Advertisement
E-Paper

‘মাতৃসুলভ’ আচরণের পরেও উঠছে গুরুতর প্রশ্ন

বন্যেরা যেমন নাকি বনে, অথবা শিশুরা মাতৃক্রোড়ে, তেমনই নাকি ভারতীয় নারীরা সুন্দর সমাজের স্থির করা নির্দিষ্ট মাপকাঠির পোশাকেই। অন্যথায় অসুন্দর তথা কুৎসিত তথা অশ্লীল অতএব ধর্ষণের যোগ্য।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:০৩
মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় বুঝতে পারেননি যে তিনি অন্যায় করেছেন।  —ফাইল চিত্র।

মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় বুঝতে পারেননি যে তিনি অন্যায় করেছেন। —ফাইল চিত্র।

মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় নাকি ‘মায়ের মতো’ পরামর্শ দিলেন। দিলেন অযাচিত ভাবেই। দিলেন এক অনুষ্ঠানে গিয়ে তার সঞ্চালিকাকে। বললেন, তোমার এই রকম প্যান্ট পরা উচিত হয়নি। উচিত ছিল শাড়ি পরা। মুশকিলটা হল, এত কিছু বলার পরেও এবং খুব সামান্য শোরগোল হওয়ার পরেও মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় বুঝতে পারেননি যে তিনি অন্যায় করেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি তো পরামর্শ দিয়েছেন মাত্র। তা-ও আবার মায়ের মতো। অর্থাৎ, এর পরেও প্রশ্ন উঠতে পারে!

হ্যাঁ, পারে। তবে তার আগে বলতেই হয়, আমরা সমাজও ঈষৎ একদেশদর্শী। কল্পনা করুন, অথবা সে কষ্টই বা করবেন কেন, মনে করে দেখুন, কত কত ক্ষেত্রে এ দেশের বিভিন্ন পুরুষ দিকপাল, সে রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই হোক বা সামাজিক, মহিলার পোশাক নিয়ে কতই না ‘অভিভাবকসুলভ’ মন্তব্য করেছেন। কখনও বলেছেন, মেয়েদের এই পোশাক সাজে না, কখনও বা নিদান দিয়েছেন, ধর্ষণ কমাতে গেলে নারীর পোশাকের মাপকে দীর্ঘতর হতে হবে। বন্যেরা যেমন নাকি বনে, অথবা শিশুরা মাতৃক্রোড়ে, তেমনই নাকি ভারতীয় নারীরা সুন্দর সমাজের স্থির করা নির্দিষ্ট মাপকাঠির পোশাকেই। অন্যথায় অসুন্দর তথা কুৎসিত তথা অশ্লীল অতএব ধর্ষণের যোগ্য। এই সব কথা যখন তাঁরা বলেছেন, সমাজের একটা ছোট অংশও অন্তত গর্জে উঠেছে, বলেছে, এটা অন্যায়। মৌসুমীদেবী তাই সেই সম্ভাব্য গর্জনের প্রতিরোধে ঢাল তৈরি করলেন, যাবতীয় সংশয়নিধনকারী মাতৃত্বের ঢাল। সঞ্চালিকাকে নাকি তিনি মায়ের স্নেহেই প্যান্ট ছেড়ে অন্য পোশাকের পরামর্শ দিয়েছিলেন।

ঢাল যেহেতু মাতৃত্বের তাই প্রশ্ন উঠবে কম, অতএব আমাদেরই প্রশ্নটা তুলতে হল। মাতৃস্নেহ কেন শুধু পোশাককে কেন্দ্র করেই বর্ষণ হল, কেন ওই সঞ্চালিকাকে ঘিরে আর পাঁচটা, ‘মাতৃসুলভ’ প্রশ্ন এল না মৌসুমীদেবীর? কেন জিজ্ঞাসা করলেন না, সুখ-দুঃখের আরও নানা কথা, অথবা তাঁর ‘মাতৃজনোচিত’ পরামর্শ প্যান্ট ব্যতিরেকে ভিন্ন পোশাক পরিহিত অন্য মহিলাদের দিকে ধাবিত হল না কেন? সে প্রশ্নও তুলব আমরা। মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়, আপনার জানা দরকার, আপনারই মাতৃভাষার এক কবি বহু বছর আগে নারীর আপন ভাগ্য জয় করবার অধিকারের প্রসঙ্গে লিখে গিয়েছিলেন। তার পর তো অনেকগুলো বছর কেটে গিয়েছে, গঙ্গা দিয়েও জল গড়িয়েছে অনেক, আরব সাগরের জলেরও লবণাক্ততা কিছু কমেনি। কিন্তু এখনও নারীকে তাঁর অধিকার জয়ের প্রশ্নে দুস্তর বাধা পেতে হচ্ছে। পোশাক তো তার ক্ষুদ্র একটা অঙ্গ মাত্র। এত কথা লেখার কারণ ওই একটাই, পোশাক একটা প্রতীক মাত্র। আসলে সংস্কারের গণ্ডির নামে নিরবচ্ছিন্ন নিরন্তর এক প্রক্রিয়া চলছে সারা ক্ষণ।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন: পোশাক নিয়ে মন্তব্যে বিতর্কে জড়ালেন বিজেপিতে যোগ দেওয়া অভিনেত্রী মৌসুমী

মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় এই সামগ্রিক তন্ত্রেরই জাত এক মানুষ। অতএব তাঁকে বুঝতে হবে, সবটাই আসলে ‘মায়ের মতো’ নয়। হলে ভিন্নতারও কিছু ছবি হয়তো দেখতাম।

Newsletter Moushumi Chatterjee Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Celebrities
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy