Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

ঢাকায় মমতাকে সঙ্গে নিয়ে নয়া প্রত্যাশার জন্ম দিলেন মোদী

এই সফর আসলে বাংলাদেশ নিয়ে কাজের শুরু। লিখছেন জয়ন্ত ঘোষালগত বছরের সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। মোদী সেই বৈঠকে হাসিনাকে বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু দেশ গঠন করেছিলেন, আর আপনি সেই দেশ বাঁচিয়েছেন। বাংলাদেশ এক ছোট সার্বভৌম রাষ্ট্র। কিন্তু ছোট রাষ্ট্র হলেও এই রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করা ভারতের জন্য বিশেষ জরুরি। অটলবিহারী বাজপেয়ী যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখনও নিউ ইয়র্ক শহরে রাষ্ট্রপুঞ্জের অধিবেশনে যোগ দিতে এলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতেন। ভারত এই সম্পর্ককে আওয়ামি লিগ এবং বিজেপি অথবা আওয়ামি লিগ এবং কংগ্রেসের সম্পর্ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় না।

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৫ ০০:০১
Share: Save:

গত বছরের সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর একটি দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। মোদী সেই বৈঠকে হাসিনাকে বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু দেশ গঠন করেছিলেন, আর আপনি সেই দেশ বাঁচিয়েছেন।

বাংলাদেশ এক ছোট সার্বভৌম রাষ্ট্র। কিন্তু ছোট রাষ্ট্র হলেও এই রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক রক্ষা করা ভারতের জন্য বিশেষ জরুরি। অটলবিহারী বাজপেয়ী যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখনও নিউ ইয়র্ক শহরে রাষ্ট্রপুঞ্জের অধিবেশনে যোগ দিতে এলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতেন। ভারত এই সম্পর্ককে আওয়ামি লিগ এবং বিজেপি অথবা আওয়ামি লিগ এবং কংগ্রেসের সম্পর্ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় না।

মনমোহন সিংহ যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন প্রণব মুখোপাধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। প্রণববাবুর সঙ্গে শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সম্পর্কও ছিল অত্যন্ত মধুর। শেখ হাসিনার পুত্র জয়কে প্রণববাবুর বাড়িতে এসে থাকতেও আমি দেখেছি। কিন্তু ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ককে যাতে কংগ্রেস-আওয়ামি লিগ সম্পর্ক হিসেবে দেখা না হয়, সে কথা বার বার কংগ্রেস নেতারা বলতেন। জয়রাম রমেশ তো এই ব্যাপারে একটি বিবৃতিও দিয়েছিলেন।

এ বারও নরেন্দ্র মোদী কিন্তু শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করার পাশাপাশি বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করলেন। প্রথমে যে কর্মসূচি সাংবাদিকদের দেওয়া হয়েছিল, তাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে খালেদার বৈঠকের উল্লেখ ছিল না। ছিল বিএনপি-র বিরোধী দলনেতার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের কথা। কিন্তু মোদীর পক্ষ থেকেই খালেদার সঙ্গে বৈঠক করার ইচ্ছা প্রকাশ করা হয়। এবং খালেদাও রাজি হন।

মোদীর সফরের আগে বিএনপি ঘোষণা করেছিল, সেই সময় তারা বিক্ষোভ দেখাবে। এ ব্যাপারে বিএনপি-কে গোলমাল পাকানোর জন্য ইন্ধন দিচ্ছিল জামাত। কিন্তু খালেদাও জামাতদের চাপের কাছে নতিস্বীকার করেননি। খালেদার দল বলেছিল, তিস্তা চুক্তি কেন হচ্ছে না, এই দাবিতে তারা মোদীর সামনে বিক্ষোভ দেখাবে। কিন্তু মোদী যাওয়ার পর আমরা দেখলাম, গোটা শহরে কোথাও মোদী-বিরোধী বিক্ষোভ দেখাল না বিএনপি। উল্টে মোদীর সঙ্গে বৈঠকে বসতে খালেদা রাজি হয়ে গেলেন।

প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ের এক জন অফিসার আমাকে বলছিলেন, খালেদাকে ঠান্ডা করে রাখতে পারলে আসলে কিন্তু শেখ হাসিনারও লাভ। দেশের স্বার্থরক্ষার প্রশ্নে অনেক ব্যাপারেই প্রধানমন্ত্রী যেমন বিরোধী দল কংগ্রেসকে সঙ্গে রাখতে চান, ঠিক সেই ভাবেই বাংলাদেশে শেখ হাসিনাও খালেদাকে সঙ্গে রাখতে চান জাতীয় বিষয়ে।

অতীতে প্রণব মুখোপাধ্যায়, বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ, সলমন খুরশিদ, এমনকী প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গেও একাধিক বার ঢাকা গিয়েছি। যখনই গিয়েছি, তখনই দেখেছি ভারত বিরোধী নেত্রীর সঙ্গেও তাঁরা সব সময় বৈঠক করেছেন। এ বারের বাংলাদেশ সফরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যে ভাবে এক প্রত্যাশা তৈরি করলেন, তা প্রশংসনীয়। যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মনমোহন সিংহ বাংলাদেশের ব্যাপারে কাজে লাগাতে সমর্থ হননি, সে কাজে কিন্তু বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী সফল হলেন।

ব্যক্তিগত সম্পর্ক আন্তর্জাতিক কূটনীতির ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কাঠমান্ডুতে সার্ক সম্মেলনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে অটলবিহারী বাজপেয়ীর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছিল। খালেদার তখন খুব হাঁটুর ব্যথা। ক’দিন আগেই বাজপেয়ীর হাঁটু বদলের অপারেশন হয়েছিল। শল্যচিকিৎসক ছিলেন নিউ ইয়র্কের ডঃ রানওয়াত। খালেদাকে বাজপেয়ী রানওয়াতের কথা বলেন এবং তাঁকে পরামর্শ দেন যাতে খালেদা তাঁকে দেখিয়ে হাঁটুর অপারেশন করিয়ে নেন। এই ব্যক্তিগত আলাপচারিতা একটি অন্য রাষ্ট্রনায়কের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে তোলা— এগুলি সবসময়েই বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

নরেন্দ্র মোদী কয়েক দিন আগেই আমাকে বলছিলেন, ‘‘পৃথিবীটা যতই বড় লাগুক, ২০-২৫ জন রাষ্ট্রনায়ক নিরন্তর নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করেন। রাষ্ট্রনায়কদের একটি ক্লাব তৈরি হয়ে গিয়েছে।’’ বস্তুত, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও এই ক্লাবের সদস্য।

বাংলাদেশ সফরে প্রধানমন্ত্রী খুশি। কিন্তু তিনি তাঁর অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছেন, এই সফরে বাংলাদেশ নিয়ে কাজ শেষ নয়, আসলে শুরু।

ছবি: পিটিআই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE