Advertisement
E-Paper

ক্ষুদ্রতম প্রশ্নচিহ্নের সামনেও যেন দাঁড়াতে না হয় আমাদের গণতন্ত্রকে

দেশের নাগরিকদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার খতিয়ান লিখে নিয়ে স্ট্রং রুমে বন্দি হয়ে গিয়েছে যে সব ইভিএম, সে সব বদলে দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে বলে বিভিন্ন বিরোধী দল আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৯ ০০:২৫
নির্বাচন কমিশনকে কিন্তু অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতেই হবে। ছবি: সংগৃহীত।

নির্বাচন কমিশনকে কিন্তু অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতেই হবে। ছবি: সংগৃহীত।

কোনও সংশয়ের অবকাশ যেন না থাকে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র যখন নিজের রায় দিচ্ছে, তখন প্রক্রিয়াগত কোনও অস্বচ্ছতা যেন সে রায়ের বৈধতাকে কোনও ক্ষুদ্রতম প্রশ্নচিহ্নের সামনেও দাঁড় করাতে না পারে। ভারতের সপ্তদশ সাধারণ নির্বাচনের ভোট গণনার আগের দিন এই কথাটা মনে করিয়ে দিতে হচ্ছে সব পক্ষকে, বিশেষত নির্বাচন কমিশনকে।

যত এগিয়ে আসছে ফলপ্রকাশের ক্ষণ, ততই বাড়ছে উদ্বেগ। বিরোধী দলগুলো যে ভাবে একযোগে ইভিএম কারচুপির আশঙ্কা প্রকাশ করতে শুরু করেছে, তাতে উদ্বেগ তৈরি হতে বাধ্য। দেশের নাগরিকদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার খতিয়ান লিখে নিয়ে স্ট্রং রুমে বন্দি হয়ে গিয়েছে যে সব ইভিএম, সে সব বদলে দেওয়ার চেষ্টা হতে পারে বলে বিভিন্ন বিরোধী দল আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।

কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন বিরোধী দল একযোগে প্রতিনিধিদল পাঠাল নির্বাচন কমিশনে। ইভিএম বদল হতে পারে অর্থাৎ যে সব ইভিএমে ভোট হয়েছে, সেগুলো সরিয়ে স্ট্রং রুমে অন্য ইভিএম ঢুকিয়ে দেওয়া হতে পারে— এই রকম আশঙ্কা প্রকাশ করল দলগুলো। বিহার, উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা বা পঞ্জাবের কিছু ছবি বা ভিডিয়ো তুলে ধরা হল, যাতে ট্রাকে করে অনেক ইভিএম এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরানোর ছবি দেখা যাচ্ছে। বাংলার শাসক দল তৃণমূল-সহ বিভিন্ন বিজেপি বিরোধী দল কর্মীদের নির্দেশ দিল স্ট্রং রুমের সামনে পাহারায় বসতে।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন: গরমিল থাকলেই সমস্ত ভিভিপ্যাটের সঙ্গে মেলাতে হবে ইভিএম, নির্বাচন কমিশনে দাবি বিরোধীদের

ট্রাকে করে কিছু ইভিএম কোথাও নিয়ে যাওয়ার ছবি অভ্রান্ত ভাবে প্রমাণ করে দিল কারচুপি হচ্ছে, এমন কথা বলা যায় না। ইভিএম কারচুপির আশঙ্কা বিভিন্ন বিজেপি বিরোধী দলের তরফ থেকে একযোগে প্রকাশ করা শুরু হয়েছে বলেই ধরে নিতে হবে এ অভিযোগ সত্য, তেমনও নয়। যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে, তার আদৌ কোনও সারবত্তা রয়েছে কি না, আমাদের সত্যিই জানা নেই। কিন্তু সতর্ক থাকতে অসুবিধা তো নেই। অভিযোগ যখন উঠেছে, তখন চোখকান খোলা রাখাই উচিত। সে দায়িত্বটা নির্বাচন কমিশনেরই সবচেয়ে বেশি।

দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিরোধীদের অভিযোগের সত্যাসত্য নিয়ে তিনিও মন্তব্য করেননি। কিন্তু ভারতের সাধারণ নির্বাচন প্রক্রিয়ার মতো এক সুবিশাল গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার গায়ে যাতে বিন্দুমাত্র কালির দাগ কেউ লাগাতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকা উচিত নির্বাচন কমিশনের— প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এই রকম এক বার্তাই দিয়েছেন। বিবৃতি প্রকাশ করে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির মন্তব্য, ইভিএমের নিরাপত্তা বা সুরক্ষা নিশ্চিত করার দায় নির্বাচন কমিশনেরই।

অতএব নির্বাচন কমিশনকে কিন্তু অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতেই হবে। কমিশন যদি মনে করে যে ইভিএমের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বন্দোবস্ত পর্যাপ্ত এবং ইভিএম বদলের চেষ্টা সংক্রান্ত অভিযোগ আদ্যন্ত ভিত্তিহীন, তা হলে কমিশন ঠিক বলছে না, এমন কোনও সিদ্ধান্তে আমরা পৌঁছতে পারি না। হয়তো ইভিএমের নিরাপত্তা সত্যিই পর্যাপ্ত এবং হয়তো উদ্বিগ্ন হওয়ার সত্যিই কোনও কারণ নেই। কিন্তু সংশয় যখন তৈরি হয়েছে, তখন সেটার নিরসন ঘটানো জরুরি। ভারতের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া গোটা বিশ্বে বন্দিত। সেই প্রক্রিয়াকে প্রশ্নাতীত রাখার দায়ভার আমাদের নির্বাচন কমিশনের কাঁধেই সবচেয়ে বেশি। তাই কোনও অনিয়ম যে হচ্ছে না, সে বিষয়ে সকলকে আশ্বস্ত রাখার কাজটাও এ বার কমিশনকে করতে হবে। মনে রাখা দরকার, সামান্যতম কালিমাও কিন্তু গোটা প্রক্রিয়ার বৈধতাকে প্রশ্নের সামনে দাঁড় করাতে পারে।

Newsletter Lok Sabha Election 2019 EVM Malfunction EVM Congress TMC Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy