Advertisement
E-Paper

তাঁহার নাম

নোট বাতিলই হউক আর জিএসটি, ঝাঁকানির নিট ফল, বৃদ্ধির গতিভঙ্গ। তবুও, অর্থনীতির অভ্যন্তরীণ শক্তির জোরেই এই বৎসর এক ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার আট শতাংশের ঊর্ধ্বে পৌঁছাইয়াছিল।

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:২৯

অচ্ছে দিন’ যে আসিবে না, তাহাই কি ২০১৮ সালের প্রধানতম উপলব্ধি? না। ঘটনা হইল, ‘অচ্ছে দিন’ সত্যই আসিত, কিন্তু শাসকরা সর্বশক্তিতে তাহাতে বাগড়া দিলেন। আসিত যে, তাহার প্রমাণ এই বৎসর প্রকাশিত দুইটি জিডিপি ব্যাক সিরিজ়ের পরিসংখ্যানে রহিয়াছে। এই কথা প্রশ্নাতীত যে ইউপিএ সরকারের উত্তরাধিকার হিসাবে নরেন্দ্র মোদী একটি শক্তিশালী অর্থনীতি পাইয়াছিলেন। মোদীরা সেই অর্থনীতির ঘাড় ধরিয়া ঝাঁকাইয়া দিয়াছেন। নোট বাতিলই হউক আর জিএসটি, ঝাঁকানির নিট ফল, বৃদ্ধির গতিভঙ্গ। তবুও, অর্থনীতির অভ্যন্তরীণ শক্তির জোরেই এই বৎসর এক ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার আট শতাংশের ঊর্ধ্বে পৌঁছাইয়াছিল। গড়ে সেই হার সাত শতাংশের ধারেকাছেই থাকিবে। মনমোহন সিংহের হিসাবটিকে যদি সত্য বলিয়া ধরা যায়, অর্থাৎ নোট বাতিলের কল্যাণে ভারতে আর্থিক বৃদ্ধির হার দুই শতাংশ-বিন্দু কমিয়াছে, তবে ঝাঁকানিটি না দিলে বৃদ্ধির হার কোথায় দাঁড়াইত, কর্তারা ভাবিয়া দেখিতে পারেন। তাহাই তো ‘অচ্ছে দিন’-এর সূচক হইতে পারিত। নরেন্দ্র মোদীরা হইতে দিলেন না। অবশ্য, শুধু এই দুইটি আত্মঘাতই নহে। একটি গোটা বৎসর চলিয়া গেল, আর্থিক সংস্কারের কোনও সিদ্ধান্ত হইল না। সরকার আড়ে-বহরে তিলমাত্র কমিল না। জিএসটি-র হার কমাইবার কথা ঘোষণা হইল, কিন্তু তাহার জটিলতা যথাপূর্বং থাকিল। যাহা সরকারের নিয়ন্ত্রণের অতীত ছিল, সেখানেও সুসংবাদ নাই। ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম আকাশ ছুঁইল। পেট্রলের দামে বৎসরভর নাভিশ্বাস উঠিল। সব মিলাইয়া, ২০১৮ সালে ‘অচ্ছে দিন’-এর শোকগাথা লেখা হইয়া গেল।

যে দুইটি ঘটনা ইতিহাসের পাতায় ২০১৮ সালের সূচক হইয়া থাকিবে, সেগুলি এক অর্থে প্রতীকীও বটে— বজ্রমুষ্টিতে শাসন করিতে চাওয়া কর্তৃত্ববাদী একনায়কের হাতে অর্থনীতির রাশ নিঃশর্তে সমর্পণ করিলে কী বিপদ হইতে পারে, তাহার সূচক। প্রথমটি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের কুনাট্য। কেবল উর্জিত পটেলের বিদায় বা স্বামীনাথন গুরুমূর্তি-শক্তিকান্ত দাসের অধিষ্ঠানই নহে, রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক এই বৎসর তাহার স্বায়ত্তশাসনের সিংহভাগ হারাইয়া ফেলিল। খাতায়-কলমে না হইলেও, প্রকৃতার্থে। দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ককে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে চালনা করিলে কতখানি বিপদ হইতে পারে, আগামী দিনগুলিতে ভারত তাহা টের পাইবে বলিয়াই আশঙ্কা। অন্য ঘটনাটি দেশব্যাপী কৃষক বিক্ষোভের। ‘অচ্ছে দিন’-এর প্রতিশ্রুতিতে কৃষকদের জন্য অনেক কথা ছিল। তাঁহাদের আয় দ্বিগুণ করিয়া দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল, আর কোনও কৃষককে যেন আত্মঘাতী না হইতে হয়, সেই সুসময় আনিয়া দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল। নরেন্দ্র মোদী নিজের প্রতিশ্রুতি বিস্মৃত হইয়াছেন। যদি দেশের প্রতিষ্ঠানগুলিকে নিজেদের শর্তে কাজ করিতে দিতেন, যদি মন্ত্রিসভায় নিজেই সর্বময় না হইয়া উঠিয়া অন্যদেরও প্রাপ্য গুরুত্ব দিতেন, তবে হয়তো পরিস্থিতি অন্য রকম হইতেও পারিত। তেলঙ্গানার ন্যায় রাজ্যের উদাহরণ বলিতেছে, তাহা সম্ভব। মধ্যপ্রদেশের শিবরাজ সিংহ চৌহানও নাকি কেন্দ্রের উপর মহা ক্ষুব্ধ ছিলেন, কিন্তু নরেন্দ্র মোদীকে ডিঙাইয়া কৃষকের উপকার করা তাঁহারও অসাধ্য ছিল। ২০১৮ কেন ‘অচ্ছে দিন’-এর সমাধিতে পরিণত হইল, সেই কারণ খুঁজিতে বসিলে নরেন্দ্র মোদীর নাম বার বারই আসিবে।

Acche Din Narendra Modi GDP UPA NDA
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy