Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

তিরস্কারের দাম

বৃহস্পতিবার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে দলীয় সভায় তিনি সেই ক্ষোভ ব্যক্ত করিয়াছেন। আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ-তালিকায় তিনি আবারও বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিলেন।

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

কলেজে টাকার বিনিময়ে ভর্তির সংবাদে রাজ্যের শাসক দলের নাম জড়াইয়াছে শুনিয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষুব্ধ। বৃহস্পতিবার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে দলীয় সভায় তিনি সেই ক্ষোভ ব্যক্ত করিয়াছেন। আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ-তালিকায় তিনি আবারও বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিলেন। এই রাজ্যের শিক্ষা-রাজনীতি যে কোন পর্যায়ে উঠিয়াছে, তাহা কলেজে ছাত্র ভর্তির মরসুমটিতেই সর্বাপেক্ষা বেশি টের পাওয়া যায়। ক্ষমতার দৃপ্ত দুর্নীতির কারণে ছাত্রছাত্রীদের চরম দুর্গতি, এবং সেই দুর্গতির অবকাশে দলের ছাত্র সংগঠন তাহাদের বাৎসরিক ভাণ্ডারপূরণ করিতেছে। ছোট নেতা ভবিষ্যতের বড় নেতৃত্ব হইবার পথটি পরিষ্কার করিতেছেন। টাকার টোপের বিষয়টি রাজ্যব্যাপী এতখানি ‘প্রাতিষ্ঠানিক’ ও নিয়মিত হইয়া উঠিয়াছে যে, সাধারণ নাগরিক এই ঘুঘুর বাসা ভাঙিবার সাহস করিতেই পারেন না। ব্যবস্থার প্রতিবাদ না করিয়া মানিয়া লওয়াই তাঁহাদের কাছে একমাত্র শান্তির পথ। দলীয় নেতারা প্রশ্নটি কানেই তুলিবেন না। এই অমানিশায় মুখ্যমন্ত্রীর ভর্ৎসনাই বোধ করি একমাত্র ভরসা।

কিংবা, বলা ভাল, ভরসার সূচনা। ভুলিয়া যাওয়া যাইবে না, গত বৎসর ঠিক এই সময়ে ঠিক এই প্রেক্ষিতটি লইয়া বিস্তর হইচই শোনা গিয়াছিল। তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় দলের বৈঠকে কথাটি তুলিয়াছিলেন, একই ভাবে ছাত্র ইউনিয়নকে সতর্ক করিয়াছিলেন। কাজ হয় নাই। কলেজের দরজায় যে সদ্য বিদ্যালয়-পাশ মুখগুলি ভিড় করিতেছে, তাহাদের অসহায়তা ও অনভিজ্ঞতার সুযোগ লইতে এক বিন্দু দ্বিধা করেন নাই ইউনিয়নের নেতারা। সংশয় হয়, দলের উচ্চ নেতৃত্বের অনবধানে মধ্য নেতৃত্ব এই দুর্নীতিতে বিস্তর প্রসন্ন, এবং তাঁহাদের প্রসাদধন্য নিম্ন নেতৃত্ব অর্থাৎ কলেজের রাজনৈতিক ‘দাদা’রা উচ্চ নেতার নির্দেশ অমান্য করিতে দ্বিধা করেন না। এ বারও ছাত্র ভর্তির উদ্যোগ-মরসুমেই আধিপত্যের বখরা লইয়া কলেজে মারদাঙ্গা শুরু হইয়া গিয়াছে। এই ধরনের অশান্তি অবিলম্বে কঠোর হস্তে বন্ধ করিতে না পারিলে এবং দুষ্কৃতীদের কঠোর শাস্তি না দিতে পারিলে মুখ্যমন্ত্রীর ভর্ৎসনা কথার কথা বলিয়াই প্রমাণিত হইবে।

বস্তুত, ছাত্র ভর্তি লইয়া দুরাচার বন্ধ করিবার পথে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপটি কী, তাহা সর্বজনবিদিত। কেন্দ্রীয় অর্থাৎ সামগ্রিক স্তরে অনলাইন ভর্তির আয়োজন করিলেই দুর্নীতির মূলে আঘাত করা সম্ভব। দেশের অন্য বহু রাজ্যেই এই ব্যবস্থা চালু হইয়াছে। পশ্চিমবঙ্গেও, তৃণমূল সরকারের প্রথম পর্বে, তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু অনলাইন ভর্তি ব্যবস্থা চালু করিতে গিয়াছিলেন। পারেন নাই। দুর্জনে বলিয়া থাকে, এই ‘অপরাধ’-এই তাঁহাকে শিক্ষা দফতর ছাড়িতেও হইয়াছিল। অতঃপর কলেজগুলিতে পুরাতন ঐতিহ্যের মোড়কে দলতন্ত্রের বেসাতি চলিতেছে। এবং লক্ষণীয়, বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী— চক্ষুলজ্জার বালাইটুকুও না রাখিয়া— জানাইয়া দিয়াছেন, কলেজে ভর্তিতে কেন্দ্রীয় অনলাইন পদ্ধতি চালু করিবার কথা তাঁহারা ভাবিতেছেন না। মুখ্যমন্ত্রীর সভায় কথামৃত বিতরণে বা ছাত্র ইউনিয়নকে বিধিসম্মত সতর্কীকরণে এই বিষম অনাচার ও পরিব্যাপ্ত দুর্নীতি দূর হইবে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্মান ও মান রক্ষার জন্য প্রয়োজন প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা রক্ষার ব্যবস্থা। দুর্নীতির অভিযোগ পাইলে তাহার দ্রুত তদন্ত এবং তদন্ত শেষে শাস্তিগ্রহণের প্রশাসনিক তৎপরতা। এই সব কয়টি পদক্ষেপ করিলে তবেই ‘ভরসা’ ফিরিতে পারে। তাহা না হইলে, পার্থ চট্টোপাধ্যায় দূরস্থান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথারও কোনও বিশ্বাসযোগ্যতা থাকিবে না। বিশ্বাসে বস্তু মিলিতে পারে, বিশ্বাস বস্তুটি কিন্তু সহজে মিলিবার নহে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee State Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE