয়েছে তার পরিশিষ্টে মনুর উক্তি বলে প্রচলিত কতকগুলো শ্লোক দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে অন্যতম শ্লোক হল: ‘‘পুরাকল্পে কুমারীণাং মৌজীবন্ধনমিষ্যতে/ অধ্যাপনাং চ বেদানাং সাবিত্রীবচনং তথা’’। শব্দকল্পদ্রুম অনুসারে, মৌজীবন্ধন উপনয়নকে সূচিত করে। তাদের সাবিত্রীমন্ত্র জপ এবং বেদ অধ্যাপনার অধিকার ছিল (পৃ. ৭১, ঋগ্বেদ সংহিতা, ১ম খণ্ড)। এই বিতর্কিত বিষয়ে বাংলার পণ্ডিতমণ্ডলীর সুস্পষ্ট অভিমত চাই৷

সুনীল সেনগুপ্ত বাঙালপুর, হাওড়া

রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক

‘বিনা অস্ত্রে পাহারা, তবু দোষী নিধিরাম’ শীর্ষক (১৩-৬) প্রতিবেদনে উল্লিখিত সংসদীয় কমিটির সামনে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের অকপট স্বীকারোক্তি এবং দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়ার প্রয়াস বিস্মিত করেছে। এর অর্থ দাঁড়ায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলোতে বড় মাপের অনাদায়ী ঋণের খবর তাঁর কাছে আসে না, বা এলেও গুরুত্ব পায় না, কারণ এক লক্ষেরও বেশি শাখা ব্যাঙ্কগুলোর খবর রাখা রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের পক্ষে সম্ভব নয়। এর জন্য উনি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কে ন’টি বিশেষ ক্ষমতা প্রদানের কথা বলেছেন। যদিও প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বেসরকারি ব্যাঙ্কটির ক্ষেত্রে চুপচাপ বসে রইলেন কেন? অবাক লাগছে, তিনি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের পরিকাঠামোর উন্নয়নের কথা এক বারও বলেননি। বলেননি যে একটি অনাদায়ী ঋণ একটি নির্দিষ্ট মাত্রা (ধরা যাক ৫০০ কোটি) ছাড়িয়ে গেলে তা সরকারি-বেসরকারি নির্বিশেষে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের নজরদারিতে আনতে হবে। উচিত ছিল বর্তমান অবস্থাতেই শুধু মাত্র অনাদায়ী ঋণ সংক্রান্ত ব্যাপারগুলির নজরদারিতে এক জন ডেপুটি গভর্নরের নেতৃত্বে একটি কমিটির হাতে দায়িত্ব দেওয়া।

মৃণাল মুখোপাধ্যায় কসবা

ব্লাড ব্যাঙ্ক

সমস্ত হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্তের চাহিদা প্রতি দিন বেড়েই চলেছে। হামেশাই রক্তের ভাঁড়ার শূন্য হয়ে পড়ছে। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রক্তদান শিবিরের আয়োজন করলেও, স্থায়ী সমাধান করা যাচ্ছে না। যে পরিবারের রক্ত লাগছে, দেখা যাচ্ছে তাদের কোনও সদস্য রক্তদানে আগ্রহী নন। এর ফলে রক্তের অভাব থেকেই যাচ্ছে। সাধারণ রোগীর ক্ষেত্রে সরকারি ভাবে নিয়ম করা উচিত, প্রতিটি ব্লাডব্যাঙ্কে পরিবারের অন্তত এক জন রক্তদান করে, তবে রক্ত নিতে হবে। অন্যথায় রক্ত পাওয়া যাবে না।

জয়দেব দত্ত কাটোয়া, পূর্ব বর্ধমান

ইতিহাসবোধ

‘‘ইতিহাস কোনও সাল তারিখ মুখস্থ রাখার বিষয় নয়, ইতিহাস আসলে একটা বোধ, এক ধরনের সচেতনতা।’’ ইতিহাস নিয়ে পড়তে চেয়ে এই উক্তি এ বারের উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম স্থানাধিকারীর। আজকে ভারতে গুরুত্বপুর্ণ সংঘাতগুলোর কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের পাঠ, তার অনুধাবন, বিশ্লেষণ। কাশ্মীর থেকে অযোধ্যার রাম জন্মভূমি বাবরি মসজিদ, ভারতের চিরকালীন বিতর্কগুলোর মূলে ইতিহাস। সাম্প্রতিক ভীমা কোরেগাঁওয়ের দলিত বিদ্রোহ কিংবা ‘পদ্মাবতী’র বাধ্য হয়ে ‘পদ্মাবত’ বনে যাওয়া— সবই আসলে ইতিহাস সচেতনতা এবং অসচেতনতার টানাপড়েনের ফল। সিনেমার আলাউদ্দিন খলনায়ক, কিন্তু ইতিহাসের আলাউদ্দিন? রেশন ব্যবস্থার প্রণেতা, নির্দিষ্ট গুণমানের ওজন এবং বাটখারা ব্যবস্থার প্রবর্তক। রানা প্রতাপের বীরত্বকে কুর্নিশ করতেই হবে, কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ, বহুত্ববাদী ভারতের ইতিহাসকে ধরতে গেলে নিরক্ষর আকবর ও তাঁর সভাসদ আবুল ফজ়লকে উপেক্ষা করার উপায় নেই।

এ সমস্ত জটিল তর্কে আমাদের ইতিহাসের কাছে ভরসা রাখা ছাড়া উপায় নেই, কিন্তু কী হবে, ইতিহাস যদি তৈরি করা হয়? রাজনৈতিক ক্ষমতা নিজেদের হিসেব অনুযায়ী চিরকাল পাল্টাতে চেয়েছে ইতিহাসের ভাষ্য। সেই সমস্ত প্রয়াস তখনই অসফল হবে, যদি দেশের জনগণের মধ্যে কাজ করে ইতিহাস-সচেতনতা, ইতিহাসবোধ।

দেবরাজ রায় চৌধুরী রাজমহল রোড, মালদহ

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

Rabindranath Tagore Leonard Knight Elmhirst
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy