Advertisement
০২ মে ২০২৪

লন্ডন ডায়েরি

জেমস গ্রাহাম নির্দেশিত এই ড্রামায় দেখানো হয়েছে কী করে ‘ভোট লিভ’ শিবির কামিংসকে এই প্রচারের মাথায় বসিয়ে দিল, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার চালিয়ে কী করে কামিংস ভোটারদের মন মজালেন।

শ্রাবণী বসু
শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৩৫
Share: Save:

টিভির পর্দা জুড়ে এখন শুধুই ব্রেক্সিট

ব্রেক্সিট এখন টিভি-ড্রামারও বিষয়। বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ অভিনীত দু’ঘণ্টার ড্রামা ‘ব্রেক্সিট: দি আনসিভিল ওয়ার’-এ চ্যানেল ফোর দর্শকদের ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছে ব্রেক্সিট-প্রচারপর্বের শুরুতে। এর আগে শার্লক হোমসের চরিত্রে অভিনয় করে বিখ্যাত কাম্বারব্যাচ এখানে ডমিনিক কামিংস, ‘ভোট লিভ’ প্রচারের মুখ ছিলেন যিনি। জেমস গ্রাহাম নির্দেশিত এই ড্রামায় দেখানো হয়েছে কী করে ‘ভোট লিভ’ শিবির কামিংসকে এই প্রচারের মাথায় বসিয়ে দিল, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার চালিয়ে কী করে কামিংস ভোটারদের মন মজালেন। পরিচালক রাজনীতিবিদদের রেখেছেন অপ্রধান চরিত্রে; তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের উপস্থিতি নামমাত্র, বরিস জনসন, মাইকেল গোভ প্রমুখের গুরুত্বও প্রান্তিক। কামিংস কী করে প্রচারকৌশল ঠিক করলেন, বিমুখ নাগরিকদের খুঁজে বার করে তাঁদের কাছে পৌঁছলেন, দেখানো হয়েছে তা। ডেভিড ক্যামেরন তাঁকে যতই ‘কেরিয়ার সাইকোপ্যাথ’ বলুন না কেন, ‘স্বঘোষিত উপদ্রব’ কামিংস হয়ে উঠেছিলেন আধুনিক রাজনীতির সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব।

নায়ক: ডমিনিক কামিংস-এর চরিত্রে বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ, সহ-অভিনেতাদের সঙ্গে

মজার কথা, অধিকাংশ সাধারণ মানুষই তাঁর নামও শোনেননি! ড্রামায় দেখানো হয়েছে গণভোটের আগের মাসগুলোয় দুই শিবিরের লড়াই। ‘থেকে যাই’ শিবিরে ছিলেন ক্যামেরন-ঘনিষ্ঠ ক্রেগ অলিভার। অন্যরা হলেন ‘অ্যাগ্রিগেট আইকিউ’ সংস্থার বির্তকিত প্রতিষ্ঠাতা জ়াক মাসিংহাম, ‘বেরিয়ে যাই’ শিবিরের রসদদার কোটিপতি অ্যারন ব্যাঙ্কস। ২৩ জুন ২০১৬ ব্রিটেনে গণভোট হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা-না থাকা নিয়ে। ব্রেক্সিট-এর পক্ষে ভোটদেনেওয়ালারা সেখানে এগিয়ে ছিলেন সামান্য ব্যবধানে।


কী করে এল

‘ব্রিটেন’ আর ‘এগজ়িট মিলিয়ে ‘ব্রেক্সিট’ শব্দটি প্রথম তৈরি ও ব্যবহার করেছিলেন পিটার উইল্ডিং, ‘ইউর‌্যাক্টিভ’ নামের ওয়েবসাইটের এক ব্লগে, ২০১২-র ১৫ মে। পিটার স্মৃতি হাতড়ে বলছিলেন, কী করে তিনি এই শব্দটা বানিয়ে, আবার চটজলদি ভুলেও গিয়েছিলেন। চার বছর পর, ২০১৬-তে এক দিন অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারি কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানান যে শব্দটা অভিধানে ঢুকতে চলেছে। পিটারের মতে, ওঁর মাথায় খুব সম্ভবত গ্রিক অর্থনৈতিক সঙ্কটের সূত্রে ‘গ্রেক্সিট’ শব্দটা ঘুরছিল। ওই ভাবেই মাথায় আসে ‘ব্রেক্সিট’ও। সে যা-ই হোক, গত দু’বছরে ব্রিটেনে সবচেয়ে ব্যবহৃত শব্দ এটাই।


জন্মকাহিনি

ব্রেক্সিট-সঙ্কটের প্রভাব সন্তানজন্মেও। লেবার পার্টির সাংসদ টিউলিপ সিদ্দিক তাঁর পূর্বনির্ধারিত সিজ়ারিয়ান অপারেশন এক দিনের জন্য পিছিয়ে দিলেন, যাতে ব্রেক্সিট বিলে ভোট দিতে পারেন। শেখ হাসিনার বোনঝি টিউলিপ ভোট দিতে এসেছিলেন হুইলচেয়ারে। জানালেন, তাঁর সন্তান এক দিন পরে জন্মালেও ক্ষতি নেই, যদি তাতে সে এমন এক বিশ্বে আসে, যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পর্কসূত্র দৃঢ়তর। কিন্তু এর পর প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে ভোটে হারলেন, বিরোধী লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন অনাস্থা প্রস্তাব আনলেন, আবারও ভোট দিতে হবে বলে টিউলিপের অপারেশন আরও এক দিন পিছোল। কী করে তার জন্মদিন পাল্টাল, শিশু বড় হয়ে শুনবে।


ঐতিহাসিক

ব্রিটেনে প্রথম ভারতীয় হাইকমিশনার কৃষ্ণ মেনন শুরু করেছিলেন এই ক্লাব, লন্ডনে প্রবাসী ভারতীয়দের মিলনকেন্দ্র হিসেবে। ১২ নভেম্বর ১৯৫১, শুরুর দিনে উপস্থিত ছিলেন জওহরলাল নেহরু, এডুইনা মাউন্টব্যাটেনও। ক্রমে ‘ইন্ডিয়া ক্লাব’ হয়ে ওঠে ‘ইন্ডিয়ান জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন’ ও ব্রিটেনে সদ্য-আসা ভারতীয় ছাত্রদের দ্বিতীয় ঠিকানা। ‘স্টুডেন্ট রেট’-এ এখানে পাওয়া যেত দোসা, পরোটা; উপরতলার হোটেলে মিলত রাতে ঘুমোনোর জন্য বিছানাও। আশির দশকের শেষ অবধি ইন্ডিয়া ক্লাব বার-এ কর্মরত ডরিস হয়ে উঠেছিলেন প্রবাদপ্রতিম। তবে এই ক্লাবই কিন্তু ২০১৭ সালে বন্ধ হতে বসেছিল।

অভিজাত: ইন্ডিয়া ক্লাব-এর অন্দরে

কথা উঠেছিল, এই জায়গায় তৈরি হবে বিলাসবহুল হোটেল। সেই নিয়ে হইচই, পরে বিখ্যাত লেখক, শিক্ষাবিদ, ইতিহাসবিদ-সহ প্রায় ২০০০০ মানুষের সই-করা আবেদন বাঁচিয়ে দেয় ক্লাবকে। ‘হেরিটেজ’ তালিকাভুক্ত এই বাড়িতে পুরনো ফটোগ্রাফের এক প্রদর্শনীতে ন্যাশনাল ট্রাস্ট তুলে ধরেছে ইন্ডিয়া ক্লাবের ইতিহাস। চলবে ১ মার্চ পর্যন্ত। এখনও ক্লাবের ফরমিকা টেবিলে, কৃষ্ণ মেনন ও গাঁধীর ছবির তলায় বসে দশ পাউন্ডের কম খরচে পেট ভরে খেতে পারবেন!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE