Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
লন্ডন ডায়েরি

লন্ডন ডায়েরি

আয়ারা দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রায় শ্বেতাঙ্গ শিশুদের খেয়াল রাখতেন। বহু আয়াই সন্তানস্নেহে মানুষ করতেন এই শিশুদের।

শ্রাবণী বসু
শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

অট্টালিকায় একশো বছর আটক ছিলেন যাঁরা

ছোটদের প্রিয় লেখিকা, বাঙালি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সীতা ব্রহ্মচারীর নতুন রহস্যকাহিনি ‘হোয়েন সিক্রেটস সেট সেল’। পটভূমি পূর্ব লন্ডনের ঐতিহাসিক ‘আয়া’স হোম’। ভারত থেকে আয়াদের নিয়ে ইংল্যান্ডে ফিরত ব্রিটিশ পরিবারগুলি। আয়ারা দীর্ঘ সমুদ্রযাত্রায় শ্বেতাঙ্গ শিশুদের খেয়াল রাখতেন। বহু আয়াই সন্তানস্নেহে মানুষ করতেন এই শিশুদের। কিন্তু ইংল্যান্ডে চাকরিটি খোয়ালেই নিঃস্ব তাঁরা, দেশে ফেরার রাহাখরচও জুটত না। তাঁদের আশ্রয় দিতেই ১৮৯১-এ ‘আয়া’স হোম’ স্থাপিত হয়। আবাসিকের সংখ্যা বাড়লে, হ্যাকনি-র বিশাল বাড়িতে উঠে আসে হোমটি। আয়ারা এখানে ব্রিটিশ পরিবারে চাকরির আশায় দিন কাটাতেন। অপেক্ষায় জীবনটাই যে ফুরিয়ে যেত কত জনের!

সীতার গল্প আধুনিক ব্রিটেনের। দুই কন্যা ইমতিয়াজ় ও ঊষাকে একটি ব্রিটিশ পরিবার দত্তক নিয়েছে। তাঁরা যে বাড়িতে থাকেন, সেটাই পুরনো দিনের ‘আয়া’স হোম’। আয়াদের আত্মারা মেয়ে দু’টিকে অতীতের গল্প শোনায়, তাদের মুক্তির ব্যবস্থা করতে বলে। ঊষার বাঙালি ঠাকুমার আত্মার সাহায্যে মেয়ে দু’টি আটক আত্মাদের উদ্ধার করে।

সীতার মা ফ্রিডা ইংরেজ, ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের নার্স ছিলেন। বাবা ছিলেন বাঙালি, চিকিৎসক। সীতা বইটি উৎসর্গ করেছেন নিজের মা-বাবাকে। এবং, ব্রিটেনের এনএইচএস কর্মীদের, সঙ্গে গোটা দুনিয়ার স্বাস্থ্য ও সমাজকর্মীদেরও।

ঐতিহাসিক: নতুন বই হাতে সীতা ব্রহ্মচারী (বাঁ দিকে), ১৯২০’র দশকে ‘আয়া’স

আইসক্রিম প্রীতি

হোম সেক্রেটারি প্রীতি পটেল বলেছিলেন, যে শরণার্থীরা ডিঙিতে ইংলিশ চ্যানেল পেরোতে চাইছেন, নৌবাহিনী পাঠিয়ে তাঁদের দেশে ফেরানো উচিত। কারণ তাঁরা বেআইনি অনুপ্রবেশকারী। তখন বেন অ্যান্ড জেরিজ় আইসক্রিম মন্ত্রীকে ট্যাগ করে টুইটে লেখে, অত্যাচারের কারণে মানুষ পালান। আসল সঙ্কট অমানবিকতা। মন্ত্রীকে ও অন্যদের ‘মানবিকতা’ দেখাতে বলে তারা। লেখে, ‘মানুষ কখনও অবৈধ হয় না।’ পটেলের টিম সংস্থাটিকে ‘বেশি দামের অস্বাস্থ্যকর খাবার’ বিক্রেতা বলে দাগায়। বাগ্‌যুদ্ধ দেখে এক নেট-নাগরিকের অভিযোগ, ‘অতিমারি, মন্দার সময়ে টোরি-র মন্ত্রীরা আইসক্রিম নিয়ে চেঁচাচ্ছেন!’ বেন অ্যান্ড জেরিজ়-এর মোটো: ‘শান্তি, ভালবাসা ও আইসক্রিম’!

বিতর্ক: দ্য ব্রিজ অন দ্য রিভার কোয়াই ছবির একটি দৃশ্য

ঋষিতে খুশি

অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনক অগস্টের প্রতি সোম থেকে বুধবার রেস্তরাঁয় ৫০% ছাড় দিচ্ছেন। লক্ষ্য, রেস্তরাঁ ব্যবসাকে চাঙ্গা করা। ‘ইট আউট টু হেল্প আউট’-এর এই তিন দিনে রেস্তরাঁর বিক্রি হচ্ছে তিন গুণ। তবে, বাকি দিনগুলি নাকি খাঁ খাঁ। এ নিয়ে অবশ্য কারও অভিযোগ নেই।

আষাঢ়ে গপ্পো?

‘দূর প্রাচ্যের যুদ্ধ’ নিয়ে ১৯৫৭-এ তৈরি হয়েছিল জনপ্রিয় সিনেমা, দ্য ব্রিজ অন দ্য রিভার কোয়াই। মিত্রশক্তির দেশবাসী যুদ্ধবন্দিদের দ্বারা জাপানিদের জন্য সেতু তৈরি নিয়ে সিনেমা। সম্প্রতি জানা গিয়েছে, যুদ্ধ দফতরের দাবি ছিল, ছবিতে সত্যের অপলাপ দেখে ব্রিটিশ দর্শক ক্ষুব্ধ হতে পারেন। প্রায় ৬০,০০০ যুদ্ধবন্দি তাই-বর্মা রেলওয়েজ়ে কাজ করেছিলেন। সিনিয়র ব্রিটিশ অফিসার ফিলিপ টুসি সেতুর কাজ ভেস্তে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্মে দেখা যায়, তাঁর ছায়ায় নির্মিত চরিত্রটি চাইছেন, ব্রিটিশরা প্রকল্পটির নেতৃত্ব দিয়ে সেরা সেতু প্রস্তুত করুক, যাতে তাঁদের কারিগরির জয়জয়কার হয়। ছবি দেখে যুদ্ধ দফতরের মনে হয়েছিল, ব্রিটিশ অফিসাররা যেন জাপানিদের সঙ্গে আঁতাঁত করছে! টুসি বলেছিলেন, গল্পটা দারুণ। তবে আষাঢ়ে গপ্পো। বাস্তবের সেতুটি নির্মাণে যুক্ত যুদ্ধবন্দিরাও প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।

সমাপ্তি স্মরণে

জার্মানির আত্মসমর্পণের পরেও চলেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। বর্মার জঙ্গলে, কোহিমার পাহাড়ে, ইম্ফলে। এই ‘দূর প্রাচ্যের যুদ্ধ’-কে বিস্মৃত যুদ্ধ বলা হয়। এই সপ্তাহান্তে উদ্‌যাপিত হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির ৭৫তম বর্ষপূর্তি, ‘ভি-জে ডে’ বা ‘ভিক্টরি ওভার জাপান ডে’। মানুষ সেই দুর্গম এলাকার যুদ্ধে সৈনিকদের আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধা জানালেন। এই সেনার বড় অংশ ছিলেন ভারতীয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE