বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশের অনুষ্ঠান। ছবি: এপি।
বিজেপির সদ্যপ্রকাশিত ইস্তাহারে কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গ ঠিক কত বার আসিয়াছে? নিখুঁত হিসাব দিলে, এমপ্লয়মেন্ট শব্দটি আসিয়াছে বারো বার— তাহার মধ্যে দুইটি প্রতিশ্রুতি দুই বার থাকায় কার্যকর ভাবে ‘এমপ্লয়মেন্ট’-এর উল্লেখ দশটি প্রসঙ্গে— আর, ‘জব’ কথাটি আসিয়াছে তিন বার। আরও ভাঙিলে, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করিতে বিজেপি যে পরিকল্পনাগুলি করিতেছে, তাহার কয়েকটি এই রূপ: অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাইবার মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি; উত্তর-পূর্ব ভারতে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে সাহায্যের মাধ্যমে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি; শিল্পক্ষেত্রে মহিলাকর্মী নিয়োগে উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে (কী গোত্রের উৎসাহ, তাহার উল্লেখ নাই) কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ইত্যাদি। এবং, প্রতিশ্রুতি রহিয়াছে, মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা হইবে। কী ভাবে তাহা সম্ভব হইবে, ইস্তাহার সেই ব্যাখ্যা দেয় নাই। গত পাঁচ বৎসরের অভিজ্ঞতার কথা ভাবিলে আশঙ্কা হয়, হয়তো নোট বাতিলের ন্যায় আরও কোনও আত্মঘাতী পরিকল্পনা রহিয়াছে, যাহা ক্রমশ প্রকাশ্য। ইস্তাহার জুড়িয়া উগ্র (হিন্দু) জাতীয়তাবাদের দাপটে কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গ এমনই কোণঠাসা হইয়াছে যে বুঝিবার উপায় নাই ইহাই এখন ভারতের বৃহত্তম সঙ্কট। কর্মহীনতার হার প্রায় অর্ধশতকে কখনও এত বাড়ে নাই, সাধারণ মানুষের মনেও কর্মহীনতা লইয়া ক্ষোভ বহু দিন এত প্রকট হয় নাই। একাধিক সমীক্ষায় প্রকাশিত, বিজেপি যতই হিন্দুত্ববাদের জিগির তুলুক, যতই উগ্র জাতীয়তাবাদের হাওয়া বহাইতে চাউক, মানুষ কর্মসংস্থান লইয়াই সর্বাপেক্ষা উদ্বিগ্ন। তবু, নরেন্দ্র মোদীর চিত্রশোভিত প্রচ্ছদের ৪৫ পাতা ইস্তাহারে কর্মসংস্থানের জন্য বরাদ্দ মাত্র পনেরোটি উল্লেখ।
স্বভাবতই ২০১৪ সালের সহিত তুলনা চলিতেছে। সেই ইস্তাহারে কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গটি ছিল সর্বাগ্রে। গত দফার হুঙ্কার এই দফায় ফিসফিসানিতে পাল্টাইয়া গেল কেন, তাহার দুইটি কারণ। গত দফায় বিজেপির জবাবদিহির দায় ছিল না। শুধু প্রতিশ্রুতি বিলাইলেই যথেষ্ট হইত। ফলে, দেশ জুড়িয়া কর্মসংস্থানের প্লাবন বহাইবার আশ্বাস দিতে তাহাদের বাধে নাই। বৃহত্তর কারণটি রহিয়াছে বিজেপির অর্থনৈতিক দর্শনে। ২০১৪ সালের ইস্তাহারেও তাহা যেমনটি ছিল, এই বৎসরও অবিকল আছে। বিজেপি ‘ট্রিকল ডাউন’ দর্শনে বিশ্বাসী। অর্থাৎ, তাহাদের বিশ্বাস, কর্মসংস্থানের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করিতে হইবে না; লগ্নি আসিলে, অর্থনীতি চাঙ্গা থাকিলে কর্মসংস্থান এমনিই হইবে। গত দফায় ইস্তাহার জুড়িয়া ছিল অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনের প্রতিশ্রুতি। পরবর্তী পাঁচ বৎসর বিজেপির ব্যর্থতার সাক্ষ্য বহন করিতেছে। ফলে, এই দফায় কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতিতেও আর জোর নাই।
অর্থনীতির বৃদ্ধি ঘটিলেও যে কর্মসংস্থান না বাড়িতে পারে, এই কথাটি ট্রিকল ডাউন-বাদীরা স্বীকার করিবেন না। যদিও, কথাটি বুঝিবার জন্য বামপন্থী বা অন্য কোনও চরমবাদী অর্থনৈতিক যুক্তি-কাঠামোর প্রয়োজন নাই, নেহাত বাজারের যুক্তিতেই তাহা বোঝা সম্ভব। আপাতত সেই প্রসঙ্গ নহে। প্রশ্ন হইল, দেশ জুড়িয়া যখন কর্মসংস্থান লইয়া উদ্বেগ, কংগ্রেসের ইস্তাহার যেখানে শুরুই হইতেছে এই প্রসঙ্গ লইয়া, সেখানেও বিজেপি নূতন কথা ভাবিতে পারিল না কেন? কী ভাবা যাইত, তাহার কিছু উদাহরণ কংগ্রেসের ইস্তাহারে আছে— অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের সংজ্ঞা পাল্টাইয়া শ্রমিকের সংখ্যা অনুসারে শিল্পের গোত্র স্থির করা অথবা রেশন কার্ডের পোর্টেবিলিটি বা এক স্থানের কার্ড অপর স্থানে ব্যবহারের সুবিধা চালু করা ইত্যাদি। অর্থাৎ, বিভিন্ন দিক হইতে কর্মসংস্থানের সুবিধা করিয়া দেওয়া। বিজেপি কেন এই ভাবে, বা অন্য কোনও ভাবে, কর্মসংস্থানের প্রশ্নটির সম্মুখীন হইতে পারিল না, কেন ট্রিকল ডাউন দর্শনেই আটকাইয়া গেল? সম্ভবত, ভাবিবার অভ্যাস নাই বলিয়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy