Advertisement
E-Paper

ঠিক উত্তরে টিক

এমসিকিউ-এর কল্যাণে ছাত্রছাত্রীর মেধার সঙ্গেও আপস করা হইলে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে প্রেসিডেন্সির কোনও পার্থক্য থাকিবে না।

শেষ আপডেট: ২৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:৫৭

অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের তাড়নায় মান পড়িতেছে প্রেসিডেন্সির। মত প্রেসিডেন্সির মেন্টর গ্রুপের। অবনমনের এহেন সমস্যাটি কলা বিভাগে অধিক প্রকট। অবনমন পঠনপাঠনের নহে, ছাত্রছাত্রীর মানের। পূর্বের ন্যায় ‘সেরার সেরা’ ছাত্রছাত্রী হইতে বঞ্চিত হইতেছে শতাব্দীপ্রাচীন প্রতিষ্ঠানটি। সমাধান হিসেবে মেন্টর গ্রুপের প্রস্তাব, ‘সর্বোচ্চ মানের’ প্রবেশিকা পরীক্ষার। প্রসঙ্গত, গত বৎসর হইতে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা বিভাগের প্রবেশিকা পরীক্ষায় প্রশ্নের ধাঁচটি বিষয়ভিত্তিকের পরিবর্তে এমসিকিউ (ঠিক উত্তরটি বাছিয়া লও)-এ পরিবর্তিত হইয়াছিল। কিন্তু শুধুমাত্র ঠিক উত্তরটি বাছিয়া লওয়ার মধ্য দিয়া ইতিহাস বা ইংরেজির মতো বিষয়ে ভাল ছাত্রছাত্রী নির্বাচন সম্ভব কি না, তাহা লইয়া ঘোরতর সংশয় প্রকাশ করিয়াছেন চিফ মেন্টর সুগত বসু স্বয়ং। তিনি বলিয়াছেন, কলা বিভাগের ছাত্রছাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে দেখা দরকার রচনাধর্মী প্রশ্নের উত্তর লিখিবার দক্ষতা তাহার আছে কি না। কিন্তু নূতন পদ্ধতিতে সেই দক্ষতা যাচাইয়ের সুযোগ প্রায় নাই। তাহা হইলে, প্রবেশিকা পরীক্ষায় এমন কুইজধর্মী প্রশ্নপত্র বানাইবার কারণ কী? যুক্তি ছিল, এমসিকিউ ধাঁচের প্রশ্নপত্রে পরীক্ষার ফল দ্রুত প্রকাশের সুবিধা। যুক্তিটি ফেলিবার নহে। কারণ, বিপুলসংখ্যক পরীক্ষার্থীর উত্তরপত্র যথাযথ ভাবে দেখিয়া সময়ে ফলপ্রকাশের মতো উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাব প্রতিষ্ঠানটিতে স্পষ্ট। কিন্তু এই অজুহাতে তাহার সার্বিক মানের সঙ্গে আপস করা চলে না। বস্তুত, কলেজ হইতে ‘বিশ্ববিদ্যালয়’-এ উত্তরণ ঘটিলেও প্রেসিডেন্সি-র সেই গৌরবগাথা আজ অনেকাংশেই ম্লান। বিজ্ঞান বিভাগে প্রায়শই আসন খালি থাকিবার সংবাদ মেলে। এখন, এমসিকিউ-এর কল্যাণে ছাত্রছাত্রীর মেধার সঙ্গেও আপস করা হইলে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে প্রেসিডেন্সির কোনও পার্থক্য থাকিবে না।

তবে, মেধার এহেন অবনমন শুধুমাত্র এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা ভাবিলে ভুল হইবে। প্রকৃত অবনমনটি ঘটিয়াছে শিক্ষা ক্ষেত্রে। প্রেসিডেন্সি সেই সার্বিক অবক্ষয়ের চিত্রে একটি আঁচড়মাত্র। যে এমসিকিউ ধাঁচের প্রশ্নপত্রকে অপরাধী চিহ্নিত করিয়াছেন মেন্টর গ্রুপ, সেই প্রশ্নপত্রই এখন সর্বত্র গ্রহণীয়। পূর্বে এই ধরনের প্রশ্ন শুধুমাত্র প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় দেখা যাইত। কিন্তু এখন শিশু বয়স হইতেই পড়ুয়ারা ইহাতে ক্রমশ অভ্যস্ত হইয়া উঠিতেছে। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষাতেও প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ প্রশ্নেরই অতি সংক্ষিপ্ত, অথবা সংক্ষিপ্ত উত্তর করিতে হয়। প্রশ্নের নম্বর কিছু বেশি হইলেও হাত খুলিয়া লিখিবার উপায় নাই। শব্দসংখ্যা সীমিত। সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্নের স্বপক্ষে যুক্তি, ইহাতে পাঠ্যপুস্তকটি আদ্যোপান্ত পড়িবার অভ্যাস জন্মায়। তাহা হয়তো জন্মায়। কিন্তু শিক্ষা তো শুধু বই পড়িয়া তথ্যটুকু আহরণে আবদ্ধ থাকে না। পুস্তকলব্ধ জ্ঞানকে যথাযথ রূপে আত্মস্থ করিবার নামও শিক্ষা। সেই বিষয়টি আদৌ হইতেছে কি না, তাহা এক-দু’কথায় জানিবার উপায় থাকে না। সুতরাং, নামজাদা প্রতিষ্ঠানেও মুড়ি ও মিছরি উভয়েই শুধুমাত্র তথ্যটুকু জানিয়া, এমসিকিউ উতরাইয়া অবাধ প্রবেশাধিকার পাইতেছে। ভাবিবার, বিশ্লেষণ করিবার ক্ষেত্রে দু’জনের পার্থক্য ধরা পড়িতেছে না। অবশ্য নম্বরসর্বস্ব পরীক্ষাব্যবস্থায় তাহার প্রয়োজনই বা কী!

examination subsidence MCQ Presidency University
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy